শাকিব বয়স্কর খাতায় চলে গেছে: ডিপজল
৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৫:৫৫
খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাড়ির নাম ‘দীপু ভিলা’, রাজফুলবাড়িয়া, সাভার। গাঢ় খয়েরি রঙের লোহার গেটটা পেরুলেই ডিপজলের রাজত্ব। ডিপজলের বাড়ি যেন একটা আলোর বাগান! গাছের শাখায়, কার্নিশে ঝুলে আছে অজস্র বাহারি বাল্ব। সন্ধ্যা হলেই নানান রঙের আলোর মহড়া চলে ওইখানে। এমনকি ডিপজল যেখানে বসে আড্ডা জমান-গল্প শোনেন, ঠিক পেছনেই দেয়ালে ঝুলছে আলোর অভ্যর্থনা ‘স্বাগতম’ অথবা ‘ধন্যবাদ আবার আসবেন’। ডিপু ভিলায় যখন শুটিং চলে, পাশের স্কুল থেকে দলবেঁধে ছাত্রছাত্রীরা আসে দেখতে। বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত দেয়ালে সারা বছর সাঁটা থাকে ফুল সাইজ সিনেমার পোস্টার।
পেছনে মাঝারি আকৃতির সাম্পান আর কয়েকটা বাঘের মূর্তি আশপাশে রেখে যে ডিপজল বসে আছেন হাফপ্যান্ট পরে; পর্দার ডিপজলের সঙ্গে তাকে মেলাতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ দিনের অসুস্থতার ধকল সামলে নিতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু শরীরজুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট এখনও। ভাঙ্গা চেহারায় ঠোঁটের ওপর গোঁফটা বেমানান লাগছে।
৫১ দিনের হাসপাতাল যাপন মোটেও সহজ কিংবা স্বস্তির নয়। হার্টে বাইপাস অস্ত্রোপচারের পর সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এলিজাবেথ হাসপাতালে তার দিনগুলো কেটেছে খুবই নিয়মতান্ত্রিক এবং একঘেঁয়ে। তবে ওই সময়েও ডিপজল ছবির গল্প ভেবেছেন। মেয়ে অলিজার সঙ্গে গল্পের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা জারি রেখেছেন সুযোগ পেলেই। তার নতুন গল্পের নাম ‘পাথরের কান্না’। ছটকু আহমেদ পরিচালনা করবেন আর নায়ক থাকবেন সায়মন।
দেশে ফিরে, জীবনের চতুর্থ অধ্যায় শুরুর আগে ডিপজল সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপে বললেন- ‘বাইরের প্রডাকশন থেকে একটি এবং আমার নিজের প্রডাকশনের চারটি এই পাঁচটি ছবির কাজ শুরু করবো জানুয়ারি থেকে।’ সিনেমাপাড়া নিয়ে আরও যা কিছু বললেন ডিপজল, সে সবও থাকলো।
সিনেমা বোঝা নয়তো সোজা
ফিল্ম সম্মন্ধে ধারণা বর্তমান পরিবেশে নেই বললেই চলে। ফিল্ম কীভাবে চলবে, ফিল্ম কীভাবে আসবে, দর্শক কীভাবে সিনেমা হলে আসবে এই পরিবেশ সম্পর্কে বর্তমানে কারো ধারণাই নেই। টাকা আছে, করছে চলে যাচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে যার টাকা আছে সে সবই বোঝে। এটা করলে তো হবে না। যে ছবি প্রডিউস করতে আসছে সে যদি শেখার একটু চেষ্টা করে! যদি সিনিয়রদের কাছে যায়! কিন্ত না। টাকা আছে, ছবি করছে, গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবি করার মতো তৌফিক আর থাকে না। ফিল্ম বোঝাটা এতো সোজা না। এটা একটা কঠিন জায়গা। একটা ছবির ভেতর কী কী কারুকার্য থাকলে দর্শক হলে আসবে, ওইটা বোঝা টাফ।
সিনেমার পরিবার ভেঙ্গে গেছে!
দেশীয় ছবি পিছিয়ে থাকার পেছনে এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। আমরা যখন রেগুলার ছবি করতাম, এফডিসি-ঢাকা শহর ইত্যাদি জায়গায় শুটিং করে রিলিফের জন্য যেতাম কক্সবাজার। ওখানে গেলে আট-দশ পার্টি এক জায়গায় হতাম। যেমন জসিম ভাই দাওয়াত করলে আমরা যেতাম। আমার সেটে জসিম ভাই আসতো। ওখানে দশটা ইউনিট থাকলে দশটা পার্টি হতোই। আমরা সিনিয়রগো দেখে ইজ্জত করতাম। এখনও করি। ওই ব্যাপারটা বর্তমানে নাই। ওটা হবেও না কারন সিনেমা হলের মালিক এক গ্রুপ হয়ে গেছে। হল এখন ওর আন্ডারে। গত ঈদে আমার হল খালি গেলো। নতুন ছবি দিলো না। বাধ্য হয়ে আমাকে পুরনো ছবি চালাতে হয়েছে।
নায়িকা সংকট। সেটে ঘুমায় পরীমনি!
ইন্ডাস্ট্রিতে এখন নায়িকার সংকটটা সবচেয়ে বেশি। ভালো ভালো মেয়েরা আসছে। আসলে কী হবে! ছবি মার খাচ্ছে। ওরা আর দ্বিতীয় তৃতীয় ছবি করতে পারছে না। আটকে যাচ্ছে। এ রকম আমার জানামতে বিশ থেকে পঁচিশটা মেয়ে এসে হারিয়ে গেছে। নায়িকা হিসেবে কাস্ট করবো এমন মেয়ে এখন ইন্ডাস্ট্রিতে কই? দু’একটা নাম কন আপনি!
[নাম আসে ববি, মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া, পরীমনি। ডিপজল নড়েচড়ে বসেন। ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা খেলে যায় তার]
মাহি অফ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে কোনো নায়িকার বিয়ে হয়ে গেলে তার ভবিষ্যৎ ভালো থাকে না। অন্ধকার হয়ে যায়। মৌসুমীর ব্যাপার আলাদা। সে সিনিয়র। ছবির একটা পার্ট থাকে মৌসুমী। সে কিন্তু নায়িকা না।
গত কয়েক বছরে বাংলা ছবিতে সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ছিলো পরীমনি। কিন্তু কই? সে তো নেই। সে সেটে এসে ঘুমিয়ে থাকে। তাকে ডাকতে ডাকতে পরিচালকের জান শেষ হয়ে যায়! কেন? আগ্রহ যদি থাকে ফিল্ম করার, তাহলে তো সে রকম মনমানসিকতা থাকতে হবে। মৌসুমী-শাবনুর-পপি-পূর্ণিমা-অপু বিশ্বাস এরা যখন কাজ করেছে, কই তাদের তো কোনো বদনাম শুনিনি। এখনকার মেয়েদের ক্ষেত্রে যতোটা শুনি!
শাকিব বয়স্ক খাতায় চলে গেছে!
[ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক সংকট আছে- অনেকের সে ধারণা থাকলেও ডিপজল বিশ্বাস না। তিনি বলতে চান- মোটা অংকের অর্থ লগ্নি করার মতো নায়ক ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক আছে। পাশ থেকে যিনি মনে করিয়ে দেন ‘এখন ইন্ডাস্ট্রি মানেই কিন্তু শাকিব খান’, ডিপজল ঘুরে তার দিকে তাকান। ব্যাখ্যা দেন হেসে]
শাকিব বয়স্ক খাতায় চলে গেছে। ওকে নিয়ে জ্বালা কেউ সহ্য করতে চায় না। শাকিব কাজ করে ভালো। কিন্তু ও তো ক্যামেরার সামনে আসে দুইটায়। আপনাকে আমি নেবো, আপনাকে নিয়ে বিরক্তি ফিল করবো, অন্য আর্টিস্ট বসে থাকবে আপনার জন্য- ওই কাজ আমাদের পক্ষে করা সম্ভব না। মাঝে একটা ছবির কাজ করলাম, ওর জন্য দুইটা পর্যন্ত বসে রইলাম আমি নিজেও। এখন কে কার জন্য বসে থাকে কন!
সিনেমাপাড়ার এতো শত সমস্যা-প্রতিকূলতার কথা বলতে বলতে ডিপজলের কণ্ঠ নরম হয়ে আসে। বিকেল হয়ে এসেছে। বৃষ্টি পড়ছে। টিনের চালে বৃষ্টি পতনের শব্দ ডিপজলের আলাপে বিঘ্ন ঘটায়। উচ্চস্বরে আরও কিছুক্ষণ কথা চালানোর পর ক্লান্তি বোধ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই দাপুটে খলনায়ক ও প্রযোজক। শরীর এখনও নিজের আয়ত্বে আসেনি। ২৫ ডিসেম্বর আবার যাবেন সিঙ্গাপুরে, চিকিৎসা নিতে। ফলে আলাপে এখানেই ইস্তফা দিয়ে তাকে বিশ্রাম দেয়া যাক।
কেবিএন/পিএম