নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে ফেরদৌসের, তবে…
১৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০৭
আবেগের তরবারিতে কাটা পড়েছেন ঢালিউড নায়ক ফেরদৌস। রক্ত ঝরছে নীরবে। কেউ দেখছে না। এ রক্ত কেউ দেখেনা। বোঝেনা এই যন্ত্রণা। বিষন্নতার উথাল-পাথাল স্রোতে খাবি খাচ্ছেন তিনি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ফেরদৌস তাই দায় নিজের কাঁধে নিলেন। তিনি অনুতপ্ত, করেছেন ভুল স্বীকার। দিয়েছেন বিবৃতি।
পশ্চিমবঙ্গে বাণিজ্য ভিসায় শুটিং করতে গিয়ে ফেরদৌস অংশ নিয়েছেন সেখানকার রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রচারণায়। যা ভিসার নীতিমালা লঙ্ঘন। এই নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে তাকে চরম খেসারত দিতে হয়েছে। বাতিল হয়েছে ভারতের ভিসা। যে ভিসার মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। শুধু ভিসা বাতিল হয়নি, তাকে ভারতীয় দূতাবাস করেছে ‘কালো তালিকাভূক্ত’। যার ফলে ভারতে যাওয়ার পথ আপাতত বন্ধ হয়ে গেলো ফেরদৌসের জন্য।
সূত্রের খবর, তাকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছিল ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তা আর করা হয়নি।
বাংলাদেশের পাশপাশি ফেরদৌস পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গে তিনি জনপ্রিয়তা পান বাসু চ্যাটার্জী পরিচালিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবির মাধ্যমে। এই ছবির সফলতার সূত্র ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। এমনকি তিনি বলিউডের ছবিতেও অভিনয় করেছেন।
ফেরদৌস পশ্চিমবঙ্গে শুটিংয়ের জন্যই অবস্থান করছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘দত্তা’ অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করছিলেন তিনি। ছবির দশ শতাংশ শুটিংও শেষ। কিন্তু প্রচারণা কাণ্ডে জড়িয়ে ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে উল্লেখিত ছবির পরবর্তী অংশের শুটিং হুমকির মুখে পড়লো। শুধু ‘দত্তা’ নয়, আগামীতে পশ্চিমবঙ্গের আর কোনো ছবিতে ফেরদৌসকে দেখা যাবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে দত্তা ছবির প্রযোজক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফেরদৌস। তিনি চাইছেন ফেরদৌসকে নিয়েই ছবিটি শেষ করতে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। এ অবস্থায় তিনি বিপাকেই পড়ে গেছেন। সারাবাংলার সাথে আলাপকালে ঋতুপর্ণা জানান, ‘এটা একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান দ্রুতই করতে হবে। হয়তো ফেরদৌসের পরিবর্তে অন্য কাউকে নিতে পারি। নতুবা পিছিয়ে দিতে পারি ছবির শুটিং। আসলে, এরকম পরিস্থিতিতে কি করবো সেটা এখনই বলতে পারছি না।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় দূতাবাস ফেরদৌস ‘কালো তালিকাভূক্ত’ করলেও ফেরদৌস যদি ভুল স্বীকার করে আবেদন করেন তাহলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। সেজন্য অবশ্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় উত্তরবঙ্গ সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি পুলকেশ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যতোদূর জানি, কালো তালিকায় পড়ে গেলে ভবিষ্যতে তার ভারতের ভিসা পাওয়ার কথা নয়। বিশেষ বিবেচনায় পেলেও অনেক শর্ত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ফেরদৌসের ভিসা পাওয়া পুরোটাই নির্ভর করছে ভারতের কেন্দ্রিয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। সেক্ষেত্রে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেরদৌস যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারলে নিষেধাজ্ঞা শিথিলও হতে পারে।’
এমন অবস্থায় ফেরদৌস সহসাই যে ভারতের ‘কালো তালিকা’ থেকে নিজের নাম মুছে দিতে পারছেন না, সেটা সহজে অনুমেয়। এখন দেখার বিষয় ফেরদৌস তার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার জন্য আবেদন করেন কিনা!
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম/পিএ
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কালো তালিকাভূক্ত দত্তা ফেরদৌস ভারতীয় হাইকমিশন