‘আমি যে বাজি খেলি, সেটা সব বাজিগর খেলে না’
২৬ আগস্ট ২০১৯ ১২:৪১
গৃহত্যাগী সূর্যটার গৃহেই অবস্থান সকাল থেকে। মাঝে মধ্যে বাইরে উঁকি দিলেও উত্তাপ কম। এরকম মন্দের ভালো আবহাওয়াতে জ্যামের ঝক্কি–ঝামেলা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম উত্তরার এক শুটিং বাড়িতে। ঘরের ভেতর ঢুকতেই আঁতকে উঠলাম। ধোঁয়ায় ভরে গেছে ঘর। ঘাবড়ে গেলাম। আগুন লাগলো কিনা সেটে…!
সাহস করে ভেতরে ঢুকলাম। চোখ জ্বলছে। ঘরের ভেতর মৃদু লাল আলোর রহস্যময় পরিবেশ। সেখানে বসানো কয়েকটি টেবিলে আধ বয়সী কয়েকজন ব্যক্তি তাস খেলছেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন নাট্য নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার।
জুয়ার আসরের সেট। ছবি: সংগৃহীত
চোখে চোখ পড়তেই উষ্ণ অভ্যর্থনা। কুশল বিনিময় শেষে ধোঁয়াময় আর মৃদু লাল আলোর রহস্য জানালেন তিনি। সঞ্জয় সমদ্দারের কথায়, এটি ‘গেম ওভার’ নামের একটি থ্রিলার টেলিছবির শুটিং সেট। এটির কাহিনী লিখেছেন স্বরূপ চন্দ্র দে। ধোঁয়া আর লাল আলোর মাধ্যমে জুয়ার আড্ডাখানা বোঝানো হয়েছে। আমার জানামতে, জুয়ার আড্ডাখানা মূলত এমনই হয়। তাছাড়া আমার মনে হয়, যে কোনো নির্মাণের অলংকার হলো সেট। তাই সেট ডিজাইনের প্রতি আমি খুব যত্নশীল।
আরও পড়ুন : বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খলনায়ক বাবর আর নেই
আসলে কি তাই? সেট নির্মাণে সঞ্জয় সমদ্দার যত্নশীল কিনা—জানতে একবার সেট ঘুরে দেখা দরকার। আলো আঁধারির মধ্য দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই ডান দিকে একটি ঘর চোখে পড়লো। মদের বোতল সামনে সিঙ্গেল সোফায় চুরুট হাতে বসে আছেন অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ। প্রথম দর্শনেই মনে হবে, তিনি নেতিবাচক কোনো চরিত্রে অভিনয় করছেন।
শতাব্দী ওয়াদুদ আমার মনে হওয়াটাকে মাথা নেড়ে নিশ্চিত করলেন। চুরুটে একটি টান দিয়ে চরিত্রের ভেতর থেকে বললেন, আমি যে বাজি খেলি, সেটা সব বাজিগর খেলে না। বুঝতেই পারছেন কেমন চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। আমি জুয়ার আড্ডা চালাই। আবার কেউ বিপদে পড়ে আমার কাছে টাকা ধার নিতে আসলে ধার দেই। তারপর ওই ব্যক্তিকে আমি সর্বস্বান্ত করি।
টেলিছবির একটি দৃশ্যের স্থিরচিত্রে অপূর্ব ও মেহজাবিন। ছবি: সংগৃহীত
বেশি সময় কথা বলার সুযোগ হলো না। পরিচালক মনিটরের সামনে বসে গেলেন। চিত্রগ্রাহক তৈরি। শুধু পরিচালকের নির্দেশের অপেক্ষা।
দৃশ্য ধারণের সময় সেটের ভেতরে থেকে বিরক্ত না করা শ্রেয় মনে করে বেরিয়ে গেলাম। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে মেকআপ রুমের দিকে রওনা হলাম।
ও হ্যাঁ, বলে রাখি। সঞ্জয় সমদ্দার কিন্তু সেট নির্মাণে আসলে যত্নশীল। ফ্রেম ঠিক করার জন্য মনিটরের যখন পুরো সেট দেখানো হচ্ছিল তখন আকর্ষণীয় লেগেছে বটে। সেজন্য তাকে বাহবা না দিলে অন্যায় হয়ে যাবে।
কাট টু। মেকআপ রুমে হাতের স্মার্ট ফোনে সময় কাটাচ্ছেন টেলিছবির অপর দুই অভিনয়শিল্পী অপূর্ব ও মেহবাজিন। তাদের দৃশ্যের শুটিং শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই সময় কাটাতে স্মার্ট ফোনই ভরসা।
এই টেলিছবিতে অপূর্ব নিজেও একজন বাজিগর। তবে নেতিবাচক অর্থে নয়। ‘চোরের ওপর বাটপারি’ করা হয় যেমন। অপূর্বর ভাষায়, এই টেলিছবিতে আমি একজন দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া যুবক। আমার বাবা এক বাজিগরের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। বাবা সেটা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে যায়। যদিও মানুষ তাকে ফিরিয়ে আনে আত্মহত্যার পথ থেকে। আমি পরবর্তীতে কৌশলে ফাঁদে ফেলে ওই বাজিগরকে শেষ করে দেই।
সাংবাদিক চরিত্রে মেহজাবিন। ছবি: সংগৃহীত
থ্রিলারধর্মী এই টেলিছবিটি দেবে সামাজিক বার্তা। ধর্ষণ সচেতনতায়ও এই টেলিছবিটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। মেহজাবিন তাই মনে করেন। এতে তিনি একজন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করছেন। মেহজাবিন বলেন, সমাজের প্রতি একজন সাংবাদিকের প্রচুর দায়বদ্ধতা থাকে। কোনো অপরাধী যেন অপরাধ করে পার না পেয়ে যায় সেজন্য সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আলোড়ন তুলতে পারেন। এই টেলিছবিতে একটি ধর্ষকের চরিত্র আছে, যে আবার এক প্রভাবশালীর সন্তান। টাকার কাছে যেন সেই ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা না পড়ে, সেজন্য একজন রিপোর্টার হিসেবে নিজের জায়গা থেকে আমি ধর্ষকের শাস্তির জন্য সংবাদ প্রকাশ করি।
মেহজাবিনের কাছে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। তার মতে, তিনি চরিত্রটি ঠিকঠাক উপস্থাপনের জন্য চেষ্টার কমতি করছেন না।
শতাব্দী ওয়াদুদকে শট বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার। ছবি: সংগৃহীত
কথাবার্তা শেষে বিদায় জানিয়ে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে তখন ধোঁয়ার তীব্রতা কমেছে। রিঅ্যকাশন শটের জন্য শতাব্দী ওয়াদুদ সেই সোফায় বসে আছেন।
পরিচালক থ্রি…টু…ওয়ান…জিরো…জিরো বলে আবার শুট নিতে শুরু করলেন। সন্ধ্যা তখন রাতের কোলে হেলে পড়েছে। ইশারায় সঞ্জয় সমদ্দারকে বিদায় জানিয়ে গেটের বাইরে পা বাড়ালাম। সময় কম। বাড়ি ফেরার বাস ধরতে হবে।
আরও পড়ুন : মিমি, চঞ্চল, সিয়ামকে নিয়ে শুরু হচ্ছে সেলিমের শুটিং