Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবার মঞ্চে ‘বিনোদিনী’ রূপে শিমূল ইউসুফ


২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৩০

১৮০০ শতকের শেষভাগ। সে যুগে নারীদের আলাদা কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করতনা পরিবার সমাজ এমনকি দেশের শাসককুলও, সে সময়ে দাঁড়িয়ে নিজের অভিনয় প্রতিভার জোরে এক নারী নিজেকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শুধু অভিনয় জগতে নয় সংস্কৃতমনস্ক অভিজাত লোকেদের সভাতেও যেখানে আলোচিত হত বাংলা, ইংরেজী সাহিত্য। সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেসব আলোচনায় যোগ দিতেন এই অসামান্যা প্রতিভাময়ী সুন্দরী নারী, যদিও তাঁর প্রথাগত শিক্ষা ছিল সামান্যই।

এমনই এক আশ্চর্য প্রতিভার নাম নটী বিনোদিনী। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয়া এই প্রবাদ প্রতিম অভিনেত্রী মাত্র ১২ বছর বয়সে তৎকালীন গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে ছোট্ট ভুমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। নাচ ও গানে সমানতালে পারদর্শী বিনোদিনী খুব তাড়াতাড়ি অভিনয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং একজন প্রথম শ্রেনীর অভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন । ১৮৭৪ থেকে একটানা ১২ বছর তিনি অভিনয় করেছিলেন । ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি তিনি শেষবার অভিনয় করেন । এর আগে পর্যন্ত ৫০টি নাটকে তিনি ৬০টিরও বেশি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

তাঁর সময়েই বাংলা রঙ্গজগতও রূপান্তরিত হয়েছিল মুক্তমঞ্চের যাত্রা ঢং-এর অভিনয় থেকে মঞ্চে পর্দা সহ ইউরোপীয়ান বৈশিষ্ট্যের অভিনয়ের দিকে। বিনোদিনীই ভারতীয় বা দেশজ সাজসজ্জার সঙ্গে ইউরোপীয় সাজসজ্জার সংমিশ্রণ করেন, যদিও তাঁর সামনে কোন রোল-মডেল ছিলনা Moon of The Star, Flower of the Native Stage এইসব বিশেষণে তিনি ভূষিতা হয়েছিলেন তবুও মাত্র ২৪ বছর বয়সে অভিনয় জীবনের মধ্যগগনে পৌঁছে তাঁকে ছাড়তে হল তাঁর ভালবাসার পেশা ও জীবন।

বিনোদিনী তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’য় লিখেছেন, ‘থিয়েটার ভালোবাসিতাম, তাই কার্য করিতাম, কিন্তু ছলনার আঘাত ভুলিতে পারি নাই। তাই অবসর বুঝিয়া লইলাম’।

আধুনিক বাংলা থিয়েটারের প্রথম নারী অভিনয়শিল্পী হিসেবে বিনোদিনী দাসী অক্ষয় আসনে আসীন। তারই আত্মজীবনী অবলম্বনে ঢাকা থিয়েটার নির্মাণ করে একক অভিনয়নির্ভর নাট্য ‘বিনোদিনী’। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর শিল্পী জীবন, ব্যক্তিজীবনের কষ্ট এবং সংগ্রামের নানা ইতিহাসের পাশাপাশি শিল্পী হিসেবে তার মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করেছে ঢাকা থিয়েটার। বিনোদিনী দাসীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার কথা’ এবং ‘আমার অভিনয় জীবন’, এ দুটো বইয়ের আলোকে ‘বিনোদিনী’ নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছেন নাট্যকার ও লোক-গবেষক সাইমন জাকারিয়া। নাটকের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন প্রয়াত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। নাটকের চলমান শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। ঢাকা থিয়েটারের এই প্রযোজনা বাংলাদেশেরও সম্পদ ও শিল্প ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। শিমূল ইউসুফের চরিত্র রূপায়ন, অভিনয়গুণ তথা শিল্প উপস্থাপনার নান্দনিকতায় ‘বিনোদিনী’ হয়ে উঠেছে ইতিহাসের অংশ। যেমনটি সত্যিকারের নাট্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিনোদিনী দাসী। ঢাকার মঞ্চে আসার পর থেকেই ‘বিনোদিনী’ পেয়েছে বিপুল প্রশংসা। সেটা বিনোদিনী দাসীর জীবনী হিসেবে না যতটা তার চেয়েও বেশি শিমূল ইউসুফের একক অভিনয়ে বিনোদিনী হয়ে ওঠার স্পর্ধায়। মঞ্চকুসুম শিমূল ইউসুফ দীর্ঘ সময় ধরে যেন তারই প্রতিরূপ হয়ে পরম মমতায় মঞ্চে মূর্ত করে চলেছেন বিনোদিনী দাসীর যাপিত জীবন।

 

‘বিনোদিনী’ ঢাকা থিয়েটারের ৩১ তম প্রযোজনা। দেশে-বিদেশ মিলে শতাধিক মঞ্চায়ন হয়েছে নাটকটির। এ নাটকে একক অভিনয়ের পাশাপাশি সুর, সঙ্গীত, পোষাক ও সহযোগী নির্দেশনায় শিমূল ইউসুফ নিজেই। আলোক ও সহ-নির্দেশনায় ইশরাত নিশাত। মঞ্চ পরিকল্পনায় কামালউদ্দীন কবির। কোরিওগ্রাফিতে মিনু হক, নামলিপি আফজাল হোসেন, প্রপস ডিজাইন ও নির্মাণে কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাস এবং প্রযোজনা ব্যবস্থাপনায় কামাল বায়েজিদ।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হবে ‘বিনোদিনী’ নাটকের প্রদর্শনী।

ঢাকা থিয়েটার নাসিরউদ্দীন ইউসুফ পরিক্ষণ থিয়েটার হল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিনোদিনী শিমূল ইউসুফ সাইমন জাকারিয়া সেলিম আল দীন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর