Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রকস্টার বলতে আমি যেটা ভাবি, ছবিতে তার অন্য মানে: পরমব্রত


১১ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:২৯

রাজধানীর একটি রেস্তোঁরায় এভাবেই ক্যামেরায় ধরা দিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত

।। রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।


‘স্যান্ডউইচ কি আমাদের?’

টেবিলে রাখা স্যান্ডউইচের প্লেট দেখিয়ে বললেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ওপাশ থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ আমাদের, তুমি নিতে পারো।’

পরমব্রত একটি স্যান্ডউইচের প্লেট নিয়ে আমার মুখোমুখি চেয়ারটাতে বসলেন। তাতে কয়েক কামড় দিয়ে প্লেটে রাখলেন। দেখেই মনে হচ্ছে তিনি বেশ ক্ষুধার্ত। ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছেন কথা বলতে। সকালের পেটপুজো করার সময় হয়ে ওঠেনি তার।

পেটের ক্ষুধাকে কিছুটা স্যান্ডউইচে চাপা দিয়ে কথা শুরু করলেন। আবারও বাংলাদেশি ছবিতে অভিনয়ের জন্য অভিনন্দন জানানো হলো তাকে। পরমব্রত পরম ভালোবাসায় সে অভিনন্দ গ্রহণ করলেন। তারপর শুরু হলো আলোচনা। কথা ছিল কেবল আড্ডা হবে। কথিত কোন সাক্ষাৎকার হবে না। কিন্তু তা কি আর হয়! পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতাকে সামনে পেয়ে প্রশ্নের ফুলঝুরি খুলে না বসাটা অন্যায়।

পরমব্রত সেটা বুঝতে পারলেন। সুযোগ কাজে লাগিয়েই প্রশ্ন করলাম। জানতে চাইলাম, নিয়মিতই বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করছেন। বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করার পেছনে মূল আগ্রহ জোগায় কোন বিষয়টি?

তখনো পরমব্রতর স্যন্ডউইচ শেষ হয়নি। তাতে আরও এক কামড় দিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশের ছবির গল্পগুলো অনেক বেশি মৌলিক। অন্তত আমি যেসব ছবিতে অভিনয় করেছি সেসব ছবি মৌলিক ছিল। তাছাড়া এখানকার ছবির গল্প প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসে। বাস্তব জীবনের একটা প্রতিচ্ছবি থাকে সেখানে।’

‘আজব কারখানা’ ছবির প্রযোজক সামিয়া জামানের সঙ্গে পরমব্রত। ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত

বলে রাখা ভালো, পরমব্রত শবনম ফেরদৌসি পরিচালিত ‘আজব কারখানা’ ছবির শুটিং করতে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এই ছবিতে তিনি অভিনয় করছেন একজন বাংলাদেশি রকস্টারের চরিত্রে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের রকস্টারদের সম্পর্কে ভালোই ধারণা রাখেন পরমব্রত। ‘রকস্টার বলতে আমরা শুধু একটা চেহারা ভাবি। রকস্টারের সঙ্গে কিন্তু জায়গা বিশেষে বদলায়। সময়ের সঙ্গেও বদলায়। একজন রকস্টার বলতে যে চেহারাটা ভেসে ওঠে আমাদের সামনে সেটার চর্চাটা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বাংলাদেশে বেশি। আমরা খুব ছোটবেলা থেকে সোলস, মাইলসসহ বেশকিছু ব্যান্ডের নাম জানি। হেভি মেটাল বা হার্ড রক কলকাতা থেকে বাংলাদেশে বেশি হয়েছে। কয়েক বছর আগে দুই বাংলার ব্যান্ড উৎসবে বাংলাদেশ থেকে যে ব্যান্ডগুলো গিয়েছিল তাদের দেহজ্যেতি দেখে রকস্টার সুলভ মনে হয়েছে।’

পরমব্রতের মতে বাংলাদেশে রকস্টারের ভাবমূর্তি অনেক বড় করে দেখা হয়। এসময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের রকস্টারদের সাথে তুলনা করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের রকস্টাররা কোহেন, জন লেনন ধারার। সেটা চন্দ্রবিন্দু হোক কিংবা রূপম ইসলাম। তবে রূপম পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য ব্যান্ডগুলোর তুলনায় বেশি রকস্টার সুলভ।’

ছোট একটি প্রশ্নের উত্তরের আগে তিনি এভাবেই বড় একটি ভূমিকা দিলেন। বলতেই হয় তিনি বেশ জ্ঞান রাখেন এ সম্পর্কে।

স্যান্ডউইচের শেষ কামড়টি দিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি যখন ছবির গল্পটি শুনি তখন বুঝতে পারি যে, রকস্টার বলতে আমি যেটা ভাবি তার থেকে আলাদা। বাংলাদেশে রকস্টার মানে অন্য ভাবমূর্তি। সেটা মাথায় নিয়ে আমি ছবির চরিত্রটি নিজের করে নিয়েছি। আমার ভাবনার জয়গাটাও তৈরী হয়েছে রকস্টার কেন্দ্রিক।’

‘আজব কারখানা’ ছবিটি প্রযোজনা করছেন সামিয়া জামান। তবে এটি মূলত সরকারি অনুদাসের ছবি। ২০১৬–২০১৭ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায় ছবিটি।

প্রযোজক সামিয়া জামানের সঙ্গে পরমব্রত, ইমি ও দোয়েল। ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত

জানতে চাইলাম, বিষয়ভিত্তিক ছবির বাইরে বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছা জাগে কিনা!

বিজ্ঞাপন

উত্তরে পরমব্রত বলেন, ‘উপমহাদেশে যে ধরনের বাণিজ্যিক ছবি নির্মিত হয় সেগুলো কেবল চকচকে দেখতে হয়েছে, মান বাড়েনি। আজও ভাবি আমরা কমার্শিয়াল ছবি মানে চকচকে পর্দা, দুবাইতে গান, কম জামাকাপড় পরে নাচ, অ্যাকশন, গ্রাফিক্স ইত্যাদি।

যেদিন কর্মাশিয়াল সিনেমার মান ভালো হবে সেদিন নিশ্চয়ই কমার্শিয়াল সিনেমা করতে চাইব। আমি নিজে গিয়ে তখন অভিনয় করব। ক্যারেক্টার চাইব’

কথা বলতে বলতে সামিয়া জামান কয়েকবার দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দিলেন। জানালেন, এফডিসিতে শুটিং আছে। সেখানে যেতে হবে। পরিচালকের প্রতি সম্মান রেখে শেষ প্রশ্ন করলাম।

দোয়েল (বাঁয়ে), পরমব্রত (মাঝখানে), ইমি (ডানে)। ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত

পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রকে প্রতিনিয়ত হিন্দি ছবির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। যার ফলে বাংলা ছবি টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও হিন্দি ছবি আমদানি করার পায়তারা চলছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

শেষ প্রশ্ন শুনে পরমব্রত যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। পরমব্রত একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, ‘হলিউড বা বলিউডের অনেক বেশি টাকা আছে। সেকারণে এদের একটি সর্বগ্রাসী মনোভাব থাকে সবসময়। সেটাকে রোখার জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন। এটি দুই বাংলার জন্য প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে একটি অলিখিত নিয়ম আছে। সেটি হলো—মাল্টিপ্লেক্সে প্রতিদিন বাংলা ছবির তিনটি করে প্রদর্শনী রাখতে হবে। যেটা মারাঠি সিনেমায় লিখিত নিয়ম। এটা করাটা জরুরী। কেননা,  যার বেশি গায়ের জোর সে কম গায়ের জোরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এখানে আবার প্রতিযোগিতাও দরকার আছে। প্রতিযোগিতা না থাকলে নিজেদের সিনেমার উন্নয়ন করা যাবে না। আমাদের সিনেমার বাজেট থাকে না তেমন। তাই হিন্দি ছবিকে টেক্কা দিতে মাথা খাটিয়ে রুচিশীল ছবি বানাতে হয়। এটা ভালো দিক।’

পরমব্রত মনে করেন, বাংলাদেশের ছবিতে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে কিছু নিয়ম করে হিন্দি ছবি প্রদর্শন করতেই পারে। এটা ভালো ছবি নির্মাণের জন্য জরুরী।

সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া শেষে পরমব্রত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আড়মোড়া ভাঙলেন। তারপর সাদা মোবাইল বের করে মন দিলেন  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

আজব কারখানা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর