ঋত্বিকের ভিটায় চলচ্চিত্রকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি ১২ নির্মাতার
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৫১
উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটার একটা অংশ ভেঙে সেখানে সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এ জায়গা সরকার থেকে বরাদ্দ পেয়েছে, ভবিষ্যতে কলেজের প্রয়োজনে আরও ভাঙা হবে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১২ জন বিশিষ্ট নির্মাতা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতারা হলেন- নাসির উদ্দীন ইউসুফ, তানভীর মোকাম্মেল, মানজারে হাসীন মুরাদ, মোরশেদুল ইসলাম, এনায়েত করিম বাবুল, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, শামীম আক্তার, নূরুল আলম আতিক, এন রাশেদ চৌধুরী, ফওজিয়া খান, আকরাম খান ও রাকিবুল হাসান।
বিবৃতদাতা নির্মাতারা অবিলম্বনে ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান করে ঋতিক ঘটকের পৈতৃক ভিটাকে সরকারীভাবে হেরিটেজ ঘোষণা ও সেখানে ‘’ঋত্বিক চলচিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিটি নিচে হুবহু প্রকাশ করা হলো—
বিশ্ববরেণ্য বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীর মিঞা পাড়ার ভবনটি ভেঙে ফেলার ঘৃণ্য উদ্যোগকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি। পরিত্যাক্ত ওই বাড়িতে একটি ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা দেশের চলচ্চিত্র কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু সামরিক শাসন এবং স্বৈর শাসনকালে সে স্থানে একটি হোমিওপ্যাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজশাহীর ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র সংসদ’ কর্মীরা সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূরের কাছে ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে একটি চলচ্চিত্র কেন্দ্র করার জন্য দাবিপত্র মন্ত্রনালয়ে জমা দেয়। কিন্তু বিগত ৩ বছরে কোন সারাশব্দ পাওয়া যায়নি। গত শনিবার ২১ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেল স্ট্যান্ড করার অজুহাতে ভবনের একটি অংশ গুড়িয়ে দেয়। আমরা এ হীন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিষয়টি আজ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে, এম খালেদ বাবু’র গোচরে এলে তিনি দ্রুত জেলা প্রশাসককে ভাঙ্গার কাজ স্থগিত করতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।নির্দেশমতো ভাঙ্গার কাজ স্থগিত হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি এটা সাময়িক ব্যবস্থা।
বাংলা চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা নির্মাণে ঋত্বিক ঘটক একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি আমাদের এই বাংলাদেশে জন্মেছিলেন এতো আমাদের শ্লাঘার বিষয়।
আমরা অনতিবিলম্বে ‘ঋত্বিক সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গে একটি ভিন্নমাত্রার চলচ্চিত্র আন্দোলন এই প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে। আর এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আমাদের জোর দাবি হোমিওপ্যাথ কলেজটি ভিন্ন একটি স্থানে স্থানান্তর করে ‘ঋত্বিক চলচিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হোক।