যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে প্রচুর পলিটিক্স হচ্ছে: অঙ্কুশ
২৬ জুন ২০১৯ ১৬:০৭
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা। অভিনয় করেছেন দুটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। সম্প্রতি কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে এই অভিনেতার ‘বিবাহ অভিযান’ ছবি। এতে তিনি জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবিটি নিয়ে অঙ্কুশ কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে। কথায় কথায় তার কাছে যৌথ প্রযোজনার ছবির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনিও সাবলীলভাবে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া আরও বেশকিছু বিষয় নিয়ে তিনি নিজের মতামত জানিয়েছেন।
গেল সপ্তাহে ‘বিবাহ অভিযান’ মুক্তি পেলো। সপ্তাহ পেরিয়ে সেই অভিযান কতটা সফল?
বেশ ভালো যাচ্ছে ছবিটি। তবে মানুষ বাংলা ছবির ক্ষেত্রে একটু বেশি বাছ–বিচার করে। সেই তুলনায় হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে বাছ–বিচার কম দর্শকদের। যার কারণে আমার এই ছবিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিনেমা হলগুলোতে হাউজফুল ছিল। তবে ছবির রিভিউ ভালো পেয়েছি। যারা নিয়মিত বাংলা ছবি দেখেন তারা ছবি দেখে প্রশংসা করেছেন।
প্রথমে ‘আশিকী’ তারপর বিরতির পর ‘বিবাহ অভিযান’—এই সময়টাতে নুসরাত ফারিয়ার ভেতর কোনো পরিবর্তন…
অবশ্যই। নুসরাত ফারিয়ার প্রথম ছবি ‘আশিকী’। তার আগে সে কোনো সিনেমায় অভিনয় করেনি। তারপর নুসরাত ফারিয়া ভালোকিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। কোনো খারাপ প্রোডাকশনের সাথে যুক্ত হননি তিনি। সেজন্য তাকে ক্রেডিট দেয়া উচিত। নুসরাত তার ক্যারিয়ারে ভালো পরিচালক, ভালো সহশিল্পী পেয়েছে। তাই তার অভিনয়ে দ্রুত উন্নতি হয়েছে। সাড়ে চার বছর পর অভিনয় করার সময় একদম অন্য ফারিয়াকে দেখলাম।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এখন জটিলতার কারণে যৌথ প্রযোজনার ছবি বন্ধ রয়েছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়মিত না হওয়া বাংলা সিনেমার জন্য কেমন প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন?
ইন্দো–বাংলা ছবি নির্মিত না হওয়া বাংলা ছবির জন্য ভালোকিছু নয়। যখনই ইন্দো–বাংলা ছবি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা শুরু হয় তখন নানারকম জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়। ভিসা সমস্যা থেকে শুরু করে ছোটখাটো অনেক সমস্যা তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, দুই দেশে সমান শিল্পী নিতে হবে। চিত্রনাট্যের প্রয়োজন হোক বা না হোক—বাংলাদেশে শুটিং করতেই হবে। এতকিছু মেনে সিনেমা করা কষ্টকর। আমার ‘ডি ফর ড্যান্স’ ছবিটিও যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। এরকম সমস্যার কারণে ছবিটি আর করাই হলো না।
আবার ইন্দো–বাংলা ছবি করতে হলে মৌলিক গল্পে ছবি করতে হবে। এত নিয়ম মেনে তো আর সিনেমা হয় না। এই দেখুন ‘কবির সিং’ তেলেগু ছবির হিন্দি রিমেক। তবুও ছবিটি রমরমিয়ে ব্যবসা করছে। হিন্দিতে যদি রিমেক ছবি চলতে পারে বাংলায় কেন এত বাছ–বিচার করা হবে?
সত্যি কথা বলতে, যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে প্রচুর পলিটিক্স হচ্ছে। কারা করছে সে বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে এই পলিটিক্সের কারণে বাংলা সিনেমার দর্শকরা ভালো ভালো ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা যদি দুই বাংলা মিলে একসাথে ছবি করতে পারি তাহলে অনেক বড় বড় হিন্দি ছবিকে টেক্কা দিতে পারব। বাংলা ছবি দেখার মতো দর্শক অনেক আছে।
টালিগঞ্জের ছবিকে হিন্দি ছবির সাথে লড়াই করতে হয়। এদিকে বাংলাদেশেও সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হিন্দি ছবি আমদানির কথা চলছে। দুই বাংলার সিনেমার জন্য কি তাহলে হিন্দি ছবি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
হুমকি ঠিক না। বাংলা ছবির প্রচুর দর্শক রয়েছে। কলকাতায় যখন সালমান খানের ‘রেডি’ মুক্তি পেয়েছিল ঠিক তখন ‘পাগলু’ মুক্তি পেয়েছিল। সেসময় সেল রিপোর্টে ‘পাগলু’ এগিয়ে ছিল। আমার মনে হয়, দুই বাংলার সিনেমা হল মালিকরা বাংলা ছবিকে পিক টাইমে শো দেন তাহলে হিন্দি ছবিকে টেক্কা দেয়া কোনো ব্যাপার না।
বাংলাদেশের প্রযোজক সেলিম খানের একটি ছবিতে অভিনয় করার বিষয়ে কথা হয়েছে সম্ভবত…
কথা তো হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে তার কোনো পাত্তা নেই। বাংলাদেশে ছবি করতে চাই বলেই আমি কাজের চাপের মধ্যে সময় বের করে আড়াই ঘণ্টা মিটিং করেছি। অথচ মিটিংয়ের পর তিনি আমাকে আর কিছু জানালেন না। কেনো কাজটি করলেন না সেটিও বললেন না! সেলিম খান কাজটি করার জন্য খুব তাড়া দিচ্ছিলেন তখন। পারিশ্রমিকসহ যাবতীয় বিষয়ে তখন কথা চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম।
আমিও আর পরে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ, আমার এখানে হাতে যা কাজ আছে তাতে আমি ভালোভাবে আগামী কয়েক বছর কাটিয়ে দিতে পারব। সেলিম খানের ছবিতে কাজের দরকার পড়বে না। তবে কাজটি হলে ভালো হতো। আমি খুব করে চেয়েছিলাম, কাজটি যেন হয়।
বাংলাদেশে আপনার কোনো পছন্দের অভিনয়শিল্পী আছে?
ওখানে (বাংলাদেশে) একমাত্র বন্ধু বলতে নুসরাত ফারিয়া। এছাড়া ওভাবে সেরকম কারও সাথে ঘনিষ্ঠতা নেই। যদিও, কয়েক মাস আগে বাপ্পীর সাথে পরিচয় হয়েছিল। আমার ‘ভিলেন’ ছবির শুটিংয়ের সময় বাপ্পী সেটে এসেছিল। খুব আন্তরিক ছেলে বাপ্পী।
আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবিতে নাকি অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন!
হ্যাঁ, পেয়েছিলাম। কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, কলকাতার সিনেমায় আমি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করি সেখান থেকে বেরিয়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করা ঠিক হবে না বলেই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
রোম্যান্টিক কমেডি ছবিতে আপনাকে বেশি দেখা গেছে। সেই তুলনায় অ্যাকশান ছবি কম। অঙ্কুশের প্রিয় কোন ঘরানার ছবি?
আসলে আমার ‘জামাই ৪২০’ হিট হওয়ার পর এই ধরনের ছবির প্রস্তাব বেশি পেয়েছি। তাই ছবিগুলো করা হয়েছে। একটা সময়ের পর আমারও এই ধরনের ছবি করতে ভালো লাগছিল না। তারপর ‘জুলফিকার’ করলাম। পারিবারিক ছবি ‘কি করে তোকে বলব’ করেছি। এরপর ‘ভিলেন’ করেছি। আমি এখন চেষ্টা করছি ভিন্ন কিছু চরিত্রের সিনেমায় অভিনয় করতে।
সিনেমায় তো বিবাহ অভিযানে নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে কবে নামবেন?
এখনো দেরি আছে। বিয়ে নিয়ে এখন ভাবছি না। আরও বছর দুই যাক। তারপর না হয় বিবাহ অভিযানে নামা যাবে। এরা আগে নতুন ছবির অভিযানে নামব।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ