Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাকিব নন, বুবলীর মনের পাসওয়ার্ড জানে অন্য কেউ


২৭ মে ২০১৯ ১৫:৪২

সবেমাত্র তুরস্ক থেকে শুটিং করে ফিরেছেন শবনম বুবলী। দেশে ফিরেই আবহাওয়া পরির্বতনের শিকার তিনি, ভুগছেন ঠান্ডাজনিত সমস্যায়। এমন অবস্থায় কথা হলো তার সাথে; প্রসঙ্গ ঈদের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। ছবির নায়ক ও প্রযোজক শাকিব খান। আর পরিচালক মালেক আফসারী। ছবিটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জোর আলোচনা । পাশাপাশি হচ্ছে কিছু সমালোচনাও।

সারাবাংলা ডট নেটের সঙ্গে আলাপকালে বুবলী ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন তুরস্কে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। সেই সাথে কথায় কথায় শাকিব খানের সঙ্গে তার জুটি নিয়ে সমালোচনা, নিজের অভিনয়সহ বেশকিছু বিষয়ে মনের বাতায়ন খুলেছেন।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ঈদ উৎসবে আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বুবলী কী তাহলে কেবলমাত্র ঈদকেন্দ্রিক নায়িকা হয়ে যাচ্ছেন?
প্রত্যেক শিল্পীর জন্য ঈদের মতো একটি উৎসবে ছবি মুক্তি পাওয়া বড় ব্যাপার। তবে ছবি মুক্তির বিষয়টি অভিনয়শিল্পীর ওপর থাকে না। এটি প্রযোজক ঠিক করেন। তবে আমরা শুরু থেকে জানতাম ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি দেওয়ার জন্য নির্মিত হচ্ছে। তবে আমার আগের কিছু ছবি ঈদের ছবি না হওয়া সত্বেও ঈদে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এতে তো আসলে আমার করার কিছু নেই। হয়ত আমার ভাগ্যটাই এমন।

এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি ছবির শুটিং হলো তুরস্কে। ওখানে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই।
তুরস্কের মতো সুন্দর একটি দেশে শুটিং করতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। তবে দেশের বাইরে শুটিং করা অত্যন্ত কষ্টের। অনেকে মনে করেন বিদেশে হেসে–খেলে আনন্দ করে শুটিং করা হয়। এটা একদমই ভুল ধারনা। যারা শুটিং করেন কেবল তারাই বোঝেন এর কষ্ট। আমাদের সময় খুব কম ছিল। টাইট শিডিউলে কাজ করতে হয়েছে। সারাদিন শুটিং করেছি। খুব ভোরে শুটিংয়ে বেরিয়ে পড়তাম। শুটিং লোকেশনগুলো বেশ দূরে দূরে ছিল। প্রায় আট ঘণ্টার মতো জার্নি করে এক লোকেশন থেকে অন্য লোকেশনে পৌঁছাতে হতো। সারাদিন শুটিং করে রাতে অন্য লোকেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতাম। সারারাত জার্নি করে সকালে মেকআপ নিয়ে আবার শুটিং শুরু করেছি।

বিজ্ঞাপন

কাজের ভেতর যে কখন সময় চলে গেছে বুঝতেই পারিনি। তুরস্কে আমাদের দেশি টেকনিশিয়ানদের পাশাপাশি ভারতীয় কয়েকজন টেকনিশিয়ান ছিলেন। তুরস্কের স্থানীয় টেকনিশিয়ানরাও ছিলেন শুটিংয়ে। সবমিলিয়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ জনের মতো একটি ইউনিট ছিল। সবাই খুব পরিশ্রম করেছেন। আমরা আসলে কাজের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে চাইনি বিধায় পরিশ্রম করেছি।

আর একটা কথা বলতে হয়, তুরস্কের স্থানীয় মানুষরা আমাদেরর শুটিংয়ে খুব সাহায্য করেছেন। ওখানকার সিটি মেয়র আমাদের শুটিং দেখতে এসেছেন। ছবি তুলেছেন। জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশি ছবি সম্পর্কে। এমনকি তারা ইফতারের জন্য আমাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সবকিছু মিলে তুরস্কে শুটিংয়ের অভিজ্ঞাতা ভালো ছিল।

তুরস্কের মানুষ বাংলাদেশি সিনেমা সম্পর্কে কতটা জানেন বলে মনে হলো?
বাংলাদেশি ছবি সম্পর্কে তাদের সেরকম ধারনা নেই। তারা কেবল হলউড, বলিউড চেনেন। যখন তারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশের সিনেমার শুটিং তুরস্কে হচ্ছে, বাংলাদেশর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নাম ঢালিউড, তখন তারা ইউটিউবে খুঁজে আমাদের গান দেখেছেন। যখন জানতে পেরেছেন আমাদের সিনেমা মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে মুক্তি পায় তখন তারা অবাক হয়েছেন। করেছেন প্রশংসাও।

আমরা তুরস্কের ইস্তাম্বুল, আলাতোনিয়া, কাপাডোকিয়া, পামুকালের মতো ঐতিহাসিক জায়গায় শুটিং করেছি। সেখানকার মানুষ আমাদের শুটিং দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে আপনার কতটা অভিনয় করার সুযোগ ছিল?
কিছু ছবি আছে যেগুলো নায়কা–নায়িকা বা শুধু নায়ককেন্দ্রিক থাকে। ‘পাসওয়ার্ড’ সেরকম কোনো ছবি না। এই ছবির সব চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। ছবির গল্পে আমার যতটুকু অভিনয়ের সুযোগ ছিল আমি করেছি। এখন ছবি দেখার পর দর্শক বলতে পারবে, আমার কতটা অভিনয়ের সুযোগ ছিল।

এর আগে শুধুমাত্র নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এবার প্রযোজক শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করলেন। প্রযোজক হিসেবে শাকিব খান কেমন?
নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে আমি বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেছি। কিন্তু প্রযোজক শাকিব খানের সঙ্গে এবারই প্রথম কাজ করলাম। প্রযোজক হিসেবে তিনি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের একজন মানুষ। তিনি অত্যন্ত পেশাদার। খুব সচেতন।

টানা শাকিব খানের সঙ্গে ছবি করছেন। মনে হচ্ছে না, একটু বেশিই শাকিব নির্ভর হয়ে পড়ছেন আপনি?
আমি শাকিব খানের সাথে হাতে গোনা কয়েকটা কাজ করেছি। বছরে আমরা জুটি হয়ে একটি বা দুটি ছবিতে অভিনয় করছি। কিন্তু সবাই মনে করছেন, আমরা অনেক ছবি করে ফেলেছি। শুধু আমি না, শাকিব খান কিন্তু অন্য নায়িকাদের সাথেও ছবি করছেন। তিনি শুধু আমাকে নিয়ে পড়ে নেই।

আর হ্যাঁ, আমি এমন প্রতিজ্ঞা করিনি যে, কেবল শাকিব খানের সাথে ছবি করব। আমি সবসময় বলি, আমাকে ভালো একটি গল্পের ছবি এনে দিন। তখন আমি অন্য নায়কের সাথেও ছবি করব। দুঃখের বিষয়, কেউ আমার কাছে তেমন গল্প নিয়ে আসেননি। সবাই খালি অভিযোগ করছেন, আমি শুধু শাকিব খানের সাথে অভিনয় করি। আমার কাছে যেসব ছবির প্রস্তাব আসে সবগুলোর নায়ক হিসেবে থাকেন শাকিব খান।

সত্য কথা বলতে, আমি অন্য নায়কের সাথে ভালো একটি গল্পের ছবি করতে চাই। ছবিটি ব্যবসা সফল হোক বা না হোক, যেনো প্রশংসিত হয়। আমি সিয়াম, আরিফিন শুভসহ অন্যদের সাথে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছি। কেউ যদি তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য ভালো গল্প নিয়ে আসেন তাহলে আমি অবশ্যই করব।

লোকে বলে, শাকিব খানের ঘনিষ্ঠজন বলেই ছবিগুলো পাচ্ছেন। এতে নায়িকা হিসেবে আপনার নিজের পরিচিতি তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে না?
যখন কেউ জুটি হয়ে কাজ করেন তখন তাদের নিয়ে মুখরোচক কিছু আলোচনা হয়ে থাকে। এটা শুধু আমাদেল ইন্ডাস্ট্রিতে না, অন্য দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও হয়ে থাকে। এই বিষয়টা নিয়ে আমি আগে অনেক ভাবতাম। এখন এসব নিয়ে ভাবি না। স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করি। দেখুন, এখন যদি আমি সিয়াম, আরিফিন শুভ বা রোশানের সঙ্গে পর পর কয়েকটি ছবি করি তাহলে অনেকে বলবেন, ওমুক নায়কের ঘনিষ্ঠ বলেই এতো কাজ পাচ্ছি আমি। জুটি নিয়ে সবসময় কথা হয়। আগেও হয়েছে।

এখানে আরেকটা বিষয় আছে। প্রত্যেকটা ছবিতে নায়ক ও নায়িকা আলাদাভাবে কাজ করেন। কেউ কারও কাজ করে দেন না। আমার কাজ কিন্তু শাকিব খান করবেন না, আমার চরিত্রে আমি অভিনয় করব, তিনি করবেন না। এক্ষেত্রে তিনি কেবল কিছু উপদেশ দিতে পারেন। আর কিছু না। সুপারস্টারের সাথে কাজ করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়—এমনটা যারা ভাবেন তাদের ভাবনা একেবারে অমূলক। যখন কোনো ছবিতে নতুন নায়ক–নায়িকা অভিনয় করেন তখন তাদের ছবির সফলতা–ব্যর্থতার ক্রেডিট ফিফটি ফিফটি বর্তায়। আর যখন কোনো সুপারস্টারের সাথে নতুন নায়িকা আসে তখন নতুন নায়িকা হিসেবে মানুষ আমার দিকেই খেয়াল দিবেন বেশি। কারণ, শাকিব খান অলরেডি সুপারস্টার। তার প্রমাণের কিছু নেই। বরং আমাকে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ভালো অভিনয় করতে হয়। এই বিষয়টাকে আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে আসছি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে আপনাদের জুটিকে নিয়ে সমালোচনা করেন। এই সমালোচনা আপনাকে কতটা ভাবায়?
আমি সমালোচনা খুব উপভোগ করি। আমি আমার লাভার্সদের যেমন ভালোবাসি, হেটার্সদেরও তেমন ভালোবাসি। কারণ, আমার হেটার্সরা আমাকে বিভিন্ন চরিত্রে বিভিন্ন নায়কের সাথে দেখতে চায় বলেই সমালোচনা করে। তাছাড়া, তারা আমার সমালোচনা করে আমার কাজগুলো মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে দেয়। এটা খুব মজার ব্যাপার। আর আমাদের দেশে এমন কেউ নেই যে তার হেটার্স নেই। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে পলিটিশিয়ানরাও বাদ যাচ্ছেন না। মিডিয়ার মানুষের কথা নাইবা বললাম।

একজন মানুষ সবাইকে খুশি করতে পারে না। সবার প্রিয় হওয়া সম্ভব নয়। তাই হেটার্সরা তাদের কাজ করে যাবে। লাভারর্সদের পাশাপাশি হেটার্সদেরও থাকা উচিত। তবে একটা জিনিস চাইব, তারা যেনো কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করে। অনেকে আছেন যারা ছবি না দেখে সমালোচনা করে, এটা করাও ঠিক না। দেখে শুনে বুঝে সমালোচনা করা উচিত।

 

গুনে গুনে তো অনেকগুলো ছবি করে ফেললেন। নিজের অভিনয়ের উন্নতি চোখে পড়ল?
অভিনয় জিনিসটা গল্পের ওপর নির্ভর করে। একেক ছবিতে একেক রকম অভিনয় করতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি শিখছি। আর অভিনেত্রী হিসেবে আমি আরও ভালো অভিনয় করার স্বপ্ন দেখি। আগামীতে নিশ্চয়ই আরও ভালো অভিনয় করতে পারব।

শেষ প্রশ্ন, আপনার জীবনে এমন কেউ কি এসেছেন যে আপনার মনের ‘পাসওয়ার্ড’ খুলতে পারেন?
এখন পর্যন্ত আমার মনের পাসওয়ার্ড খুলতে পেরেছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। যখন আমি সংবাদ উপস্থাপনা করতাম তখন মানুষ আমাকে এভাবে জানত না। ফিল্মে আসার পর মানুষ আমার সম্পর্কে সবথেকে বেশি জেনেছে। মনের কথাগুলো শুনেছে। যদিও এটি অনেক বেশি কমন উত্তর হয়ে যায়। তারপরও বলব, চলচ্চিত্রই আমার মনের পাসওয়ার্ড খুলতে পেরেছে।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

পাসওয়ার্ড বুবলি সাক্ষাৎকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর