আজ থেকে নাগরিক’র প্রণোদনার নাট্য উৎসব
২৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:২৬
বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চার পথিকৃৎ নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। ২০১৮ সালে এ দলটি উদ্যাপন করেছে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর এবং দর্শনীর বিনিময়ের নাট্যচর্চার ৪৫ বছর। ১৯৭৩ সালে বাদল সরকারের লেখা ‘বাকী ইতিহাস’ নাটক মঞ্চায়ন করে নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চা শুরু করে এ নাট্যদলটি। এবার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এই নাট্যদলটি।
বর্তমান সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল তরুন মঞ্চ নাটক নির্দেশকদের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে নতুন নাটক মঞ্চে আনার এবং সেই নাটকগুলোর মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (২৯ নভেম্বর) থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনব্যাপী ‘নতুনের উৎসব ২০১৯’ শীরোনামে এক নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এই উৎসব বাংলাদেশের মঞ্চ নাট্যচর্চায় এক নতুন সংযোজন।
আজ উৎসবের প্রথম দিন। আজ বিকাল ৫ টায় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক নাট্য ব্যাক্তিত্ব আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালেদ এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন এই উৎসবের আহবায়ক ও দলের সহ-সভাপতি সারা যাকের। বিশেষ অতিথি থাকবেন- আইটিআই’র সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, আরণ্যক নাট্য দলের প্রধান মামুনুর রশীদ, ঢাকা থিয়েটারের সভাপতি নাসরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বালনে অংশ নেবে নতুন প্রজন্মের ৭ জন প্রতিশ্রুতিশীল নারী সংস্কৃতি সেবী- বন্যা মির্জা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, তনিমা হামিদ, আইরিন পারভীন লোপা, সাধনা আহমেদ, হৃদি হক ও জ্যোতি সিনহা।
আজ প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হবে পান্থ শাহ্রিয়ারের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘কালো জলের কাব্য’। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিসের’ ভাবানুবাদের নাটকটিতে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। এই নাটক নিয়ে নির্দেশক পান্থ শাহরিয়ার জানালেন, ‘অনেক বছর ধরে শেক্সপিয়ারের “মার্চেন্ট অব ভেনিস”–এর গল্পটা মাথার ভেতর পোকা হয়ে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। এবার তার নাড়া পড়ল। আমি গল্পটাকে দেখতে চেয়েছি এই মুহূর্তে। কিন্তু বিপত্তিটা হচ্ছে অমন ভয়ংকর একটা মুহূর্তকে কী করে এখনকার সময়ে দেখানো যায়। সে জন্য খুঁজতে শুরু করি এমন এক জায়গা, যেটা কিনা আমাদের খুব কাছে হলেও বড় অচেনা। আমাদের মতো করে দাঁড় করাতে চেয়েছি অন্য এক গল্প, যেটা “মার্চেন্ট অব ভেনিস”–এর ছায়া অবলম্বনে হলেও শেক্সপিয়ারের “মার্চেন্ট অব ভেনিস” নয়। গল্পটা আমাদের, একান্তই আমাদের।’
উৎসবের দ্বিতীয় দিন (৩০ নভেম্বর) শামীম সাগর রচিত এবং নির্দেশিত নাটক ‘রাধারমণ’। তৃতীয় দিন (১ ডিসেম্বর) ডঃ রতন সিদ্দিকী রচিত ও হৃদি হক নির্দেশিত নাটক ‘আকাসে ফুইটেছে ফুল- লেটোকাহন’। চতুর্থ দিন (২ ডিসেম্বর) সাইদুর রহমান লিপনের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অরূপরতন’। পঞ্চম দিন (৩ ডিসেম্বর) কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমনের নির্দেশনায় ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘খোয়াবনামা’। ষষ্ঠ দিন (৪ ডিসেম্বর) আফ্রিকান গল্প অবলম্বনে শুভাশিষ সিনহার লেখা ও নির্দেশনায় নাটক ‘ও মনপাহিয়া’। শেষ দিন (৫ ডিসেম্বর) থাকবে একটি বিশেষ নাটক ‘লটারী’- যেটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিল্পীদের দ্বারা মঞ্চস্থ হবে। এটির রচনায় অনুপ আইচ ও সিদ্দিক আহমেদ, নির্দেশনায় মোস্তাফিজ শাহীন এবং ড্রামাটুর্গের ভূমিকায় থাকবেন সারা যাকের। প্রতিটি নাটকেরই প্রথম মঞ্চায়ন হবে এই উৎসবে।
এই কার্যক্রমে তরুণ নাট্য নির্দেশকদের কাছ থেকে যে নাটক নেয়া হয়েছিল তার মধ্য থেকে ৫ জনকে নির্বাচিত করেন নাট্য ব্যাক্তিত্ব তারিক আনাম খান, প্রফেসর আব্দুস সেলিম ও নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত জুরী বোর্ড।
নাটকগুলো মঞ্চস্থ হবার পাশাপাশি উৎসবের শেষ দিন নাট্যাঙ্গনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় চার জন জেষ্ঠ্য নাট্য ব্যাক্তিত্ব- ফেরদৌসী মজুমদার, জ্যোৎস্না বিশ্বাস, লাকী ইনাম ও শিমুল ইউসুফ’কে সম্মাননা জানাবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। দলের সহ-সভাপতি আবুল হায়াতের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ডঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, নাট্য ব্যাক্তিত্ব তারিক আনাম খান ও নাট্যকার অধ্যাপক আব্দুস সেলিম। আহবায়ক ও দলের সহ-সভাপতি সারা যাকের’র ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এই উৎসবের।