Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢালিউড ২০১৯: হতাশার মাঝে খানিক আলো


৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৩৪

হতাশাজনক! এমন বছর আর না আসুক। এমনটাই হয়তো বলবেন ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির কর্তাব্যক্তিরা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির হিসেব মতে ২০১৯ সালে দেশিয় ছবি মুক্তির সংখ্যা মাত্র ৪০।

কিন্তু এ ধ্বস কি এ বছরেই হুট করে নেমেছে? না, ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৫ সালের পর চলচ্চিত্র মুক্তির সংখ্যা নিচে নামতে শুরু করে। ৬৭, ৫৬, ৫৬, ৫৪ ক্রম অবনতির ধারাবাহিকতা ছিল এ বছরেও।

ইন্ডাস্ট্রিতে ক্রমবর্ধমান অন্তঃদ্বন্দ্ব, ছবি নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়া, সভা-সমিতির মিছিল মিটিং বাড়া কিন্তু বাস্তবিক কাজ তেমন একটা না থাকা এবং পারিস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়া— অবনতির কারণ বলে মনে করেন ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা।

অবশ্য প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু দুষছেন সিনেমা হল ও পরিবেশনা সিস্টেমকে। তিনি বলছেন, ‘এখন সময় সিনেপ্লেক্সের। মান্ধাতার আমলের হল দিয়ে দর্শকদের ফেরানো যাবে না। আর প্রযোজকের টাকার সঠিক হিসাব দিতে হবে।’

তবে হল মালিক সমিতির নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ মানছেন না খসরুর কথা। তিনি বলছেন, ‘ভালো কন্টেন্ট’ই প্রধান সমস্যা।

এক নজরে সারাবাংলার চোখে ঢালিউডের ২০১৯

বক্স অফিসে খরা

আদতে এদেশে বক্স অফিস বলতে কিছু নেই। প্রথমদিন থেকে প্রযোজক বা পরিচালক যা বলে দেন, তাতেই বিশ্বাস রাখতে হয়। সবাই বলছে এ বছরের একমাত্র হিট ‘পাসওয়ার্ড’। মালেক আফসারী পরিচালিত ছবিটি রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিলো। অন্য বছরগুলোতে ঈদের ছবি কমপক্ষে একমাস ভালো চলে।  কিন্তু ‘পাসওয়ার্ড’ তা না পেরেও সহ-প্রযোজক ইকবাল হোসেন বলেছেন তিনি পুরো টাকা তুলে এনেছেন। যদিও ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট বিশ্লেষকরা বলছেন ছবিটি কোন রকমে টাকা তুলে এনেছে।

বিজ্ঞাপন

খোরশেদ আলম খসরু অবশ্য আরো কয়েকটি ছবির কথা বলেছেন যেগুলো ভালো চলেছে—‘অবতার, ‘নোলক’ ও ‘আব্বাস’। তবে তিনি বলছেন, ‘ছবিগুলো কোনরকমে ভালো করেছে’।

হিট-ফ্লপের প্রকৃত সংজ্ঞায় গেলে এ বছরের সবে ধন নীল মণি ‘পাসওয়ার্ড’কে ‘অ্যাভারেজ হিট’ তকমা পেতেই কষ্ট করতে হচ্ছে।

ভিন্নধারার উত্থান

বক্স অফিসে যেমনই করুক ২০১৯ এ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘ভিন্নধারা’র ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘আলফা’, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’, ‘ন ডরাই’। প্রতিটি ছবি দর্শক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র মেকিং ও গল্প বলার ধরণ বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছে। ‘আলফা’ নাকি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ কোনটি বছরের সেরা ছবি তা নিয়েও অনেকের মাঝে বিতর্ক আছে।

সারা বিশ্বে অ্যান্থলজিক্যাল ফিল্ম টার্মটা নতুন না। আমাদের দেশে ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ সে ধারার শুরু করেছে। ১১টি ভিন্ন গল্প নিয়ে এটি নির্মিত। নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও ‘ন ডরাই’ও পেয়েছে প্রশংসা। এছাড়া ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ও কুড়িয়েছে প্রশংসা।

প্রতিবছর ভিন্নধারার ছবি মুক্তি নতুন কিছু না। কিন্তু নির্মাণ দুর্বলতার কারণে প্রশংসার বদলে শুনিয়েছে হতাশার বাণী। এ ছবিগুলো অন্ধকার টানেলের মুখে আলোর ঝলকানি ইন্ডাস্ট্রির জন্য।

শাকিব ফেল, শাকিব পাশ

এক দশক ধরে ঢালিউডের বক্স অফিস মানে শাকিব খান। এক সময়ের রেকর্ড ২২ ছবি মুক্তি থেকে বেরিয়ে এ বছর শাকিব খানের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি মাত্র তিনটি। এ বছর রোজার ঈদে ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে পরীক্ষায় টেনে টুনে পাশ করলেও কোরবানির ঈদে ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’ পাশ মার্ক তুলতে পারেনি। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে উৎসবের দিন ছাড়া শাকিব হতাশ করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বারবার কথা দিয়েও নিজেকে ভাঙ্গতে না পারা, অতি উচ্চ পারিশ্রমিক, শিডিউল ফাঁসানোসহ নানা কারণে শাকিবের এ অবনমন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। শাকিবও তা বুঝতে পেরে ফিরেছেন প্রযোজনায়। যুক্ত হয়েছেন হলের প্রজেক্টর ব্যবসায়।

অনুদান কাণ্ড

চলচ্চিত্র নির্মাণে দেওয়া সরকারি আর্থিক অনুদান নিয়ে ঘটেছে ‘পদত্যাগ নাটক’। ৩০ এপ্রিল অনুদান কমিটির সুপারিশ মানেনি তথ্য মন্ত্রণালয় এমন অভিযোগে পদত্যাগ করেন অভিনেতা মামুনুর রশিদ, নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও ড. মতিন রহমান। পরে অবশ্য তারা পদত্যাগপত্র তুলে নেন। ৩১ জুলাই শমী কায়সারের ‘স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা’সহ অন্যান্য পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

মজার ব্যাপার হচ্ছে অনুদান প্রাপ্তির পর শমী কায়সার গণমাধ্যমকে বলেন তিনি অনুদানের জন্য আবেদনই করেননি।

সিনেপ্লেক্স বাড়লো

জানুয়ারি ও অক্টোবরে স্টার সিনেপ্লেক্স তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শাখা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি আসছে বছরে ঢাকা শহরে আরও দুটি শাখা চালু করতে যাচ্ছে। একই সাথে মধুমিতা ২টি হল নিয়ে সিনেপ্লেক্স বানানোর ঘোষণা দিয়েছে। কেরানীগঞ্জে, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে চালু হয়েছে সিনেপ্লেক্স। কাজ চলছে বগুড়ায় ও খুলনায়। সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় প্রায় চার শতাধিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণাও এসেছে।

প্রযোজক সমিতি নিয়মেই খালাস!

প্রায় এক দশক প্রশাসকের অধীনে থাকার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন হয়েছে ২৭ জুলাই। কিন্তু যত আশা ভরসা নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে ততটা তারা পূরণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ।

প্রযোজকদের দীর্ঘদিনের গলার কাঁটা সিনেমা হলের প্রজেক্টর ভাড়া। তাদের দাবি ছিলো এ ভাড়া তুলে দেওয়ার। কিন্তু নতুন কমিটি তা কমিয়েছেন, তুলে দেননি। তবে সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলছেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ছয় মাস হলো। এর মাঝে শুটিংয়ে নানা ধরণের বাড়তি খরচ হতো শিল্পীদের অযাচিত কিছু আচরণের জন্য। আমরা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটি মিলে একটি নীতিমালা করে দিয়েছি। তা পুরোপুরি মানা হলে খরচ কমে আসবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এছাড়া সমিতির সদস্যপদের ফি সাময়িকভাবে কমিয়ে মাত্র ১১ হাজার করে ১০ জন প্রযোজককে সদস্য করেছি। যারা আগামী ৬ মাসের ভিতর ১০টি ছবি বানিয়ে মুক্তি দিবেন।’

ক্যাসিনোর ধাক্কা

এনামুল হক আরমান দেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে প্রযোজনা করেন ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’। এরপর প্রযোজনা সংস্থাটি থেকে ‘আগুন’সহ আরও ছবি প্রযোজনার ঘোষণা আসে। কিন্তু ক্যাসিনো কান্ডে জেলে যাওয়ার পর ছবিগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

গত দু-তিন বছর জাজের সাথে পাল্লা দিয়ে শাপলা মিডিয়াও ছবি বানাচ্ছিলো। মানের দিকে টেক্কা না দিতে পারলেও বেশ আলোচনায় ছিলো প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ক্যাসিনো ধাক্কার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নতুন প্রযোজনায় হাত দিচ্ছে না।

বলা যায় এ ক্যাসিনো কান্ড এ বছর চলচ্চিত্র মুক্তির সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

জাজের সাম্রাজ্যে সাইক্লোন

২০১২ তে আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর গত কয়েক বছরে জাজ মাল্টিমিডিয়া এ দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে হয়ে উঠেছিলো একচ্ছত্র অধিপতি। কিন্তু তাদের এ রাজত্বে প্রথম ধাক্কাটা আসে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের নীতিমালায় পরিবর্তন আসার পর। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় জনতা ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবদুল আজিজের সম্পৃকততার খবর প্রকাশের পর থেকে। প্রথম কয়েকদিন আবদুল আজিজ মিডিয়ার সামনে আসলেও কিছুদিন পর থেকে তাকে বস্তুত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ বছর নির্মিত নতুন ছবির সংখ্যা মাত্র একটি—জ্বিন। মুক্তিও পেয়েছে একটি— বেপরোয়া।

এরপরও প্রতিষ্ঠানটি নানা সময়ে নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর উদাহরণ ‘মাসুদ রানা’র নায়িকা বিতর্ক।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতর্ক

এ বছর একসাথে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আগামী বছর থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘সেশনজট’ মুক্ত করছে সরকার। কিন্তু এ বছর বেশকিছু পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো ২০১৭ সালে ভারতীয় নাগরিক মুহাম্মদ কালামের ‘ঢাকা অ্যাটাক’র জন্য ‘শ্রেষ্ঠ সম্পাদক’, মোশাররফ করিমের ২০১৮ সালে ‘কমলা রকেট’র জন্য ‘শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা’র পুরস্কার প্রাপ্তি। ‘ঢাকা অ্যাটাক’র প্রযোজক অনাকাঙ্খিত ভুল উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদন করেন। জুরি বোর্ড ওই বছর বিকল্প কাউকে আর পুরস্কার দেয়নি।

অন্য দিকে মোশাররফ করিম পুরস্কার প্রত্যাখান করেন। তবে এসব ইস্যুতে পরিচালক ও প্রযোজকদের দোষ দিয়ে দায় এড়িয়েছে জুরি বোর্ড।

আলফা ঢালিউড নোলক পাসওয়ার্ড ফাগুন হাওয়ায় লাইভ ফ্রম ঢাকা শাকিব খান সালতামামি ২০১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর