শিল্পকলায় ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব’র সমাপ্তি
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
জমজমাট আয়োজনে মধ্য দিয়ে শেষ হল ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’। জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল ২১ দিনব্যাপী এই উৎসবের।
৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২১ দিনের এই উৎসবে প্রতিদিনই ছিল জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের সাথে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টায় পরিবেশিত হয়েছে লোকনাট্য।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এই আয়োজনের শেষদিনে বিকেল ৪টা থেকে নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হয় বরগুনা, মুন্সিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত ৮টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির বিনিময়ে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য সুনামগঞ্জের ‘ধামাইল’ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাপনী দিনে বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে সমাপনী আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত এবং এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিল্পীদের পরিবেশনায় কোলাজ গান।
বরগুনা জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং। এরপর একেএকে পরিবেশিত হয় সমবেত গান ও আলকাপ গম্ভীরা মিউজিকের সাথে সমবেত নৃত্য। যন্ত্রে সোহিনী রাগ পরিবেশন করে শিল্পী বাবুল, কালিদাস, আরিফুর রহমান, শিপন, বিপুল, শুভ ও শামিম হোসেন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী মিলন চন্দ্র কর্মকার।
মুন্সিগঞ্জ জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং। এরপর একেএকে পরিবেশিত হয় সমবেত গান ও সমবেত নৃত্য। যন্ত্রে সুর তোলেন মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী শিশির রহমান এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী শিতল।
খাগড়াছড়ি জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং। এরপর একেএকে পরিবেশিত হয় সমবেত গান ও সমবেত নৃত্য। যন্ত্রে চট্টগ্রামের পাহাড়ী গানের সুর তোলেন শিল্পী গৌতম মনি চাকমা, প্রেমেন্দু চাকমা, মঙ্গল কান্তি চাকমা, রত্ন সেন চাকমা, ডেবিট চাকমা, মান্তি প্রিয় চাকমা, শ্যামল চৌধুরী, এস এস শ্রাবন ও রাকেশ দে। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের কন্ঠশিল্পী শাইলু শাহ ও অনুশ্রী চাকমা এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী শাফিন আরমান।
চট্টগ্রাম জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং। এরপর একেএকে পরিবেশিত হয় সমবেত গান ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কথায় সমবেত নৃত্য। এছাড়াও যন্ত্রসঙ্গীত এবং জাতীয় পর্যায়ের ও উপজেলা পর্যায়ের কন্ঠশিল্পীদের পরিবেশনায় একক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত ৮টায় দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চস্থ হয় সজল কান্তি সরকারের রচনা ও গৌতম কর তপন’র নির্দেশনায় এবং একতা নাট্য সংস্থার পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ধামাইল পালা ‘রাই কিশোরী’। যার সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সোহেল রানা ও কন্ঠশিল্পী ছিলেন ফারজানা আক্তার আশা।
দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে পরিচালিত হয়েছে এই শিল্পযজ্ঞ। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা।