Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণ্ডি ভেঙ্গেছে ‘গণ্ডি’


৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৩৫

‘গণ্ডি’ নিয়ে কোনো রাখঢাক ছিল না! নির্মাতা আগেই জানিয়েছিলেন, তার হাতে একটা অসাধারণ গল্প আছে, সে গল্পটি দিয়ে তিনি একটি সিনেমা বানাতে চান। যেমন চাওয়া তেমন কাজ। গল্পটা হাতে ছিল। সিনেমা বানানোর প্রগাঢ় ইচ্ছাশক্তি ছিল। পাত্র-পাত্রীও এমন গল্পে সায় দিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। ফলে ‘গণ্ডি’ তৈরি হয়ে গেল। আর বলাই বাহুল্য, একটি সিনেমা গণ্ডি, একটি গল্প গণ্ডিকে অতিক্রম করে গেল।

এই অতিক্রম করাটা কীভাবে? সেটি প্রশ্ন হিসেবে সাদামাটা হলেও উত্তরটা জটিল হতে পারত। তবে উত্তরটাও সাদামাটাসিনেমাটি তৈরিতে এর নির্মাতা, নির্মাণকারী কলাকুশলীদের দারুণ এক পারঙ্গমতার প্রকাশ দেখা গেছে। সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন, বিশেষ করে প্রধান পাত্র-পাত্রী, তাদের অভিনয় যে ভালো হবে সে কথা আর নতুন করে বলার ধৃষ্টতা সম্ভবত ভূ-গোলকে একজন লিখিয়ের পক্ষেও দেখানো উচিত হবে না। তবে একটি কথা বলতেই হবে, জুটিটি যিনি নির্বাচন করেছেন, মূল স্যালুটটি তিনিই পাবার যোগ্য।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন, ওপার বাংলার সব্যসাচী আর এপার বাংলার সূবর্ণাই কি একমাত্র চয়েজ? কিংবা এ-ও প্রশ্ন হতে পারে, সব্যসাচীর সঙ্গে কি সুবর্ণা ছাড়া আর কেউ পারতেন না? আবার উল্টো করে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে তো আরও অনেকে অভিনয় করে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন, তারা কি কেউ থাকতে পারতেন না? সর্বোপরি দু’জন পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে দেশের গণ্ডিই কেনো ছাড়িয়ে যেতে হলো নির্মাতাকে?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে বোধকরি প্রশ্নকারীকে (যদি কেউ আদৌ করে থাকেন বা করতে চান) ছবিটি দেখে নিতে হবে। তাহলে তারা অন্তত বুঝে নেবেন, ‘গণ্ডি’র যে গল্প, চরিত্রের গভীরতা, ব্যক্তিত্বের ব্যবহার, আর চরিত্রের মাঝে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে গড়িয়ে নেওয়া যেসব মেসেজ, সঙ্গে এক-আধটু সেন্স অব হিউমারের যে কার্যকর প্রয়োগ এসব কিছুর জন্য নির্মাতা হয়তো ঝুঁকিটি নিতে চাননি। ফলে তার ঈগলচোখ খুঁজে নিয়েছেন কাঁটাতারের বেড়ার এপার আর ওপারের দুই পাত্র-পাত্রীকে।

বিজ্ঞাপন

‘গণ্ডি’ কিন্তু গণ্ডি ভাঙ্গারই গল্প। গণ্ডি বলতে নির্মাতা যে কোনোভাবেই ভৌগলিক গণ্ডিকে বোঝাননি, তা মেনে নিয়েই বলছিএই সিনেমাটি কাঁটাতারের ওপার থেকে আসা বা কাঁটাতারের ওপারে যাওয়া এই দুই গণ্ডিই ভাঙার নমুনাও বটে। তবে ছকে ফেলে, কিংবা ছাঁচিকরণ ভেবে যারা এই গল্পটির নির্মাণ দেখতে চাইবেন, তারা ভুল করবেন।

সিনেম্যাটোগ্রাফি খুব একটা বুঝি না, ফলে ও নিয়ে কথা বলতে চাই না। সিনেমা নির্মাণে কোনো অংশে এর নির্মাতা সবুজকে বিচ্ছিন্ন করেননি। সেটা চোখে ধরেছে। জানি কংক্রিটের ঢাকা নগরীতে কেবল সবুজের মাঝে দৃশ্যায়ন বাস্তবতা থেকে দূরে, আর কিছুটা আরোপিতও বটে। কিন্তু এই সুন্দরটাই পুরো সিনেমাজুড়ে আপনার চোখকে প্রশান্তিতে রেখেছে। পারিপার্শ্বিকতা যখন আপনাকে স্বস্তিতে রাখে, তখন মূল গল্পটা উপভোগ করা যায়, কিংবা বলা চলে অনুধাবন করা যায়। নির্মাতা হয়তো অতি সতর্কতায় সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন এবং সেটি পেরেছেনও।

আর সিনেমা বলতে ওই যে, সাসপেন্স, রোমান্স, আর সংঘাতের ছড়াছড়ি চলে। রহস্যে ঘেরা থাকে দৃশ্যর পর দৃশ্য। এসব এই সিনেমায় নেই। ফলে এটি সত্যিকারের একটি উপভোগ্য ও বোধগম্য চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে।

এখানে গল্পটাই মূল। সেটাই অতি সূক্ষ সূতোয় বেঁধে দর্শককে সিনেমার শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আর পাত্র-পাত্রীর অতিঅভিনয়হীনতাই এর সেরা দিক। তা হোক সে শিশু চরিত্রের ছোট্ট মেয়েটি কিংবা বৃদ্ধ কাজের লোকটি কিংবা পার্কের চা-ওয়ালা মেয়েটি।

এই গল্পটা হাতে পেলে যে কেউ যেমন এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলবে, তেমনি এ থেকে বানানো সিনেমাটিও তারা এক নিঃশ্বাসে দেখেও ফেলবে এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শেষ কথাটি বলতে চাই, গণ্ডি ভাঙ্গার গল্পটি দারুণভাবেই তুলে ধরতে পেরেছে ‘গণ্ডি’।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্টার সিনেপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার শো হয়ে গেল। শো শেষে দর্শকদের মুখে মুখে সে কথাই শোনা গেল। অনেকেই বললেন, গল্পটা দারুণ, আর এর মধ্য দিয়ে দিতে চাওয়া বার্তাগুলোও হয়েছে স্পষ্ট। একজন সিনেমাওয়ালার জন্য সেটাই বুঝি সবচেয়ে বড় কাজ। যা খুব দারুণভাবেই করতে পেরেছেন নির্মাতা ফখরুল আরেফিন খান। গড়াইয়ের গড়া গণ্ডি সত্যিই ভালো হয়েছে।

গণ্ডি পেরোবেই ‘গণ্ডি’!

গণ্ডি ফাকরুল আরেফিন খান মাহমুদ মেনন সব্যসাচী চক্রবর্তী সুবর্ণা মুস্তাফা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর