অনুদানে নম্বর পদ্ধতি হাস্যকর: শাহনেওয়াজ কাকলী
৫ মে ২০১৯ ১৮:৪৭
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুটি কমিটি কাজ করে। বাছাই কমিটি ও অনুদান কমিটি। এবারের বাছাই কমিটিতে আছেন সাতজন সদস্য। যার মধ্যে চারজন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব এবং একজন উপ সচিব।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনুদান প্রত্যাশী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তথ্যমন্ত্রী বরাবর দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। অনুদান কমিটি থেকে চারজন সদস্যের পদত্যাগ করার ঘটনাও ঘটেছে। তাদের অভিযোগ ছিল—যে তালিকা তারা তৈরি করেছিলেন আর সরকারি প্রজ্ঞাপনে যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে হেরফের রয়েছে। যদিও তাদের পদত্যাগ পরবর্তীতে গৃহিত হয়নি।
এসব ঘটনা এবং আলোচনার প্রেক্ষিতে সারাবাংলা কথা বলেছেন অনুদানের বাছাই কমিটির সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত র্নিমাতা শাহনেওয়াজ কাকলীর সঙ্গে। বাছাই কমিটিতে শাহনেওয়াজ কাকলী কাজ করছেন ২০১৪ সাল থেকে। প্রথমে স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় এবং বর্তমানে তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য শাখায় কাজ করছেন।
শাহনেওয়াজ কাকলী তার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, এমনও হয়েছে, দেখা গেছে প্রথমিক কমিটির কয়েকজন জুরি বিবেচনাতেই আনেননি এমন চিত্রনাট্য কিংবা বাছাইকৃত চিত্রনাট্যের তালিকা বর্হিভূত চিত্রনাট্যও পরবর্তীতে অনুদানের জন্য বিবেচিত হয়েছে। সেটা প্রাথমিক জুরি সদস্যদের হতবাক ও হতাশ করেছে।
বাছাই কমিটির সদস্য এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘বাছাই কমিটিতে থাকা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট চারজন সদস্য কোনো একটি চিত্রনাট্যকে তুলনামূলক কম নম্বর দিলেও কমিটির অন্য জুরিদের কাছে চিত্রনাট্যটি বেশি নম্বর পেয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক।এমন ঘটনাও ঘটেছে যে আমরা একটা দুর্বল চিত্রনাট্যকে অল্প নম্বর দিয়েছি, কিন্তু অন্য পর্যায়ে সেই চিত্রনাট্যটি উচ্চনম্বর পেয়ে অনুদান পেয়ে গেছে।’
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের জন্য জমা পড়া চিত্রনাট্যগুলো বাছাই করে অনুদান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। চূড়ান্ত কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত সুপারিশ আকারে পাঠান তথ্যমন্ত্রীর কাছে। তথ্যমন্ত্রী সেই সুপারিশ তালিকা সাক্ষর করে দিলেই তা প্রকাশ পায় প্রজ্ঞাপন আকারে।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অনুদানে অনিয়মের অভিযোগটি তুলেছেন অনুদান প্রত্যাশী মো.জাহাঙ্গীর হোসেন। তার ‘হীরালাল সেন’ ছবিটি সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও অনুদান পায়নি— এমন অভিযোগ তার।
এ প্রসঙ্গে শাহনেওয়াজ কাকলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি নম্বর ভিত্তিতে অনুদান নির্ধারিত হয় তাহলে হিরালাল সেন চিত্রনাট্যটি তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত ছিল। কারণ সেটা বেশি নম্বর পেয়েছে। যদিও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান আমরা নির্ধারণ করিনা। কারণ যে কয়েকটি চিত্রনাট্য আমরা বাছাই করি, সেখান থেকে চিত্রনাট্য চূড়ান্ত করে অনুদান কমিটি। তাই স্থান নির্ধারণ করার কাজ আমাদের না।’
অনুদান চলচ্চিত্রে স্থান নির্ধারণ বিষয়টিও আপত্তিকর। যে কারণে এই নম্বর পত্রের বিষয়টি এসেছে। মন্তব্য কাকলীর।
জাহাঙ্গীর হোসেনের অভিযোগের বিষয়টি কাকলী জানেন। তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, ‘আমার জানা মতে ‘হীরালাল সেন’ চিত্রনাট্য সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। গতবছরও নির্দিষ্ট জুরিদের কাছ থেকে উচ্চ নম্বর পেয়েছিল। কারণ একজন হীরালাল সেন উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার। বিষয়বস্তুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, তাকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের জানা উচিত। আমি মনে করি সবাই সব বিষয় ধারণ করে না যা জাহাঙ্গীর হোসেন করেছেন। এই বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে চলচ্চিত্র বিভাগে অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। এখনো ভারতে এ বিষয়ে ছবি হয়নি। নির্মাণে আমরাই প্রথম ভুমিকা রাখতে পারতাম। এটা কেন অনুদান পায়নি আমার বোধগম্য নয়?’
অনুদানের নম্বর দেওয়া হয় বেশকিছু বিষয়কে বিবেচনা করে। এর মধ্যে চিত্রনাট্যের বা বিষয়বস্তু ৫০ নম্বর। অভিনয়শিল্পী, আর্থিক সামর্থ্য ও সার্বিক দিক মিলিয়ে বাকি ৫০ নম্বর।
এই নম্বর পদ্ধতি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে হাস্যকর উল্লেখ করে কাকলী বলেন, ‘এমনও দেখেছি, অভিনয় শিল্পীর তালিকায় এমন অনেকের নাম দেওয়া থাকে যাদের অভিনয় করার সম্ভবনা খুবই কম। নামগুলোর জন্য ভালো নম্বর পেলেও পরবর্তীতে অনুদান চলচ্চিত্রে সেই অভিনয়শিল্পীদের দেখা যায়না। এসব নম্বরভিত্তিকে উপেক্ষা করতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চিত্রনাট্য মনপুত নয় কিন্তু সার্বিক কাগজপত্রের ক্ষমতা ও দক্ষতা এতোই পোক্ত যে ভালো নম্বর পেয়ে যায়।’ যে কারণে অনকে সময় সঠিক ছবিটির মূল্যায়ন হয়না বলেই মত শাহনেওয়াজ কাকলীর।
বাছাই কমিটিতে দীর্ঘ ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে কাকলী মনে করেন, কিছু কিছু সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তন হওয়া উচিত। শুধু চিত্রনাট্যকে অনুদান দেওয়া যেতে পারে। যেখানে অনুদান পাওয়া ভালো চিত্রনাট্যটি অন্য একজন ভালো পরিচালক নির্মাণ করবেন। অনুদান চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ানোসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুদান দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/পিএ/পিএম