Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নোবেল ও আমাদের বেঁচে থাকার গান


২৪ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নোবেল

ঝিলমিল মন ভালো করে দেয়া আলো। বিশাল মঞ্চ। অনেক রং। নতুন কত বাদ্য-বাজনা। কত চমক-ঝলক। সেখানে সব মসৃন, ঝকঝকে। তার মাঝখানে এই মানুষটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তাই কি তাকে আমাদের ভালো লাগে?

মানুষটি চোখ বন্ধ করে, কখনো দুলে দুলে, কিংবা কখনো স্থির ভঙ্গিতে গান গায়। আমরা যখন তাকে দেখি, তাকে শুনি, আমি জানি, আমরা শুধু তাকে দেখিনা। শুধু তাকে শুনিনা। আমরা দেখি, আমাদের। আমি দেখি আমাকে, ও দেখে ওকে, সে তাকে। আমরা নিজেদের দেখি। খুঁজি। সে যেন আমাদের হারিয়ে ফেলা, হঠাৎ খুঁজে পাওয়া ‘আমি’।

এই মানুষটি নিজ ভঙ্গিতে গান গায়, কি ভীষণ সাবলীল আর সহজ। নোবেল তার নাম। আমরা বিদেশি মঞ্চে, চোখ ধাঁধানো রঙে তাকে দেখি বলে, অনেক বিশাল মনে হয়? অনেক দূরের মঞ্চে, কাছের মানুষ কে দেখে তীব্র আনন্দ হয়? সে আনন্দ তো আছেই। কিন্তু সেই আনন্দকে ছাপিয়ে অন্য এক তিরতিরে আনন্দে আমরা কেঁপে কেঁপে উঠি, কখনো ভাসি। কারণ এই মানুষটি আমাদের স্বপ্ন খুঁজে দেয়।

বিজ্ঞাপন

নোবেল এক প্রিয় আয়না। সেই আয়নায় তাকালে নিজেকে আবারো দেখতে ইচ্ছে করে। সেই আমাকে, যার সাথে আমার হয়তো দেখা হয়নি। কিন্তু সেই মানুষটি হয়ে ওঠার জন্যই হয়তো আমি বা আমরা বড় হতে চেয়েছিলাম। সেই আমাকে খুঁজে পাই, যে আমি শিল্পী হতে চেয়েছিলাম, শিল্পে বাঁচতে চেয়েছিলাম।

আমরা অমুক হই, তমুক হই, কত পদবি আর প্রতিদিনের লাল-নীল টিকে থাকার জঞ্জাল। আমরা বড় হই, আর ভুলে যাই, আমরা আসলে শিল্পী হতে চেয়েছিলাম। আমরা স্বপ্নের চ্যালেঞ্জ ভয় পেয়ে তথাকথিত নয়টা -পাঁচটা জীবনের ঢোল বাজাতে বাজাতে যখন ক্লান্ত, আমাদের যখন আর শিল্পী হয়ে ওঠা হয়না, তখন নোবেল আর নোবেলদের উপস্থিতি বড্ড আরাম দেয়।

নোবেলে সাহস জাগায়। ‘শিল্প এক নিখাদ অকাজ’ ধরণের কুসংস্কারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নোবেল এবং নোবেলরা পথ হাঁটে রাজার মতন, শিল্পকে মুকুট করে, তখন বড় ভালো লাগে।

নোবেল কারো একার গল্প নয়, নোবেল সেই সাহসী সত্বাদের গল্প বলে, যারা শিল্পকে ‘দুরছাই করা চারপাশ’ কে বহু দূরে ফেলে নিজের স্বপ্নের সুর নিজে বাধে। আর আমরা তাদেরকে দেখে তাকিয়ে থাকি, তাকিয়েই থাকি।

আমরা অনেকে তো এমনই হতে চেয়েছিলাম, সাহসী, লড়াকু আর শিল্পী।

নোবেলের গল্প শুনতে শুনতে আমরা সেই লুকানো আমি হয়ে উঠি। যে আমি বেঁচে যেতে চেয়েছিলাম শিল্পে, গলা ছেড়ে গাইবো বলে, লিখে যেতে চেয়েছিলাম লিখে যাবো বলে।

আমরা আসলে নোবেলের গানে সেই গল্প খুঁজি, যে গল্পে আছে লড়াই, এবং তার পরের জিতে যাবার সংগ্রাম। শিল্পী হয়ে জিতে যাবার গল্প। শিল্পী হয়ে টিকে যাওয়া এবং রাজা হয়ে ওঠার গল্প।

নোবেল জিতে যাক তার জীবনের গল্পে। শিল্পী হয়ে বেঁচে ওঠার গল্পে। নোবেলরা ছিল, নোবেলরা আছে। নোবেলরা বেড়ে উঠছে। দৃপ্ত প্রত্যয়ে তারা হাঁটছে, জেগে উঠছে তাদের সৃজনশীল মিছিল। লক্ষ্য – শিল্পে বেঁচে থাকা।

নোবেলরা স্বপ্ন দেখাক, সেই বাংলাদেশের, যখন শিল্প হবে পেশা, সৃজনশীলতা হবে টেকসই কাজের মাধ্যম। যখন দেখি পৃথিবীর শতকরা ৩ ভাগ জিডিপি’র উৎস সাংস্কৃতিক এবং সৃজনশীল শিল্প মাধ্যম, বিশ্বের ২৯.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সৃজনশীল মাধ্যম থেকে, যখন দেখি এশিয়া মহাদেশের সৃজনশীল মাধ্যম রাজস্বে আশা জাগানিয়া অবদান রাখছে (শতকরা ৩৩ ভাগ), তখন আশা জাগে।

নোবেল বিশ্বাস জাগায়। সে সময়ের, সে ক্ষেত্রের, যখন শিল্প হবে ভালোবাসা, টেকসই এবং আনন্দময় পথযাত্রা। শুধু সন্ধ্যের অবসর নয়। নোবেল বেড়ে উঠুক, নোবেলরা বেড়ে উঠুক। তারা শিল্পী হয়ে বেড়ে উঠুক।

প্রিয় নোবেল গেয়ে যাক চোখ বুঁজে, সহজ সবুজ সাবলীলতায়, নিজের গল্পে জিতে যাক। আর সেই গল্পের সুর ধরে, আমরা স্বপ্ন দেখি চোখ মেলে, সামনে তাকিয়ে। জিতে যাক সৃজনশীল বাংলাদেশ।

ধর্ষণ

সারাবাংলা/এমএম

গান নোবেল সারেগামাপা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর