দুই সংগঠনের বিরোধে থমকে আছে সংশোধিত কপিরাইট আইন
২৩ মে ২০১৯ ১৬:১৩
কপিরাইট বা মেধা স্বত্ব মূলত মেধার মালিকানা। অনেক সময় সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টি বেহাত হয়ে যায়। চলে যায় অন্যের দখলে। যার ফল ওই সৃষ্টিশীল মানুষটি ভোগ করতে পারে না। অবৈধভাবে ভোগ করে অন্য কেউ। যদিও অবৈধভাবে কেউ যেনো কারও সৃষ্টি ভোগ করতে না পারে সেজন্য ২০০০ সালে দেশে কপি রাইট আইন প্রণয়ন করা হয়। যা পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সংশোধন করা হয়। কিন্তু প্রনীত এই কপিরাইট আইনের প্রয়োগ খুব কম। অনেকে এই আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে অন্যের সৃষ্টির আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন।
এদিকে আবার সংশোধিত কপিরাইট আইন নতুন করে আবারও সংশোধন করছে সরকার। এরইমধ্যে আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সারাবাংলাকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (কপিরাইট) রেজিস্টার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, কপিরাইট আইনটি পর্যালোচনা করে হালনাগাদ করা হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের স্টেক হোলডারদের সাথে আলোচনায় বসি। তাদের সাথে আমরা অনেকবার বৈঠকে বসেছি, ওয়ার্কশপ করেছি। সেসময় তাদের সুপারিশের একটি ড্রাফট মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। পরে মন্ত্রণালয় ১১ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। সেই কমিটিতে বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। কমিটি যখন পর্যালোচনা করে একটি খসড়া আইন করলো, তখন কয়েকটি স্টেক হোল্ডার সংগঠন আপত্তি তুললো। বিশেষ করে মূল বিরোধটা লাগে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি ও বাংলাদেশ লিরিসিস্টস, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি (বিএলসিপিএস)—এর মধ্যে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৃষ্ট এই বিরোধ মেটাতে ২০১৮ সালে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শিল্পকলা একাডেমিতে স্টেক হোল্ডারদের সাথে শেষবারের মতো বৈঠকে বসেন। তখনও প্রযোজক সমিতি ও বাংলাদেশ লিরিসিস্টস, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি (বিএলসিপিএস)—এর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ওই বছরে খসড়া আইনটি কেবিনেটে পাঠানো হয়নি। এটা এখন আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আর দুই সংগঠনের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে আছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।’
আরও পড়ুন : শিল্পী খালিদ হোসেনের দুটি জানাজা সম্পন্ন, দাফন কুষ্টিয়ায়
জাফর রাজা চৌধুরী জানান, শিল্পীরা চাইছেন তাদের গানের স্বত্ব শুধু সিনেমার ক্ষেত্রেই প্রযোজকদের কাছে থাকবে। এর বাইরে যে প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহার হবে তার স্বত্ব থাকবে শিল্পীর। কিন্তু প্রযোজক সমিতি এটা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, যেহেতু প্রযোজক অর্থলগ্নি করেছেন সেহেতু সব ক্ষেত্রে গানের স্বত্ব থাকবে তার কাছে। এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিশদ জানতে ভারত ও ইংল্যান্ডের কপিরাইট আইন গবেষণা করা হচ্ছে।
এদিকে ছবিতে ব্যবহৃত গানের কপিরাইট প্রযোজকদেরই থাকা উচিত বলে মনে করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক দেলোয়ার হোসেন দিলু। তিনি বলেন, ‘প্রযোজক শিল্পীকে দিয়ে গান করান। এখানে নির্দিষ্ট অংকের টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শিল্পী গান করেন। তার মানে তার গানের সম্পূর্ণ স্বত্ব প্রযোজকের। যিনি টাকা খরচ করবেন তারই তো গানের স্বত্ব থাকবে। এটা নিয়ে তো বিরোধের কোনো যুক্তি দেখি না।’
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হয় গীতিকার কবীর বকুলের সাথে। তিনি বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কথা বলতে চাননি। তবে যতটুকু কথা বলেছেন তাতে কিছুটা মৌন ক্ষোভ ঝাড়লেন সংশ্লিষ্ট মানুষদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘দেখুন এসব বিষয় নিয়ে এখন কথা বলা বড় অমূলক। এটা একটা বিতর্কিত বিষয়। এদেশে কখনো কপিরাইট আইন হবে না। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিতর্কটাকে উপভোগ করছেন। রস আস্বাদন করছেন। এজন্য এই বিষয়ে আমার একদম আগ্রহ নেই।’
উল্লেখ্য, কপিরাইট আইন বেশ বড় একটি আইন। এই আইনের ১০৮টি অধ্যায় ও ২২৫টি উপধারা আছে। যার ফলে কপিরাইট আইনটির সংশোধন করতে সময় লাগছে বলে জানান জাফর রাজা চৌধুরী। যদি বিবাদমান দুই সংগঠন একমত হতে পারে তবে সংশোধিত কপিরাইট আইনের খসড়া কেবিনেটে পাঠানো হবে। সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। তারপর আইনটি পাশ হওয়ার জন্য সংসদে উঠবে।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম
আরও পড়ুন :
. ঢাকায় একদিনে হলিউডের নতুন ৩ ছবি
. সুবীর নন্দীর গান সংরক্ষণের উদ্যোগ
. ঢাকা টু কান: স্বপ্ন অনেক, প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ
. চলে গেলেন শিল্পী খালিদ হোসেন