বাংলা নাটকের মহাকবি: সেলিম আল দীন
১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১২:২৪
শ্রদ্ধাঞ্জলি
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন বাঙলা নাটকের গৌড়জন। আজ ১৪ জানুয়ারি তাঁর প্রয়াণ দিবস। এক যুগ আগে ক্ষণজন্ম এই শিল্পপুরুষ ২০০৮ সালে প্রয়াত হন। সেলিম আল দীন’র রচনার বিষয়, আঙ্গিক, শৈলী, ভাষা ও ব্যাপ্তিতে মহাকাব্যিক বিস্তারে ব্যাপৃত। তাঁর আখ্যানে গদ্য পদ্য হয়ে ধরা দেয়। সুর, ছন্দ, লয়, তাল চরিত্র হয়ে কথা বলে। তাই নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকে অনেকে বাংলা নাটকের মহাকবি অভিধায় আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙলা নাটকের বাঁকবদলের অন্যতম কারিগরের প্রয়াণ দিবসে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
নাটকের শিল্পপথে আগমন
বাংলাদেশের নাট্যধারায় সেলিম আল দীন এক স্বতন্ত্র পরিচয়। জন্মেছিলেন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে। তিনি ১৯৬৪ সালে সেনেরখিল মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্নাতক সম্পন্ন করেন টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। লেখালেখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। সেসময় কবিতাই ছিল তাঁর আকর্ষণ। এম-এ পড়ার দিনগুলোতে রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যচক্র-এর সঙ্গে যুক্ত হন। বন্ধু ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সালেক খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং আরো অনেকে। তাঁর রচিত ‘নীল শয়তান: তাহিতি ইত্যাদি’ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও পরের বছরে বেতারে প্রচারিত হয়। সেলিম আল দীন রচিত নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৯৭২ সালে; নাটকটি প্রযোজনায় বহুবচন, নাটকের নাম ‘সর্পবিষয়ক গল্প’। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ মঞ্চায়ন করে তাঁর লেখা ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’। পরের বছর নাট্যচক্র মঞ্চায়ন করে তাঁর লেখা ‘এক্সপ্লোসিভ ও মূল সমস্যা’। নাট্যদল বহুবচন ও নাট্যচক্র’র পর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের বাঁক পরিবর্তনের প্রয়োজনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা থিয়েটার’এর। ‘ঢাকা থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নাসির উদ্দীন ইউসুফ আর সেলিম আল দীন এই অভিন্ন হৃদয় দুই শিল্পবন্ধু প্রতিষ্ঠাতাগণের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। ‘সঙ্বাদ কার্টুন’ ‘ঢাকা থিয়েটার’ এর প্রথম মঞ্চনাটক। নাটকটি অসংখ্যবার মঞ্চস্থ হয়েছে। সেলিম আল দীনের এই নাটকটি অ্যাসবার্ড নাটকের ধাঁচে লেখা হলেও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক শ্লেষের মেজাজটাই বেশি ফুটে উঠেছে। ‘সঙ্বাদ কার্টুন’ প্রযোজনাটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তিনি বছর দুয়েক পরে লেখেন তীব্র স্যাটায়ারধর্মী নাটক ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’ (১৯৭৪-৭৫)। জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রায় কিংবদন্তি তৈরি করেছিল। তখন একে বলা হত ‘মিউজিক্যাল কমেডি’। পরে ইংরেজি শব্দ বর্জন করে সেলিম আল দীন এর নামকরণ করেছিলেন ‘মুনতাসীর’।
স্বকীয় শৈলী অন্বেষণ
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে সেলিম আল দীন’র একটি অধ্যায়ের নাম। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলা নাটককে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে সেলিম আল দীন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নাটক রচনার ক্ষেত্রে সেলিম আল দীন পাশ্চাত্য নাট্য-প্রকরণকে পাশ কাটিয়ে বাঙালির নিজস্ব নাট্যকৌশল নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রথম দিকের বেশ কয়েকটি নাটকে পাশ্চাত্যের প্রভাব রয়েছে। তবে অল্প-সময়ের মধ্যেই তিনি পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসেন। সেলিম আল দীন নাট্যচিন্তা সম্পর্কে সৈয়দ শামসুল হক ‘চাকা’ নাটকের গ্রন্থমুখে বলেছেন- ‘সেলিম অনবরত সন্ধান করে চলেন প্রকাশের নতুনতর মার্গ; নতুন, কিন্তু বাংলা ভাষার সৃষ্টিবুদ্ধি এবং হাজার বছরের ধারাবাহিকতার অন্তর্গত অবশ্যই। বাঙলায় তিনি লেখেন কারণে বাংলার মানুষের অস্তিত্ব এবং জগৎ-বোধ, যাপিত জীবনের স্বপ্ন ও যন্ত্রণা তাঁর বিষয়- তা বিশ্বের সকল মানুষেরই মানচিত্র হয়ে ওঠে বটে।’ বাঙালি সংস্কৃতি, মানুষ, প্রাণিকূল, জনজীবন ও প্রকৃতি নিজস্ব গল্পকথন কৌশলে তুলে আনেন- ‘শকুন্তলা’(১৯৭৭), ‘কিত্তনখোলা’ (১৯৮৬), ‘কেরামতমঙ্গল’ (১৯৮৮) প্রভৃতি আখ্যানে।
নাট্যবিষয়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান
সেলিম আল দীন ১৯৭৪ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তিনি বাংলা বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি নাট্যগবেষণায় নিজেকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করার সুযোগ পান। নাট্যবিষয়ে গবেষণা, রচনায় ও মঞ্চপ্রয়োগের সহযাত্রী হিসেবে সহকর্মী হিসেবে বাংলা বিভাগে পেয়ে যান অধ্যাপক আফসার আহমদকে। তাঁদের পরিকল্পনা ও নিরলস পরিশ্রমে মঞ্চনাটক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়। সেলিম আল দীন ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে প্রথম নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাটক বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণা শুরু হয়। বিশেষ করে বাংলা নাটকের ইতিহাস ও আঙ্গিতগতভাবে যে খণ্ডিতরূপ চর্চিত হচ্ছিল তিনি সেই প্রথাগত স্রোতের বিপরীতে গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের হাজার বছরের শেকড় সন্ধানী সত্য উচ্চারণ করেন নাটক লেখা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সেলিম আল দীন বাঙালির নিজস্ব নাট্যরীতি প্রতিষ্ঠার জন্য গবেষণায় গভীর মনোনিবেশ করেন। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে বর্তমানে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে নিয়মিত অধ্যয়ন ও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে নিয়মিত অধ্যয়ন ও গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছে।
বাঙলা নাটকের ইতিহাস ও আঙ্গিক বিনির্মাণ
বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানে তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন। প্রোসেনিয়াম ভিত্তিক পাশ্চাত্য নাট্যাঙ্গিকের সীমানা প্রাচীরকে ভেঙ্গে তিনি আবিষ্কার করেন বাংলা নাটকের হাজার বছরের ইতিহাস ও নাট্যরীতি। পাশ্চাত্য নাট্যশিল্পের সব বিভাজনকে অস্বীকার করে, বাঙালির হাজার বছরের নন্দনতত্ত্বের আলোকে সেলিম আল দীন প্রবর্তন করলেন ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’ নামক এক নবতর শিল্পরীতি। তাঁর নাট্যভাবনার তাত্ত্বিক বিষয়গুলো কাঠামোবদ্ধ হয়েছে এই ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্বে’। দু’শ বছরের অধিককাল ধরে প্রচলিত নাট্য ইতিহাসের ভ্রান্তিমোচন করে হাজার বছরের বাঙলা সংস্কৃতিতে নাটকের অস্তিত্ব যে বিদ্যমান ছিল তা তিনি প্রমাণ করলেন এবং প্রয়োগ ঘটালেন তাঁর নাট্যাখ্যানে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের নাট্যানুষঙ্গ দীর্ঘ গবেষণার ফসল- এসব বিষয় নিয়ে তাঁর গবেষণা অভিসন্দর্ভ ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’। এই গবেষণা অভিসন্দর্ভের জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ অভিসন্দর্ভে বাংলা নাটকের উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে বিরাজমান ভ্রান্তি সম্পর্কে স্পষ্ট অভিমত দেন এবং তিনি সফলভাবে প্রমাণ করেন যে, বাংলা নাটকের উৎপত্তি ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ান নাট্যব্যক্তিত্ব লেবেদেভ’র মাধ্যমে হয়নি। বরং বাংলা নাটকের অনুষঙ্গ নিহিত ছিল হাজার বছর পূবের্র কৃত্যমূলক পরিবেশনায়। এই গবেষণা গ্রন্থে প্রাচীন ও মধ্যযুগের অনবদ্য সৃষ্টি চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, গাজীর গান, শাস্ত্রগান, কৃত্যমূলক পাঁচালী, গীতিকার মধ্যে নাট্যমূলক উপাদানের উপস্থিতি তিনি প্রমাণ করেছেন। সেলিম আল দীন বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীদের সংস্কৃতি ও জীবনবোধ নিয়ে বিনির্মাণ করেন ‘নব্য-জাতিগত থিয়েটার’ বা ‘ঘবড় ঊঃযহরপ ঞযবধঃৎব’ নামে নতুন নাট্য আঙ্গিক। সেলিম আল দীন সংকলিত ও সম্পাদিত নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাঙলা নাট্যকোষ’ বাংলা ভাষা ও নাট্যসাহিত্যের একটি অনবদ্য কীর্তি। থিয়েটার ল্যাবরেটরিতে নিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় তিনি প্রথম সংযোজন করেন ‘গবেষণাগার নাট্য’। নাট্যশিল্পকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে তিনি ও নাট্যনির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’। সেলিম আল দীন বিভিন্ন মেয়াদে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নব-আঙ্গিক নির্মাণ
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন দ্বিতীয় ধাপের আখ্যানসমূহে আবহমান গ্রামবাংলার জীবন সংস্কৃতি অঙ্কনে সচেষ্ট হয়েছেন। মানুষ ও জীবনের নানামাত্রিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। এসময়ের তাঁর নাট্যচিন্তা মূলত শেকড়ের অনুসন্ধান। ক্রমাগত নাট্যকার এগিয়ে চলেছেন অভীষ্ট নব-আঙ্গিক নির্মাণের পথে। দ্বিতীয় পর্বের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে- শকুন্তলা, কেরামতমঙ্গল, চাকা। পরিণত সময়ের উল্লেখযোগ্য নাট্যাখ্যানগুলো হচ্ছে- চাকা, যৈবতী কন্যার মন, হরগজ, প্রাচ্য, বনপাংশুল, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল, ঊষা উৎসব ও সর্বশেষ পুত্র।
কিত্তনখোলা রচনার মধ্য দিয়ে সেলিম আল দীন বাঙালির নিজস্ব নাট্যশৈলী নির্মাণ স্বীয় ভূবন খুঁজে পান। তিনি কিত্তনখোলা নাটকে বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির সূত্রপাত করেন। এ নাটকের কাহিনীতে নানান শ্রেণিপেশার মানুষের জীবনচিত্রের সংশ্লেষ ঘটিয়েছেন। কিত্তনখোলা নাটকের কাহিনী একটি চলমান জীবনের চালচিত্র। এই নাটকের প্রায় সবগুলো চরিত্রের মধ্যেই নৃ-তাত্ত্বিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে। কিত্তনখোলা নাটকটি নিয়ে ২০০০ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। ছবিটি পরিচালনা করছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার আবু সাইয়ীদ।
কেরামতমঙ্গল সেলিম আল দীনের মহাকাব্যিক ব্যাপ্তির আখ্যান। মহাকাব্যের মতোই বিস্তার, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের মতো কেরামতমঙ্গল’র পটভূমি বিস্তৃৃত। বিস্তৃৃত পটভূমিতে গোটা বাংলাদেশই যেন ঠাঁই করে নিয়েছে। এই আখ্যানে রাজনীতিবিদ, কৃষক, মাঝি, জমিদার-প্রজা, মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার, হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান, আদিবাসী, হাজং-গারো, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের চালচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। আখ্যানের প্রধান চরিত্র কেরামত এই মহাকাব্যিক আখ্যানের একজন কথক মাত্র।
হাত হদাই রচনা করে সেলিম আল দীন বাংলা নাট্যধারায় তাঁর নিজের প্রবর্তিত কথানাট্যের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের শব্দ ‘হাত হদাই’; এর আক্ষরিক অর্থ- সাত সওদা বা সপ্তবাণিজ্য। হাত হদাই-এর মূল কাহিনী এ অঞ্চলের বৃদ্ধ নাবিক আনার ভাণ্ডারিকে ঘিরে। সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রান্তিক মানুষের জীবনসত্য ও জীবন সংগ্রামের বাস্তব আলেখ্য তুলে ধরেছেন। হাত হদাই-এর প্রেক্ষাপট নোয়াখালী অঞ্চল। নিত্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই যাদের জীবন পাড়ি দিতে হয়। এসব মানুষ একাধারে নিম্নবিত্তের এবং শোষিত শ্রেণির। এদের প্রত্যেকের রয়েছে ছোট ছোট বাসনা, আলাদা জীবন, নিজস্ব কিছু ভাবনা। এ নাটকে সেলিম আল দীন উপকূলবর্তী এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র উপস্থাপন করেছেন।
চাকা সেলিম আল দীন রচিত লোক নাট্যরীতি অবলম্বনে ‘কথানাট্য’। ‘কথানাট্য’ বাংলা নাট্যরীতিতে নতুন একটি ধারার সংযোজন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও গণতন্ত্রের বিজয় এ নাটকের প্রেক্ষাপট। নাম-পরিচয়হীন এক হতভাগ্য যুবকের লাশ এক গ্রামের উদ্দেশ্যে গরুর গাড়িতে তুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গাড়ি রওনা হয়ে যায়, কাগজে অস্পষ্টভাবে লেখা ঠিকানার উদ্দেশ্যে। গাড়ির চাকা অবিরাম ঘুরে চলে কিন্তু গারোয়ান মৃত যুবকের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারে না। গারোয়ানের এই অবিরাম পথ চলা ও মৃত যুবকের বাড়ির সন্ধান করাই চাকা নাটকের বিষয়বস্তু। বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের এই নাটক অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করেন চাকা চলচ্চিত্র।
যৈবতী কন্যার মন কথানাট্য রচনা ধারার দ্বিতীয় আখ্যানকাব্য। এ আখ্যানকাব্যে সেলিম আল দীন গদ্য ও পদ্যের অসাধারণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। দুই পৃথক সময়ের বা যুগের দুই নারীজীবনের সমান্তরাল পরিণতি এঁকেছেন নাট্যকার। কালিন্দী ও পরীর অস্তিত্ব যন্ত্রণা এবং জীবন পরিণামের মধ্যে নাট্যকার তা ফুটিয়ে তুলেছেন।
নাট্যকার সেলিম আল দীন হরগজ’র কাহিনী নির্মাণ করেছেন গ্রামবাংলার জনজীবন নিয়ে। এই নাটকের বিষয়বস্তু ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত বিধ্বস্ত একটি গ্রামের। নাট্যকার হরগজ-এর ভূমিকায় জানিয়েছেন ১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জের হরগজ গ্রামের গ্রীষ্মকালীন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও তৎপরবর্তী একদল শহুরে ত্রাণকর্মীর উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে নাট্যকাহিনী নির্মাণ করেছেন। গ্রামের এসব সাধারণ মানুষের প্রকৃতির রোষাণল থেকে রক্ষার কোনো উপায় নেই। এতটুকু সাধ্য নেই প্রকৃতির ভয়াল আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারার। প্রকৃতির বিরূপতার বিপরীতে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বকে নাট্যকার প্রতীক হিসেবে অঙ্কন করেছেন।
একটি মারমা রূপকথা মূলত সেলিম আল দীনের নিরীক্ষাধর্মী নাটক। এ নাটকে সেলিম আল দীন আরো একবার নবনাট্য নিরীক্ষা করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক মানুষ এবং তাদের সুখ-দুঃখের ইতিবৃত্ত একটি মারমা রূপকথা। বনপাংশুল সেলিম আল দীনের একটি মারমা রূপকথা নাটকের ধারাবাহিক রচনা। এ নাটকেও তিনি আদিবাসী সমাজ-জীবনের চিত্র অঙ্কন করেছেন। এ নাট্যকাহিনীতে উপস্থাপিত হয়েছে অরণ্য জনপদের এক আদিবাসী গোষ্ঠীর অজানা কথা। ‘বনপাংশুল’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ-পাঁচালি; লুপ্তপ্রায় মান্দাই বা কোচদের বাস্তব জীবন নিয়ে রচিত পাঁচালিই বনপাংশুল। মান্দাই সম্প্রদায় সাধারণ বাঙালিদের দ্বারা শোষিত-নির্যাতিত। জাতিগত ঐতিহ্য সংরক্ষণে নাট্যকার প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্বের সংকট ও বিপন্নতা মূর্ত করে তুলেছেন।
সেলিম আল দীন প্রাচ্য নাটকে বেহুলা-লখিন্দরের প্রণয়গাথা নব-আঙ্গিকে নির্মাণ করেছেন। প্রাচ্য এর কাহিনী নাট্যকার বাঙালির পরিচিত মনসামঙ্গল থেকে নিয়েছেন। এ অখ্যানে সেলিম আল দীন সমকালের প্রেক্ষাপটে কাহিনীর পুনর্নির্মাণ করেছেন। নাট্যকাহিনী শুরু হয়েছে নোলক-সয়ফরের বিয়ের ঘটনা দিয়ে। নোলক-সয়ফরের কাহিনী নাট্যকার শুধুমাত্র দু’জনের ব্যক্তিগত প্রণয়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো সমাজের মধ্যে ।
আচার্য সেলিম আল দীন তাঁর ‘নিমজ্জন’ নাট্যে অভিনব কাব্যিক অভিজ্ঞতায় পৃথিবীর গণহত্যার ইতিবৃত্ত রচনা করেছেন। প্রাচীন থেকে মধ্যযুগ ও আধুনিককালের সারাবিশ্বে ঘটে যাওয়া গণহত্যার লোমহর্ষক বয়ান তাঁর ‘নিমজ্জন’ নাটক। সেলিম আল দীন বিশ্বাস করেন নাটক বিশ্ব ভূগোলের সকল কালের সকল মানুষের জন্য। তাই দেশীয় প্রেক্ষাপট থেকে তিনি হয়ে ওঠেন আন্তর্দেশীয় এবং বিশ্ব মানবতার রূপকার। তাঁর নিমজ্জন নাটক আমাদের এমনি এক বিশ্বানুভূতির বোধে পৌঁছে দেয় যে বিশ্বমানুষের এখনই উচিৎ বিপন্ন মানবতার পাশে এসে দাঁড়ানো। এই নাটকে সভ্যতা ও মানবাত্মার ক্রন্দনের একটা বিশ্বরূপ ফুটে উঠেছে। বিশ্বভ্রমণ শেষে আগন্তুক মৃত্যুশয্যায় শায়িত বন্ধুর কাছে আসবে বলে ত্রিনদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এক ভয়ঙ্কর উদ্ভট শহরে এসে উপস্থিত হয়। আগন্তুকের বন্ধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাজনৈতিক মতবাদ দেয়ার জন্য শহরের ব্ল্যাক ডেথ স্কোয়াড অব কারাভাঁর লোকেরা তাকে প্রচণ্ড নির্যাতন করে তারপর তার মেরুদ-ে পেরেক ঠুকে দেয়। আগন্তুক ট্রেন থেকে স্টেশনে নামার পর একের পর এক ভয়ঙ্কর সব ঘটনার সম্মুখীন হন। লেখকসংঘে আমন্ত্রিত আগন্তুক পরিচিত হন হাত কেটে নেয়া এক কবির সঙ্গে। সেখানে তিনি ভাষণে বলেন কিভাবে তাকে রুয়াণ্ডায় তুতসি শিশুদের লবণমাখা সেদ্ধ কলিজা খেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারপর রাবারে তৈরী রাজনৈতিক নেতার হঠাৎ উদয় ও বিষ্ফোরণ, গান গাওয়া আট-নয় বছরের মেয়েকে ধর্ষণের পর জিভ কেটে নেয়া, মাদ্রিদের গণহত্যা, চলির কবি নেরুদার ফিন্দেমুন্দোর শোকগীতি, স্টেডিয়াম গ্যালারিতে প্রায় দেড় দুই হাজার দর্শক ক্ষুরে কেটে খুন। অবশেষে বাতিঘরের ভুল সিগন্যাল, ত্রিশ হাজার টন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টিএনটির বিস্ফোরণে ষোলো কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ু স্তরে আগুন ধরে যাওয়া শহরটির নিমজ্জন।
ধাবমান নাটকটির লেখনী সময় প্রায় দুইবছর। নাট্যকার সেলিম আল দীন এ নাটকটি ২০০৫ এ শুরু করে ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ রচনা সম্পন্ন করেন। সোমেশ্বরী নদীর পূর্বপাড়ের সাধুটিয়া গ্রামের নহবত তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর তিনবছর পর একমাত্র সন্তান রুগ্ন এসাকের দেখাশোনা করার জন্য সুবতীকে বিয়ে করে। কিন্তু এতো বছরেও সুবতী নিঃসন্তান থেকে যায়। ধৈর্য্যশীলা সুবতী সতীন পুত্র চলৎশক্তিহীন রুগ্ন এসাককে নিজ সন্তানের ন্যায় লালন পালন করে। বিয়ের সময় সুবতী তার বাবার বাড়ী থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল বকনা বাছুর নীলাম্বরীকে। দেড় বছর পর নীলাম্বরী বাচ্চা প্রসব করে। সুবতী চঞ্চলা মেয়ে মোষটার নাম রাখে হামেলা। একদিন অপরাহ্নে হামেলা নিখোঁজ হয়। হারিয়ে যায় তুরাদাহালায়। হামেলা ফিরে আসে পাহাড়ী গয়াল দ্বারা গর্ভবতী অবস্থায়। বাচ্চা প্রসবের সময় হলে তিনদিন তিনরাত ছটফট করে হামেলা। এরপর পৃথিবীর আলো হাওয়ায় বেরিয়ে আসে বাছুরটি। আনন্দে আত্মহারা হয় সুবতী, যেন নিজেই সন্তান প্রসব করেছে। নহবত মিয়া মিশমিশে কালো মোষ শাবকটির নাম রাখে সোহবার। তাদের বেদনার্ত জীবনে প্রকা- সোহবার যেন আনন্দের বান হয়ে আসে। মহিষটি সন্তানের যত্নে বেড়ে ওঠে নহবত সুবতীর ঘরে। ক্রমেক্রমে একটি বলদর্পী ষণ্ড মোষে পরিণত হয় সোহবার। নহবত সুবতী কখনও ভাবেনি যে সোহবার তাদের সন্তান নয়, নিতান্তই পশু। একরাতে পঙ্গু এসাক স্বপ্নে দেখে সোহবারকে জবাই করে তার মাংস দিয়ে গ্রামবাসীকে ভোজ দিলে তার পা ভাল হয়ে যাবে। স্বপ্নের কথা শুনে সুবতী স্তব্ধ হয়ে যায়, নিঃসন্তান সুবতী সোহবারকে জবাই এর কথা মানতে পারে না, তাই সন্তানতুল্য সোহবার এর জবাই এর স্বপ্ন আড়াল করার চেষ্টা করে। জানের ছদকা দেয়। কিন্তু এসাকের স্বপ্ন দেখার কথা গ্রামে জানাজানি হওয়ার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও নহবত সুবতী সোহরাবকে বলি দিতে সম্মত হয় আপন পুত্রের আরোগ্য লাভের নিমিত্তে। লিল্লাহর জন্য কসাইরা সোহরাবকে জবাই করতে গেলে সোহরাব ছুটে যায়। অনিবার্য মৃত্যুকে লংঘন করে ষ-বয়ার সোহরাব ছুটতে থাকে গ্রাম থেকে গ্রামে, হাটবাজার রক্তাক্ত ও লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। তার শিঙে ক্ষুরে খুন হয় এক কসাই এবং আরো অন্য একজন। মানতের ষ-বয়ারের কাছে কোনো কসাইয়ের এমন শোচনীয় হার ইতিহাসে সদা লভ্য নয়। তিনদিন পর ধাবমান সোহরাব যে গৃহ ছায়াতলে সে জন্মেছে ও বেড়ে উঠেছে সেখানেই ফিরে আসে। ধাবমান সোহরাব শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। কেননা মৃত্যু অমোঘ।
সেলিম আল দীন ২০০৬ সালে স্বর্ণবোয়াল রচনা করেন উপাখ্যান। বর্ণনাত্বক ধারার নাটকটি মাত্র বিশ দিনে রচনা সম্পন্ন করেন। স্বর্ণবোয়াল নাটকে একটি চরিত্র রূপকথা থেকে এসেছে। কিন্তু নাট্যঘটনার পরিণামে এসে সে মর্মান্তিক বান্তবতায় খুন হয়। গল্পটি মাছ নিয়ে। নিকারি পাড়ার যুবক তিরমন স্বর্ণবোয়াল শিকার করতে গিয়ে প্রাচীন শিকারীদের যে ছায়া দেখে সেটা তার হারজিতের উর্ধ্বে বিরাজিত আরেক মনোসঙ্কেত। এই নাট্যে কাহিনীর ধারাবাহিকতা নিয়ম মাফিক রীতিতে অগ্রসর হয়নি। নাট্যকার উপাখ্যানের কাহিনী বড়শিতে গাঁথা মাছটির মতো উলট পালট করেছেন। এক জীবনের সকল গহীনতা এক ব্যর্থ স্বর্ণবোয়াল শিকারের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে তিরমন।
পুত্র সেলিম আল দীনের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ রচনা। ২০০৭ সালে তিনি মাত্র সাত-আট দিনের মধ্যে এই নাটক লেখা সম্পন্ন করেন। সেলিম আল দীন তাঁর পুত্র নাটকে যমুনাপাড়ের এক মাইট্যাল দম্পতির পুত্রহারার অপঘাত বেদনাকে অপূর্ব মহিমায় প্রকাশ করেছেন। আলোচ্য পুত্র নাটকের নামকরণে যে পুত্র সন্তান তার নাম মানিক; সে আমগাছের ডালে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তাই তাকে জানাজাহীন চিরন্দ্রিায় মাটির গভীরে রেখে আসতে হয়। এই সত্য ঘটনাটি নাট্যকার সেলিম আল দীন অনন্য মহিমা আরোপে গর্ভজাত পুত্রের জন্য চিরায়ত বাংলার পিতা-মাতার অবিশ্রান্ত ভীতি ও উদ্বেগকে উপস্থাপন করেছেন সুনিপুণ বর্ণনার মাধ্যমে। কাহিনী মূলত সিরাজ ও আবছার কথোপকথনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। নাটকটিতে সিরাজের চেয়ে আবছা চরিত্রটিকে প্রধান করে নাট্যকার উপস্থাপন করেছেন।
নাট্যকার থেকে নাট্যাচার্য
সমসাময়িক বাঙলা নাট্যরচনার ধারাবাহিক বিচারে তিনি শ্রেষ্ঠ নাট্যকারদের একজন। বিষয়, আঙ্গিক, চিন্তা ও প্রকাশভঙ্গির মৌলিকত্ব এবং তীব্রতা তাঁর রচনাবলীর বৈশিষ্ট্য। বাঙলা ভাষাভাষীদের নিকট সেলিম আল দীনের নাটকগুলো শিল্পসার্থকতায় অনন্য। ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক বলয় ও শিল্পতত্ত্বের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সেলিম আল দীন একজন প্রতিবাদী নাট্যকার। জাতীয় নাট্যাঙ্গিক ও নাট্যমঞ্চের স্বরূপ আবিষ্কারে একনিষ্ঠ ছিলেন এই নাট্যগবেষক। তিনি বাঙলা নাটকের হাজার বছরের ইতিহাস বিনির্মাণ করেছেন নাট্যগবেষণার মাধ্যমে। তাঁর সৃষ্ট শিল্পরীতি ও নাট্যদর্শন বাঙলানাট্যের শিল্পভূমিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সেলিম আল দীনের নাট্যাখানের প্রেক্ষাপট মহাকাব্যিক বিশালতায় বিস্তৃত। যার অনুষঙ্গ হাজার বছরের লোকায়ত জীবন, ধর্মীয় উপাচার, প্রাচীনসাহিত্য, পুরাণ, ঐতিহ্যবাহী গান, কাব্য, নৃত্য ও শিল্পকলার জগত। শুধু মানুষ নয়, মানুষের যাপিত জীবনে যেসব বস্তু, প্রাণি ও নিসর্গ অপরিহার্য সেসবও সেলিম আল দীনের নাট্যাখানের চরিত্রের মর্যাদা পেয়েছে। সেলিম আল দীনের নাট্য আখ্যানে, মানুষ, প্রকৃতি, সমাজ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সঙ্গীত, চারুকলা, নৃত্যকলা ক্রমান্বয়ে অনায়াস বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাঁর চিন্তা, মতবাদ, তত্ত্ব আবিষ্কার, মঞ্চে প্রয়োগ, দর্শকমানস বীক্ষণ, ফলাফল, মানুষের ভালোবাসা সব নিয়েই ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন একজন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন হিসেবে। তিনি চেয়েছেন বাংলা নাটক বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে জায়গা করে নিক। নাট্যাচার্য সর্বদা চেষ্টা করেছেন বিষয় ও মঞ্চপ্রয়োগে বাংলা নাটক তার স্বীয় ঐশ্বর্য নিয়ে বিশ্বমঞ্চে যথাযথ মর্যাদার স্থান অর্জন করুক। এ প্রসঙ্গে তাঁর কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হতে শুনেছি- ‘বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে ঝংকৃত হোক বাংলা নাটকের শাশ্বত সুর’।
ড. ইসলাম শফিক: শিক্ষক ও গবেষক।