গদ্য গানে আড্ডায় নান্দনিক সন্ধ্যা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:২৪
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক নান্দনিক আড্ডায় মেতেছিলেন সময়ের মেধাবী ক’জন কথা সাহিত্যিক। বিষয় ছিল লেখালেখি। আর সবার মধ্যমনি হয়ে ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত দেশ বরেণ্য কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘গদ্য গানে আড্ডায়’ শিরোনামের এই আয়োজন করে আইকনিক।
একুশে পদক প্রাপ্তির আনন্দে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তিতে শাকুর মজিদকে স্বংবর্ধণা দেয় অনুজ কথাসাহিত্যিকেরা। দুজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথা সাহিত্যিক ও অধ্যাপক হোসনে আরা জলি এবং কবি-অভিনেত্রী শানারেই দেবী শানু।
শুরুতেই একটি সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও শাকুর মজিদ। উপস্থিত দর্শক ও তরুণ কথাসাহিত্যিকদের একাধিক কৌতুহলের জবাব দেন তারা। পর্বটি সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় আরজে নিরব খান।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক তরুণকেই দেখি ফেসবুকে প্রচুর লেখেন। এটা আমার খুব ভালো লাগে। আবার কেউ কেউ এটাকে অসুস্থ প্রচার বলে মন্তব্য করেন। যারা এ ধরণের সমালোচনা করেন তাদের বলি, আপনারা কি বিশ হাজার ইয়াবা খেয়েছি শুনলে খুশি হতেন? এই অস্থির সময়ে কেউ সাহিত্য চর্চা করছে, এটাকেই অনুপ্রাণিত করা উচিত। সাহিত্য নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোও এক ধরণের শিল্প চর্চা।’
কথাসাহিত্যিক তার সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ দূর্ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় জীবন উপভোগ করছি। তাই যা দেখছি, যা করছি, তাই ভালো লাগছে। আইকনিকের এই আয়োজন সত্যিই মুগ্ধ করেছে আমাকে।’
কথাসাহিত্যিক রেজানুর রহমান তুলে ধরেন বর্তমান কিছু সাহিত্য সম্পাদকদের স্বজনপ্রীতির কথা। তিনি খুব আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমরা না হয় মারা যাবো। কিন্তু যে তরুণ লেখালেখির স্বপ্ন দেখছে, সে কোন পথে যাবে? ভালো লেখার চেস্টা করবে না লবি মেইনটেইন করবে? সাহিত্য সম্পাদকদের অযাচিত স্বজনপ্রীতি বন্ধ হওয়া উচিত।’ এই কথাকে করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানান অতিথি ও শ্রোতারা। কবি-কথা সাহিত্যিক মাহবুব আজীজ কথা বলেন তার সাহিত্যচর্চা নিয়ে। পড়ে শোনান স্বরচিত কবিতা।
পলাশ মাহবুব বলেন, ‘আমি মঞ্চের পেছনের মানুষ। নিভৃতে সাহিত্য চর্চা করতে পছন্দ করি।’
শুধু গুরুগম্ভীর কথা নয়, মিলনায়তন প্রায়ই হাসিতে ভরে উঠেছে সাহিত্যিকদের রসিকতায়।
এবছর বেশ কিছু সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন। আলোচনায় তিনি বলেন, ‘প্রাণ খোলা আড্ডাটা আমাদের জন্য খুব জরুরী। আরো জরুরী অধ্যবসায়।’ মাসউদ আহমাদ বলেন, ‘আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি এমন এক ব্যতিক্রমী আয়োজনে থাকতে পেরে।’
কথাশিল্পী লুৎফর হাসান স্মৃতির রোমন্থন করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি ধন্য এমন একটি মঞ্চে নিজের গদ্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়ে।’
কবি-কথা সাহিত্যিক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা তো আজকাল শুনতে ভুলে গেছি। ফেসবুকে পড়ে আছি নিজেদের বিজ্ঞাপনে। সেখান থেকে বেরিয়ে এমন একটি নির্মল আড্ডা খুবই ভালো লেগেছে । এই আয়োজন আরো বেশি হওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও কথাসাহিত্যিক তানভীর তারেক বলেন, ‘আমরা ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে একেবারে নির্জলা আড্ডা দেবার তাগিদেই এই আয়োজন করার চেষ্টা করছি, প্রতিবছর। সবার মতো আমাদেরও স্বার্থ আছে। আর সেটা হলো সম্মিলিত হয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করার প্রয়াস।’ এসময় তিনি দুই বাংলার লেখকদের নিয়ে আরো বড় পরিসরে সাহিত্য সম্মেলনের ইচ্ছার কথা জানান।
প্রশ্ন ওঠে, রম্য লেখককে শুধু ‘লেখক’ বলা হয় না কেন? সে প্রশ্নের উত্তর দেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। উত্তর পেয়ে ইকবাল খন্দকার বলেন, ‘যেহেতু সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার এভাবে উৎসাহ দিলেন তাই বইমেলাতে একাধিক বই লেখার ব্যাপারে আরো উৎসাহিত হলাম।’
গীতিকার-কথাশিল্পী ইশতিয়াক আহমেদ মজা করে বলেন, ‘বই মেলার মাসে এভাবে আড্ডায় আসলে বই বিক্রির ক্ষতি হয়। কিন্তু এই নির্মল আড্ডাটাও খুব কাজের।’ আমিরুল মোমেনীন মানিক তার গদ্য গানে মুগ্ধ করেন সকলকে।
শানারেই দেবী শানু বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব গর্ব বোধ করছি এমন আয়োজনের অংশ হতে পেরে।’ আড্ডা পর্বের শেষ দিকে হঠাৎ করেই মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই চমৎকার ফিউশন অনুষ্ঠানকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাই। আমি আমন্ত্রণ পাইনি, তবুও এই নান্দনিক কোলাহলের খবর পেয়ে ছুটে এলাম। আমরা তো এখন আড্ডা দিতেই ভুলে গেছি।’
এরপর লিমনের গিটার ও তুফানের কাহনে গান শোনান আরিফ, মানিক, লুৎফর হাসান ও তানভীর তারেক।
পুরো আয়োজনটি পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন তানভীর তারেক ও মোস্তাফিজ মিঠু। উপস্থাপনা করেছেন টুটুল জহিরুল ইসলাম।
সারাবাংলা/পিএ