Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বার্টল্ড ব্রেখট ও থিয়েট্রন’র ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’


২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৩০

বিশ্ববিখ্যাত জার্মান কবি, নাট্যকার ও নির্দেশক বার্টল্ড ব্রেখট [ইউজিন বার্টল্ড ফ্রেডরিক ব্রেখট]। জন্ম জার্মানিতে ১৮৯৮ সালে, মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৫ সালে পূর্ব বার্লিনে। বার্টল্ড ব্রেখট মূলত নাট্যকার হিসেবেই বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে জননন্দিত হয়ে ওঠেন।

তিনি নাট্যকলা সম্পর্কে নিজস্ব নাট্যচিন্তা ও ধ্যানধারণায় এনেছেন নতুন নাট্যকৌশল ‘এপিক থিয়েটার’, যা ছিল পূর্ববর্তী ক্লাসিক্যাল অ্যারিস্টটলীয় নাট্যধারার বিপরীত। তিনি দর্শকদের নাটকীয় ইন্দ্রজালের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার পরিবর্তে চিন্তাশীল, গতিশীল ও বিশ্লেষণী ভূমিকায় অবতীর্ণ করেন। মার্কসবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ বার্টল্ড ব্রেখটের নাটকে উৎসারিত হয়েছে তৎকালীন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সমাজের সাদা-কালো শাসক-শোষিতের সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব। বার্টল্ড ব্রেখটের ‘সিচুয়ানোর সুকন্যা’ নাটকটিও এই চিন্তাধারার বাইরে নয়।

বিজ্ঞাপন

বার্টল্ড ব্রেখটের নাট্যধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং তার ১২০তম জন্মবাষিকীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে থিয়েট্রন ঢাকা বিডি তাদের প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে এনেছেন তারই রচিত ‘The Good Woman of Setyuan’ অবলম্বনে নাটক ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪১ সালে রচিত বার্টল্ড ব্রেখটের এই নাটকটি জার্মান ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মামুন হক। নির্দেশনা দিয়েছেন সম্রাট প্রামানিক।

‘সিচুয়ানের সুকন্যা’ নাটকটির গল্পে আমরা দেখতে পাই, দারিদ্র্যে ঘেরা শহর সিচুয়ানে তিন দেবতার আগমন ঘটে। এক পানি বিক্রেতা তাদের অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করেন, দেবতারা এসে পানি বিক্রেতার কাছে রাত্রিযাপন করার জন্য থাকার জায়গা চান। শহরের নামি-দামি কেউই জায়গা দেন না। অবশেষে এক পতিতার গৃহে আশ্রয় হয় তাদের। দেবতারা তাকে কিছু টাকা দিলে ওই পতিতা একটি দোকান কিনে নিজেকে ভালো রাখার সংগ্রাম শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার দোকানে অনেক মানুষ আশ্রয় নেন, এবং সবাই তাকে দেউলিয়া করে দেওয়ার উপক্রম করে ফেলে। ডেভিড নামে এক বেকার পাইলটের সঙ্গে তার প্রেম হয়, আবার তাকে বিয়ে করতে চান পয়সাওয়ালা নাপিত। সবাই মিলে যখন তাকে ভালো মানুষ হয়ে চলতে দিচ্ছিল না, তখনই তিনি অন্যরূপে হাজির হন। সমাজের অন্য সবার কথা চিন্তা করে নিজের বিয়েও ভেঙে দেন। তবু তার বিরুদ্ধে সমাজের অভিযোগের অন্ত নেই। নিজেই নিজেকে গুম করার অভিযোগে গ্রেফতার হন, নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে আর দেবতাদের হস্তক্ষেপে গল্প এগিয়ে যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত দেবতারাও কোনো সমাধান না দিয়েই চলে যান।

বিজ্ঞাপন

নাটকটির অনুবাদ প্রসঙ্গে মামুন হক জানালেন তার আবেগের কথা- ‘১৯৯৩ সালে প্রথম জার্মানিতে এই নাটকটি দেখার সুযোগ হয় আমার। তখন দেখেই আমার মাতৃভাষায় নাটকটি দেখার এবং মঞ্চায়ন করার খুব ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম। ব্রেখট ভিন্ন দু’টি ধরনের নাটক তার জীবনে করে গেছেন। একটি এপিক থিয়েটার, অন্যটি ড্রামাটিক থিয়েটার। ড্রামাটিক থিয়েটারে আমরা এক ধরনের ভয় ও সহানুভূতি দেখতে পাই। এসব নাটকে একটি পরিশুদ্ধতার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি হয়। এপিক থিয়েটার যেটা দর্শকদের মাঝে একটা সমালোচনামূলক অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। তার এসব নাটকের মাধ্যমে সমাজের মানুষের নাঝে সচেতনতা ও সক্রিয়তা বাড়ানোই ছিল তার মূল লক্ষ্য। প্রাচীন গ্রিসের মতো দেবতাদের মাউন্ট অলিম্পাস থেকে নামিয়ে নিয়ে আসেন। প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত নাট্যকার নাট্যকার ইউরিপিদিস তার নাটকে দেবতাদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু ব্রেখট এখানে অন্য পথে হেঁটেছেন।’

মামুন বলেন, ‘ব্রেখট তার লেখক জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যেমন— ১৯৩৩ সালে একনায়কতন্ত্রের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তখন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকেও জার্মানি ত্যাগ করতে হয়েছিল। ব্রেখট জার্মানি ছেড়ে বেশ কয়েকটি দেশে বসবাস করেছেন। সুইডেন ডেনমার্কসহ যুক্তরাষ্টেও তিনিও বহু দিন বসবাস করেছেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব জার্মানিতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে পূর্ব বার্লিনে থিয়েটার, নাটকের জগতে অনেক সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।’

নির্দেশক সম্রাট প্রামানিক জানালেন, থিয়েট্রন ঢাকা বিডি’র প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে এনেছেন বার্টল্ড ব্রেখটের নাটক ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’। জার্মান ভাষা থেকে অসাধারণ প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মামুন হক। দীর্ঘসময় মামুন হকের জার্মানিতে অবস্থান, জার্মান ভাষা-সাহিত্য এবং শিল্পবোধ অনুবাদের ভাষা-বুননে স্পষ্ট।

তিনি আরও বলেন, এই নাট্যপ্রযোজনায় আমরা নির্দেশক, ডিজাইনার, মঞ্চব্যবস্থাপনা ও অভিনেতা মিলে ২৫ জন যুক্ত আছি। নাটলিপিটি টানা একমাস সান্ধ্যকালীন মহড়া শেষে প্রদর্শনী হয়। কিন্তু নাট্যনির্মাণ প্রক্রিয়ায় আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়। এইসব চ্যালেঞ্জগুলোকে যথাসাধ্য অতিক্রম শেষে দর্শকদের সামনে হাজির করা হয়েছে ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’ প্রযোজনা।

‘সিচুয়ানের সুকন্যা’ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিনিয়া আজাদ, কৌশিক বিশ্বাস, সাদমান সাঈদ, বাপ্পি আমিন, তন্ময় বিশ্বাস, বাপ্পা রায়, শরীফুল ইসলাম, পার্থ সরকার, শামীম শেখ, ইবনে সাকিব, সায়লা পারভীন পিয়া, শিউলী ইসলাম ও উর্মি। ডিজাইন ও প্রযোজনা উপদেষ্টা আলি আহমেদ মুকুল, সেট নুর হোসেন, পোশাকে শ্রেয়শ্রী সরকার, প্রপস এস এম সাইফুল হাসান, আলোক পরিকল্পনায় সাওগাতুল ইসলাম হিমেল, সঙ্গীতে আহসান হাবীব বিপু এবং প্রযোজনা নির্বাহী ও মঞ্চব্যবস্থাপনায় নুর-ই-আলম সুমন।

‘সিচুয়ানের সুকন্যা’ নাটকের সপ্তম প্রদর্শনী রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।

থিয়েট্রন থিয়েট্রন ঢাকা বিডি বার্টল্ড ব্রেখট মঞ্চনাটক সম্রাট প্রামানিক সিচুয়ানের সুকন্যা

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর