রাজধানী থেকে হারিয়ে গেলো আরও একটি সিনেমা হল, ‘রাজমনি’
১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৮
এদেশের সিনেমা ব্যবসা এখনও অনেকাংশে রাজধানীর কাকরাইল থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কারণ এখানেই অধিকাংশ চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের অফিস। আর ছবি পাড়া হিসেবে খ্যাত কাকরাইল থেকেই হারিয়ে গেলো আরও একটি সিনেমা হল। বন্ধ হওয়ার পর এবার বিলীন হবার পথে রাজধানীর সুপরিচিত সিনেমা হল ‘রাজমনি’। হল ভেঙ্গে সেখানে শপিং কমপ্লেক্স করার কাজ চলছে পুরোদমে।
১৯৮৩ সালের ৩ মার্চ নায়ক রাজ রাজ্জাকের ‘লালু ভুলু’ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ‘রাজমনি’ সিনেমা হল। মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মণি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হলটি। একটা সময় চলচ্চিত্রের পরিবেশকরা রাজমনিতে কোনো সিনেমা ভালো চললে ধরে নিতেন সেটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভালো যাবে। সেই ‘রাজমনি’ বন্ধ হয়ে গেছে গত ১৭ অক্টোবর শাকিব খানের ‘নোলক’ ছবিটি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে।
রাজধানীর মানুষের এক সময়ের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রটি মালিকপক্ষ গত দেড় মাস ধরে ভাঙ্গছে। সরেজমিনে সারাবাংলা সেখানে গিয়ে দেখতে পায় হলটির উপরের দুটো তলা ইতিমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখন বাকি নিচতলা ভাঙ্গা।
‘রাজমনি’র সাথেই ছিলো ‘রাজিয়া’ নামে একই মালিকের আরেকটি সিনেমা হল। বিদেশি ছবি চলা সেই হলেরও একই হাল। ‘রাজমনি’ নামের ফলকের অর্ধেক অংশও ভাঙ্গা পড়েছে। ভাঙ্গাভাঙ্গিতে যাতে পথচারীদের অসুবিধা না হয় তার জন্য হলটির রাস্তার একপাশ পুরোটায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিনেমা হলটির ম্যানেজার শহীদুল্লাহ জানালেন, হল ভাঙ্গার কাজটি এ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এর কিছু দিনের মধ্যেই ২২ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। যেখানে থাকবে মার্কেট, অফিস। তবে থাকছে না কোনো সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স।
আপনারা চাইলে তো সিনেপ্লেক্সের আদলে দুই-তিন স্ক্রিনের সিনেমা হল রাখতে পারতেন। এমন প্রশ্নের জবাবে হল ম্যানেজার শহীদুল্লাহ চড়া সুরে বললেন, ‘আমাদের ইচ্ছে আমরা রাখবো না। স্টার সিনেপ্লেক্স বসুন্ধরাতে যেটা ওটার পাশে যে ফুড কোর্ট আছে, সেটা উঠিয়ে দেখেন কয়জন সিনেমা দেখতে যায়।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে মাসে তিন লাখ টাকা করে লস দিয়েছি। কেনো চালু রাখবো সিনেমা হল?’
তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘সিনেমা হলের মালিক তার জায়গায় যা ইচ্ছে করতে পারেন। কিন্তু এই সিনেমা হলের ব্যবসা দিয়েই মণি সাহেব রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলসহ তার যত ব্যবসা বাণিজ্য আছে সবই করেছেন। তাই উচিত ছিলো এখানে অত্যন্ত ছোট একটা সিনেমা হল হলেও রাখা।’
চলচ্চিত্র প্রদর্শকদের নেতা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে ঢাকা শহরে হল ছিলো ১৩টি। এরপর এটি গিয়ে ঠেকে ৪৪টিতে। রাজমনি ও রাজিয়া বন্ধের মধ্য দিয়ে এটি গিয়ে দাঁড়ালো ২৫ এ। এখন একজন হল মালিক তার হল বন্ধ করবে না কেন? তাকে কি আপনি ভাল কন্টেন্ট (সিনেমা) দিতে পারছেন? ভালো কন্টেন্ট বলতে বাণিজ্যিক ছবি বুঝাচ্ছি। ‘মৃত্তিকা মায়া’র মত ছবি দিয়ে হল টিকিয়ে রাখা যাবে না। তার মানে আমি বলছি না ওরকম ছবি করা যাবে না। পাশাপাশি হল চালু রাখার মতো ছবিও বানাতে হবে।’
মিয়া আলাউদ্দিন স্বীকার করেন রাজমনির মালিক চাইলে সেখানে সিনেপ্লেক্স রাখতে পারতেন। তিনি উদাহরন দেন কেরানীগঞ্জের ‘লায়ন’ সিনেমা হল ভেঙ্গে মার্কেট হয়েছে। কিন্তু সেখানেও সিনেপ্লেক্স রাখা হয়েছে। তাছাড়া শ্যামলীও একই কাজ করেছে। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘তাকে তো আর জোর করা যায়না। তার জায়গা তিনি তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
টপ নিউজ মিয়া আলাউদ্দিন রাজমনি সিনেমা হল রাজিয়া সিনেমা হল সিনেমা সিনেমা বন্ধ