Sunday 13 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাকিব খান নিজেকে বদলাতে চান, কিন্তু পরক্ষণেই ভুলে যান


১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৪০ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:১৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দর্শকদের ভালো সিনেমা উপহার দিতে চান শাকিব খান। তিনি ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার। শাকিব খানের কাছে তাই দর্শক-ভক্তদের প্রত্যাশাও বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে মাঝেমধ্যেই উদ্যোগি হতে দেখা যায় এই সুপারস্টারকে। দর্শক ও ভক্তদের কথা দিয়ে ফেলেন। কিন্তু কী পরিহাস—পরক্ষণেই হয়ত সেই কথা ভুলে যান শাকিব খান।

কিছুদিন পরপর সাক্ষাৎকারে শাকিব খান বলেন, ‘মানসম্মত সিনেমা ছাড়া অভিনয় করব না’ কিংবা ‘সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে নজর দেব’ অথবা ‘বছরে অল্প সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করব।’

আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, এসব কথা অনেক বছর ধরে বলে আসছেন সুপারস্টার শাকিব খান। তার কিছু নমুনা—

বিজ্ঞাপন

২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল শাকিবের পুরনো ক্যারিয়ার। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হবে নতুন ক্যারিয়ার। (প্রকাশকাল- ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, দৈনিক কালের কণ্ঠ)

নতুন উদ্যমে নতুনভাবে ভালো গল্পের ছবিতে অভিনয় করব। কোনো ছবির প্রস্তাব এলে তাতে আমার চরিত্র নিয়ে ভাবব। গল্প শুনে বা পড়ে এর খুঁটিনাটি বিষয়ে অবগত হয়েই অভিনয়ে সায় দেব। ( প্রকাশকাল–৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, দৈনিক যুগান্তর)

আমার ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে আমি কথা দিচ্ছি, তারা যেমনটি দেখতে চান আগামীতে ঠিক তেমনভাবেই নতুন এক শাকিব খান হয়ে উপস্থিত হবো, ইনশাল্লাহ। শিগগিরই আমি নতুন এক শাকিবকে হাজির করবো; যাকে দেখে আমার ভক্তরা সত্যিই গর্বিত হবেন। (প্রকাশকাল–৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, দৈনিক সমকাল)

আর অগোছালো কাজ করবো না। (প্রকাশকাল–১৬ মার্চ, ২০১৯, চ্যানেল আই অনলাইন)

প্রথম দিকে শাকিব খানের এই কথাগুলো তার অনুরাগীদের মন পুলকিত করলেও আজকাল তার এই কথাগুলো ‘আওয়াজ’ হয়ে কানে বেঁধে। অনুরাগীদের প্রশ্ন—শাকিব খান কি আদৌ নিজেকে বদলাতে চান, নাকি নতুন বাক্য খুঁজে না পাওয়ায় একই কথা বলেন?

দুই বাংলার জনপ্রিয় এই নায়কের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি যে অভিযোগটি শোনা যায়; সেটি হলো—তিনি শিডিউল ফাঁসান। সময় মতো শুটিং সেটে আসেন না। আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘আগুন’ ছবির শুটিংয়ে শাকিব খানের কল টাইম ছিল সকাল ৯টায়। অথচ তিনি সেটে ঢোকেন দুপুর দেড়টায়। আর শুটিং শুরু করেন দুইটার পর।

যৌথ প্রযোজনার ‘শিকারী’ ছবিতে শাকিব খান ভিন্ন লূকে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

যৌথ প্রযোজনার ‘শিকারী’ ছবিতে শাকিব খান ভিন্ন লূকে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

শাকিব খান দেরি করে সেটে ঢুকলে প্রযোজকের খরচ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এভাবে যদি তিনি নিয়মিত দেরি করেন তাহলে প্রযোজকের খরচ বেড়েই চলবে। আর দেশের চলচ্চিত্রের যা অবস্থা সেখানে বাড়তি খরচসহ সিনেমায় লগ্নিকৃত টাকা উঠে আসার অনিশ্চয়তাও বাড়বে। যার প্রমাণ, ঈদে মুক্তি পাওয়া ব্যবসায়িকভাবে অসফল ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমাটি।

‘শাহেনশাহ’ ছবির মহরতের সময় শাকিব খান জুমআর নামাজের পর ‘নতুন শাকিব’ হয়ে আবির্ভূত হওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তারপর কত জুমআর দিন চলে গেলো, কিন্তু নতুন শাকিব খান আর দেখা দিলেন না। অনেকটা সুনীল গঙ্গেপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার সেই ‘বোষ্টমী’র মতো।

এদিকে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানান শাকিব খান। কিন্তু তিনি আদতে একাই কাজ করতে চাইছেন। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হোক সেটাও তিনি চান না। আর যার কারণে, তিনি তার ছবিতে নতুন নায়িকাকে সুযোগ দিলেও, নতুন নায়ক সুযোগ দেয়ার ঝুঁকি নেন না। জায়গা হারানো ভয় কাজ করে তার মধ্যে।

ইন্ডাস্ট্রির খবর, তিনি যাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন তাকে বড় বাজেটের ছবি থেকে বাদ দিতে পরিচালককে অনুরোধ করেন। সেজন্য, কোনো প্রতিশ্রুতিশীল নায়ক নতুন চুক্তিবদ্ধ ছবির বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখেন। তারা ভয়ে থাকেন, হয়ত শাকিব খান তাদের ছবি থেকে বাদ দিতে পরিচালক বা প্রযোজককে ফোন করবেন।

‘শাহেনশাহ’ ছবিতে শাকিব খানের পুরনো রূপ। ছবি: সংগৃহীত

‘শাহেনশাহ’ ছবিতে শাকিব খানের পুরনো রূপ। ছবি: সংগৃহীত

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেতা বলেন, দেখুন আজকাল শাকিব খানকে বেশ ভয় পেতে হয়। নতুন ছবির খবর শুটিংয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করতে চাই না। দেখা গেলো তিনি পরিচালককে ফোন করে আমাকে বাদ দিয়ে দিতে বললেন। আমার সঙ্গে এর আগে একবার এমন ঘটনা ঘটেছে বলেই এ কথা বলছি।

শাকিব খানের এই ভয়টাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ বা ‘অতিরিক্ত হীনমন্যতা’ বলে। এই উপসর্গের মানুষজন সাধারণত, সামাজিক মাধ্যমে কিংবা প্রত্যক্ষভাবে অন্যের সাফল্যে ঈর্ষা অনুভব করেন। আস্তে আস্তে অন্যের সাফল্যে খুশি হতেও ভুলে যান এবং একসময় কাছের মানুষদের সঙ্গে ভাবনায় ও আচরণে কৃত্রিম হয়ে পড়েন। এর ফলে অনেক সম্পর্কেই দেখা দেয় ফাটল।

সাধারণত স্ট্রাগলিং পিরিয়ডে যদি কেউ অবহেলার শিকার হন তার মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দেয়। শাকিব খানের ভেতর এই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ বেড়ে ওঠার কারণ মূলত, পারিপার্শ্বিক অবস্থা। ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার শুরু থেকে নানা রকম স্ট্রাগলের মধ্যে দিয়ে গেছেন শাকিব খান। উৎসাহ যোগাবার জন্য সঙ্গে কাউকে পাননি। যার ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মধ্যে এমন মনোভাব চলে এসেছে।

সত্যিই যদি শাকিব খান নিজেকে বদলাতে চান, তাহলে সবার আগে এই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেজন্য তাকে ভয়কে জয় করতে হবে। তিনি যত বেশি ভয় পাবেন তত বেশি ধ্বংসাত্মক ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ তাকে তাড়া করে বেড়াবে। তার আর বদলানো হবে না।

টপ নিউজ শাকিব খান সিনেমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর