Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে না রফতানিকৃত সিনেমা, কারণ…


১৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৫৩

গেলো কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে একাধিক ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানি করা হয়েছে। বিনিময়ে সমপরিমাণ বাংলাদেশি সিনেমা পশ্চিম বাংলায় রফতানি করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এরকম ছবি বিনিময় ইতিবাচক মনে হলেও বিষয়টি ভালোকিছু বয়ে আনছে না বাংলাদেশের ছবির জন্য।

টালিগঞ্জে নির্মিত সিনেমা বাংলাদেশে একসঙ্গে অর্ধশত বা তারও বেশি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। বিপরীতে ঢালিউডে নির্মিত সিনেমাগুলো কলকাতার সিনেমা হলে মুক্তি পায় না বললেই চলে। মুক্তি দেয়া হয় দায়সারাভাবে। মুক্তি পায় গ্রাম অঞ্চলে। বিশেষ করে বর্ডার এলাকায়। তাতে করা হয় না কোনো প্রচারণা।

বিজ্ঞাপন

পশ্চিমবঙ্গের আমদানিকারকরা বাংলাদেশি ছবি কেন মুক্তি দিনে অনীহা দেখান? তার কারণ জানেন না বাংলাদেশি রফতানিকারকরা। এ বিষয়ে তাদের কিছু করারও নেই বলে জানান চলচ্চিত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তারা টাকা দিয়ে আমদানি করে যদি ছবি ফেলে রাখে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তো গিয়ে ছবি চালাতে জোর দিতে পারব না। এসব নিয়ে আমাদের মতো আমদানিকারকদের প্রশ্ন করা অমূলক।’

২০১৫ সালে ভারতে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিটি। সেসময় ছবিটির পশ্চিমবঙ্গের অংশের পরিবেশকের দায়িত্বে ছিল পিয়ালি ফিল্মস। পিয়ালি ফিল্মসের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশি ছবির চাহিদা এখানে সেভাবে তৈরি হয়নি। যার কারণে আমরা চাইলেও বেশি সিনেমা হলে মুক্তি দিতে পারি না। আমাদের চেষ্টা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা তো মেনে নিতে হবে। এটা ঠিক যে, কিছুটা অবমূল্যায়ন করা হয় ঢাকার ছবিকে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে পিয়ালি ফিল্মস এখন তাদের চলচ্চিত্র ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানান দীপঙ্কর বিশ্বাস।

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নির্মাতা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শণের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দূর করা উচিত বলে মনে করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি ছবি চলে না বলা হয়। তবে ছবি চলার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। পরীক্ষা করে দেখা উচিত। চলে না বলে বসে থাকলে তো কাজ হবে না। দুই বাংলার মানুষ একে অপরের সিনেমা দেখবে—এরচেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। এটা আমার বিশ্বাস। সিনেমা হলে না চললেও, ইন্টারনেটে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাংলাদেশি ছবি দেখে।’

ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশেন (ইম্পা)—এর সাবেক সভাপতি কৃষ্ণ নারায়ণ দাগাও চান দুই বাংলা একসঙ্গে কাজ করুক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই বাংলা একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা তো আমাদের অনেক দিনের। বাংলাদেশে যেমন কলকাতার ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তেমনি কলকাতায়ও বাংলাদেশের ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত। এটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। তবে বাংলাদেশের ছবির মানের দিক থেকে বিবেচনা করলে সেটা আর হয়ে ওঠে না। এখনো বাংলাদেশের ছবি নিম্নমানের। যেখানে ভারতের ছবি উচ্চ প্রযুক্তি আর মানের দিক থেকে এগিয়ে, সেখানে তারা মানহীন বাংলাদেশের ছবি কেনোইবা দেখবে! বাংলাদেশের শিল্পীদেরও এখানে সেভাবে কেউ চেনে না। সবমিলিয়ে ইচ্ছা থাকলেও কিছু করার থাকছে না।’

কৃষ্ণ নারায়ণ দাগা এ পর্যন্ত কলকাতায় কোনো বাংলাদেশি ছবি মুক্তি পেতে দেখেননি। তার মতে, ব্যবসার কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশি ছবি মুক্তি না দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক বলে মনে হয়।

এদিকে, বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা দ্রুত মুক্তি পাবে—এমন আশ্বাসের খবরে চাপা উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে কলকাতার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যেই। কারণ, কলকাতার সিনেমার জন্য বড় একটি বাজার বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, ক্রমাগত আর্থিক ক্ষতির কারণে দেশের হল বন্ধের ঘোষণা তুলে নিয়েছে প্রদর্শক সমিতি। ভারতীয় সিনেমা এদেশে প্রদর্শনের আশ্বাসে এ সিদ্ধান্তে এসেছে সংগঠনের নেতারা।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

আমদানি কলকাতা চলচ্চিত্র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) রফতানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর