সুর, আবেগ আর অনুভূতির সমন্বয়ের সুবীর নন্দী
৮ মে ২০১৯ ১৪:৩৮
শেষবারের মতো শহীদ মিনারে এসেছিলেন সুবীর নন্দী। পায়ে হেঁটে নয়, অন্যের কাঁধে ভর করে কফিনে মোড়ানো নিথর দেহে। তার মরদেহ যখন শ্রদ্ধা নিবেদন মঞ্চে রাখা হলো তখন চারদিক তখন শোকাচ্ছন্ন। কারো চোখে জল, আবার কারো মুখে প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা। দুঃখ, কষ্টের মিশ্রিত অনুভূতি ছুঁয়ে গেলো সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মনে।
সুবীর নন্দীকে শাহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা কয়েকজন গুণী মানুষকে হারালাম। এটা আমাদের জন্য সত্যি অনেক দুঃখের বিষয়। সবশেষ আমরা সুবীর নন্দীকে হারালাম। তিনি বাংলা গানকে অন্যমাত্রা দিয়েছেন। তার গানের মাধ্যমে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সুবীর নন্দীর গানকে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সুবীর নন্দী চলে যাওয়ায় বাংলা সংগীতাঙ্গন অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হলো। তার মতো শিল্পী বাংলাদেশ আবার কবে পাবে জানি না। আমি আশা করব, তরুণ প্রজন্ম তার গানকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং তার মূল্যবোধকে অনুকরণীয় হিসেবে পালন করবে।’
বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল ইসলামের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন সুবীর নন্দী। তাই তার চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার মতে আরও অনেক বছর বাঁচা উচিত ছিল সুবীর নন্দীর। গাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সুবীর না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তিনি আমাদের সংগীতাঙ্গনে যা রেখে গেছেন, তা অমর হয়ে থাকবে। তার কণ্ঠের মধ্যে সুর, আবেগ, অনুভূতি ছিল বলে সাধারন মানুষের কাছে তার গানগুলো এতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।’
গাজী মাজহারুল আনোয়ার এসময় স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার বাসায় একদিন দুপুরে সুবীর নন্দী ও শাকিলা জাফর এসে বললেন, গাজী ভাই পনেরো মিনিটের মধ্যে একটি গান লিখে দিতে হবে। আপনার মুক্তিযুদ্ধের ওপর যে ধরনের গান আছে সেধরনের একটি গান চাই। আমি ওই সময়ের ভেতর একটি গান লিখলাম। লেখার পর পনেরো মিনিটের মধ্যে গানটির অপূর্ব সুর করলেন সুবীর নন্দী, যেটা অত্যন্ত জনপ্রিয় কোরাস গান হিসেবে জায়গা করে নেয়। প্রতিভায় তিনি অত্যন্ত দীপ্ত ছিলেন। শুধু প্রতিভা নয়, তার মতো অমায়িক লোক খুব কম পাওয়া যায়। সব মানুষকে তিনি কাছে টেনে নিতে জানতেন। সেজন্যই সারা দেশের মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়।’
তরুণ প্রজন্মের অনেক কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন এস ডি রুবেল। তিনি সুবীর নন্দী সম্পর্কে বলেন, ‘সুবীর নন্দী চলে গেছেন ঠিকই। কিন্তু যাওয়ার আগে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে একটি মেসেজ দিয়ে গেছেন। শুধু গান গাইলেই শিল্পী হওয়া যায় না, শিল্পী হতে হলে গলায় সুর থাকতে হবে। সেই সাথে হতে হবে মানবিক।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা যান বাংলা গানের বরেন্য শিল্পী সুবীর নন্দী।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ/পিএম