Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধ্রুপদী নৃত্য সন্ধ্যা ‘পরম্পরা’ ও চার নবীনের ধারাবাহিকতা


২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:১২

‘পরম্পরা’ শিরোনামে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক ধ্রুপদী নৃত্যসন্ধ্যা। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এই পরিবেশনা। এর আয়োজন করছে ঋদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংগঠন ‘নৃত্যনন্দন’। যার প্রতিষ্ঠাতা- নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য শিক্ষক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়।

এতে প্রথমেই মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করবেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা। দ্বিতীয় পরিবেশনা মারিয়া ফারিহ উপমা’র ভরতনাট্যম। এরপর কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন প্রথমে মৌমিতা রায় জয়া ও শেষে এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান।

বিজ্ঞাপন

নবীন চারজন নৃত্যশিল্পীই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাই বোঝাপড়াটাও তাদের মধ্যে ভীষণ। একে অপরের খুব কাছের। দেশে ফিরে এই প্রথম চার জনের জন্যই আবার সুযোগ এসেছে একসাথে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার। এ যেন চার বন্ধুর জন্যই এক বিরাট পাওয়া। তাদের এই আনন্দ আর অনুভূতিগুলো একসাথে জানালেন সারাবাংলাকে।

ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমরা চারজনই রবীন্দ্রভারতীর: সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা

‘এতদিন বিভিন্ন প্রোগ্রামে নেচেছি। কিন্তু এই আয়োজনে একটা ভিন্নতা আছে। সেটা হচ্ছে পরিবেশনার ব্যাপ্তিকাল। আমরা প্রত্যেকেই বেশ খানিকটা করে সময় পাচ্ছি। প্রত্যেককে একটা করে চাঙ্ক দেওয়া হয়েছে। যেটা সচরাচর ভারতের উৎসবগুলোতে হয়। আমি এটা নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেদিনের জন্য। আমার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে একাই এক ঘণ্টার একটা পরিবেশনা করার। ভাবতেই ভালো লাগছে যে, আমরা চারজনই রবীন্দ্রভারতী থেকে একই ব্যাচে আমাদের কোর্স কমপ্লিট করে দেশে একই সাথে অনুষ্ঠান করছি। আমরা চারজনই রবীন্দ্রভারতীতে বেশ প্রশংসিত ছিলাম। আশা করছি এখানেও এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

আর যাই হোক, অন্তত দর্শক তৈরি হবে: মারিয়া ফারিহ্ উপমা

‘পরম্পরা- একজন থেকে ১০ জন, ১০ জন থেকে ১শ জনে ছড়িয়ে পড়া। এটা একটা প্র্যাকটিস। আমরা যেমন এই শিল্পটাকে লাইফ প্র্যাকটিস হিসেবে নিয়েছি, তেমনি যারা শিল্পী নয় কিন্তু এই শিল্পটাকে ভীষণ ভালোবাসেন তাদের জন্যও একটা প্র্যাকটিস। দেখার এবং জানার প্র্যাকটিস। যদি আপনি এটা সম্পর্কে না-ই জানেন তাহলে এটার ভালোমন্দ বিচার করবেন কী করে? তাই আমার ভালোলাগা হচ্ছে এই ধরনের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা আগামীতে আরও বেশি করে নেওয়া প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, নাচ নিয়ে পড়াশুনা করা যায়, গবেষণা করা যায়, এটাই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন না। এমনকি শিক্ষিত সমাজেও। তারপরও নাচ নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। এ পর্যন্ত যতগুলো অনুষ্ঠান আমি করেছি, সব জায়গায় আমি ভালোবাসাটা পেয়েছি। তো এই ধরনের একটি আয়োজনে আর যাই হোক, অন্তত দর্শক তৈরি হবে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগা। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় মাসীকে (শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়), যে তিনি পরম্পরা’র প্রথম আয়োজনেই আমাকে যোগ্য ভেবে সুযোগ দিয়েছেন।’

এই প্ল্যাটফর্মটা যে আমরা পাচ্ছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য: মৌমিতা রায় জয়া

‘এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা যারা শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চা করি, আমাদের মঞ্চে পরিবেশনার সুযোগ খুব একটা আসে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৪-৫ মিনিটের বিভিন্ন গান বা মিউজিক পিসের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করতে হয়। এত কষ্ট করে, সাধনা করে যে নাচটা আমরা শিখি সেটা দেখানোর কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই বললেই চলে। এটা তো সত্য যে, শাস্ত্রীয় নৃত্য ছাড়া অন্য কোনো নৃত্যের চর্চা সঠিক হয় না। তাই আমি আনন্দিত ‘নৃত্যনন্দন’ আমাদের এই সুযোগটা করে দিচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মটা যে আমরা পাচ্ছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত আমাদের শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চা অনেকদূর এগিয়ে যাবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নাচ নিয়ে যত যাই কিছুই করি না কেন, বছরের শেষটায় যে আমার ভালোবাসার কত্থক নৃত্যকে আমি মঞ্চে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করতে পারছি। আর এটা যে আমার কাছে কতটা আনন্দের, সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ‘নৃত্যনন্দন’ এবং শর্মিলা মাসীর কাছে। ২০২০ সালেও যেন শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চাটা এগিয়ে নিতে পারি— সবার কাছে এই আশীর্বাদ চাচ্ছি।’

আমরা সব সময় একাত্ম হয়ে কাজ করব: এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান

‘প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ‘নৃত্যনন্দন’ ও শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় মাসীকে। আমরা চারজনই একটা ব্যাচ। আমরা একে অপরের খুব কাছের। বোঝাপড়াটাও আমাদের মধ্যে ভীষণভাবেই রয়েছে। আজ এক সাথে আমরা চারজনেরই মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ এসেছে। আর এটা আমার কাছে দারুণ এক পাওয়া। অনেক সময় আমরা দেখি যে, আমাদের অগ্রজরা একটা পর্যায়ে এসে যে যার মতো কাজ করছেন। আমার প্রত্যাশা, আমরা সবসময় একাত্ম হয়ে কাজ করব। শুদ্ধ শাস্ত্রীয় নৃত্যের ধারক বাহক হয়ে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। আমার শিক্ষক ও গুরুদের কাছ থেকে যা শিখেছি, সেটা যেন পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক ও শুদ্ধভাবে শিখিয়ে যেতে পারি। এটাই ‘পরম্পরা’।

বাংলাদেশের কত্থক নৃত্যে আমরা নতুন প্রজন্ম, আমাদের আগে এই নৃত্য ধারায় গুণী যেসব নৃত্যশিল্পীরা রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে উৎসাহিত হয়ে আমরা এই ধারায় যুক্ত হয়েছি। আজকে আমাদের জীবন ধারণের প্রধান মাধ্যম এই শাস্ত্রীয় নৃত্য। এটাই আমার কাছে ‘পরম্পরা’। আমার প্রত্যাশা, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এভাবে আগ্রহী হয়ে শুদ্ধ শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চায় এগিয়ে আসবে।’

মানব সমাজে যত রকমের শিল্প আছে, তার মধ্যে নৃত্যকলা প্রাচীনতম। এটি একটি গুরুমুখী বিদ্যা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নৃত্যচর্চায় নতুন মাত্রা ও বিস্তার যুক্ত হয়েছে উপমহাদেশীয় নৃত্যধারার সঙ্গে এর যোগ ও সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার সুবাদে। ভারতে প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের নৃত্যধারায় নতুন গতিধারা বয়ে এনেছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপনকারী এই চার নৃত্যশিল্পী— সুদেষ্ণা, উপমা, মৌমিতা ও ইমরান, নৃত্যশিল্পের চর্চায় সে ধারারই পরম্পরা বহন করে চলেছেন।

দর্শনীর বিনিময়ে এই আয়োজন উপভোগ করা যাবে।

এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান ছায়ানট মিলনায়তন ধ্রুপদী নৃত্য সন্ধ্যা নৃত্যনন্দন পরম্পরা মারিয়া ফারিহ উপমা মৌমিতা রায় জয়া শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর