Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্ত বিষন্ন হয় মনে পড়লে তাকে


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:০০

হুমায়ুন ফরিদী (২৯ মে ১৯৫২-১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২)

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

প্রকৃতিতে বসন্ত। অথচ আকাশে কোথায় যেনো এক টুকরো কালো মেঘ ছেয়ে আছে। সেই মেঘ ফুঁড়ে যে অদৃশ্য বৃষ্টি ঝরে পড়ে সেটা চোখের কোনে আশ্রয় নেয়। কখনো সেটা দীর্ঘশ্বাসে রূপ নিয়ে অজান্তে বেয়ে পড়ে চোখের কোণ থেকে। এই দীর্ঘশ্বাস এক কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পীর জন্য। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের মহান পুরুষ হুমায়ুন ফরিদী।

হুমায়ুন ফরিদীকে নিয়ে দীর্ঘশ্বাসের শুরুটা হয়েছিল ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই দিন মাত্র ৫৯ বছরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই নক্ষত্রসম অভিনেতা। আজ এই অভিনেতার চলে যাওয়ার সাত বছর। হুমায়ুন ফরিদী ১৯৫২ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঢাকার নারিন্দায়।

নাট্যজন প্রয়াত সেলিম আল দীনের হাত ধরে হুমায়ুন ফরিদী অভিনয় জগতে আসেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি সেলিম আল দীনের সংস্পর্শ পান। এই ক্যাম্পাসেই ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন ফরিদী। ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হন। জড়িয়ে যান মঞ্চের সাথে। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাঙালির নিজস্ব নাট্য আঙ্গিক গঠনে গ্রাম থিয়েটারের ভূমিকা ছিল অসামান্য, ফরিদী এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মঞ্চ নাটককে প্রসারিত করতে তিনি নাটক কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলেন। ‘গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন’ তার মধ্যে অন্যতম।

সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী ঢাকার মঞ্চে ওঠেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল্লায় ‘এক কন্যার জনক’ নাটকে অভিনয় করেন। মঞ্চে তার অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে নিজের নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরিদীর ঢাকা থিয়েটারের জীবন।

বিজ্ঞাপন

একা ভাবনায় মত্ত কিংবদন্তি

আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’ ফরিদীর অভিনীত প্রথম টিভি নাটক। আশির দশকের দর্শকদের মনে বিটিভি’র ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’ নাটকে সেরাজ তালুকদারের চরিত্রটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। সেলিম আল দীনের রচনা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় এই নাটকে ফরিদীকে দেখা যায় টুপি দাড়িওয়ালা শয়তানের এক জীবন্ত মূর্তি রূপে। ‘আরে আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি, পানি’, ‘দুধ দিয়া খাইবা না পানি দিয়া খাইবা বাজান’-এই ডায়লগ তখন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এরপর শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ নাটকে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি ফরিদকে দারুণ খ্যাতি এনে দেয়।

১৯৯০ এর দশকে হুমায়ুন ফরিদী চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। একে একে তিনি অভিনয় করেন ‘সন্ত্রাস’, ‘দহন’, ‘বীর পুরুষ’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘ভন্ড’, ‘ঘাতক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘ব্যাচেলর’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘আহা’সহ অরও অনেক ছবিতে।

ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০ সালে। প্রথম সংসারে তার দেবযানী নামের এক মেয়ে আছে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে বিয়ে করেন তিনি। বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে।

অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে হুমায়ুন ফরিদী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেয়া হয়।

অভিনয় আর হুমায়ুন ফরিদী মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। চরিত্র নিয়ে খেলতে পছন্দ করতেন তিনি। আর তাই বর্তমান প্রজন্মের অনেক অভিনেতা তাকে আদর্শ মনে করেন। যে কারণে নতুন প্রজন্মের অভিনেতা আর দর্শক হৃদয়ে হুমায়ুন ফরিদী বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএসও/পিএম


আরও পড়ুন :  ‘গলি বয়’ থেকে বাদ পড়লো গালি সঙ্গে চুমুও


হুমায়ূন ফরিদী হুমায়ূন ফরিদীর মৃত্যুবার্ষিকী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর