১২তম প্রদর্শনীতে তাড়ুয়া’র ‘লেট মি আউট’

তাড়ুয়া- ঢাকার মঞ্চে সাম্প্রতিক সময়ের নতুন ও বেশ আলোচিত একটি নাট্যদল। প্রযোজনা ভিত্তিক এই নাট্যদলটি একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম। নিজেদের আরাধনা একটাই- ‘নাটকের অবাধ বিকাশ ও বিস্তৃতি’। তাই দল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য- ‘বাংলাদেশের নাট্যচর্চার বাস্তবতায় প্রফেশনাল থিয়েটারের স্বপ্ন এখনও দূর-স্বপ্ন। তবুও লক্ষ্য সেই দূরের পথ। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোই এখনো এদেশের নাট্যচর্চার চালিকা শক্তি। সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দায়যুক্ত চিন্তা এই চর্চাকে অর্থপূর্ণ করে বৈকি। এমন অসংখ্য বিক্ষিপ্ত বোধের একত্রিকরণই হয়তো- তাড়ুয়া’।

এই নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা ‘লেট মি আউট’। যার নাট্যকার রুনা কাঞ্চন ও নির্দেশক বাকার বকুল। উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় গেলো ১৭ এপ্রিল। দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগানো এই নাটকটির এ পর্যন্ত ১১টি প্রদর্শনী হয়েছে। এবার ১২তম প্রদর্শনীর হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।

‘লেট মি আউট’ নাটকটি ১৯২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে নয় বছরের একটি ছেলের হারিয়ে যাওয়া এবং ছেলেকে খুঁজে পেতে তার মায়ের সংগ্রামের সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

১৯২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। যাদের রয়েছে স্পেশাল ফোর্স ‘গান স্কোয়াড’। এমন এক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিন কলিন্স নামে এক মায়ের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নাটকের গল্প। নয় বছরের ছেলে ওয়াল্টার কলিন্সকে হারিয়ে ক্রিস্টিন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দারস্থ হয়। ক্রিস্টিন কলিন্স ফিরে পেতে চায় তার প্রকৃত সন্তান। কিন্তু প্রশাসনিক সিস্টেমের জটিলতায় অসহায় হয়ে পরে ক্রিস্টিন। এদিকে বিচার বহির্ভূত হত্যার ভয়াবহতায় মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে থাকা এক পুলিশ অফিসার আত্মদ্বন্দ্বে ভোগে। লস অ্যাঞ্জেলেস-এর নাগরিক জীবন ক্রমেই ভয়াবহ ইয়য়ে ওঠে। শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার ফাদার মিসেস ক্রিস্টিন কলিন্স’র পাশে দাঁড়ায়।

নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক বাকার বকুল বললেন, ‘সময়কে আততায়ী করে তোলা সিস্টেমের ছাঁচে গড়ে উঠি আমরা। নির্বোধ ঝুকিহীন জীবন যাপনের প্রয়োজনে হাজারো সরল যুক্তি আমাদের সচেতন চর্চা। ‘লেট মি আউট’ একটি আর্তচিৎকার। সে চিৎকার সমাজ বাস্তবতার কংক্রিটে আঘাত করে কিনা জানা নেই, তবে সন্তান হারানো এক মায়ের স্বর-নালীর শিরাতে রক্ত জমে। রাষ্ট্রীয় বিচারিক কিংবা প্রশাসনিক কাঠামো জনবান্ধব না হয়ে যখন হয়ে ওঠে ক্ষমতাবানের অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহার্য শক্তি, তখন নির্দেশক হিসাবে ‘লেট মি আউট’ নাটকটি আমাকে ভাবিত করে। ১৯২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনাটি ইতিহাস হলেও অতীত হতে পারেনি। বর্তমানে দাঁড়ানো পায়ের নীচের মাটিতে একই কম্পন অনুভূত হয়। উপযুক্ত ভাবনাগুলোই নাট্য নির্মাণ বা নির্দেশনার প্রধান প্রণোদনা।’

‘লেট মি আউট’ নাটকটিতে মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনায় আসলাম অরণ্য, সঙ্গীতে রবিউল ইসলাম শশী ও ইসমাইল পাটোয়ারি, কোরিওগ্রাফি ফরহাদ আহমেদ শামীম, পোষাকে শাহনাজ জাহান এবং সহ-নির্দেশনা ও সার্বিক সমন্বয়ে ইসতিয়াক হোসাইন।

তাড়ুয়া বাকার বকুল রুনা কাঞ্চন লেট মি আউট