Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় নাট্যোৎসব: স্টুডিও থিয়েটার হলে থিয়েটারের ‘মুক্তি’


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:০০

‘জঙ্গি-অবক্ষয়-দুর্নীতি, মানবে না এ সংস্কৃতি’—এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে চার শতাধিক নাট্য সংগঠনের অংশগ্রহণে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০’। দেশের ৬৪ জেলায় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে এই নাট্যোৎসবের। চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আজ শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়িত হচ্ছে থিয়েটার’র’র আলোচিত নাটক ‘মুক্তি’। লী ব্লেসিংয়ের রচনা থেকে মিজারুল কায়েসের ভাবানুবাদে ‘মুক্তি’ নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা মজুমদার।

লী ব্লেসিং সমকালীন মার্কিন নাট্যজগতের অন্যতম শক্তিমান নাট্যকার। উত্তরাধুনিকতার বহুমাত্রিক সূত্রগুলোকে ব্লেসিং সহজাতভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। অস্তিত্বের সংকটকে সমকালীন প্রাবল্য আর ঘটমানতার তীব্রতা দিয়ে তিনি উপস্থাপন করেন। মানুষের বিচিত্র প্রবণতা, শক্তি এবং দুর্বলতা তার নাটকে মূর্তমান। চরিত্রগুলো একঘেয়ে নয়; প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। তার প্রধান নাটকের মধ্যে রয়েছে Independence, A walk in the woods, Two Rooms আর Hamlet উপাখ্যান ভেঙে Hamlet-উত্তর Denmark নিয়ে রচিত Fortinbras। ব্লেসিংয়ের নাটক একাধিক নাট্যবিষয়ক পুরস্কার লাভ করেছে। তাছাড়াও তিনি মনোনীত হয়েছেন Tony ও Olivier পদক এবং Pulitzer পুরস্কারের জন্য।

‘Independence’ ব্লেসিংয়ের শক্তিশালী নাটকের অন্যতম। নাটকের আখ্যান মার্কিন দেশের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর Independence -এ শুরু ও শেষ। চারটি নারী চরিত্রসর্বস্ব এই নাটক— মা ও তার তিন কন্যা। এই চার চরিত্রের Psyche উন্মোচিত হয়— একরকম অস্বস্তিকর কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক কিছুটা অদ্ভুত কৌতুকপূর্ণ উপস্থাপনায়। বড় মেয়ে মার সঙ্গে থাকে না; একাকী বাস করে অন্য শহরে। মানসিকভাবে কিছুটা অপ্রকৃতস্থ তার মা ও ছোট দুই বোনকে দেখবার জন্য চার বছর পর এই বোনের বাড়ি ফেরা। মূল নাটকে দ্বিতীয় বোন অন্তঃসত্ত্বা— তিনি অবিবাহিত মা হওয়ার পথে; অন্যজন কৈরোত্তীর্ণ এক বিদ্রোহী। নাটকের নাম তাদের এই শহরের নামে রাখা। আবার আক্ষরিকভাবে Independence শব্দটির দ্যোতনা প্রতিটি চরিত্রের মুক্তিপিপাসারও ইঙ্গিত করে— একজনের মুক্তি স্থানিক গণ্ডি পেরিয়ে, আরেকজনের সংস্কার ছাপিয়ে, অন্যজনের মুক্তি নিজস্ব সক্রিয়তার স্বীকৃতি সন্ধানে। আর মায়ের বেলায় নিজের পুরো জীবনের ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতিদান প্রাপ্তির একগুঁয়েমিতে।

এমনি গল্পে আবৃত হয়েছে দেশের প্রথম সারির নাটকের দল থিয়েটার-এর আলোচিত নাটক ‘মুক্তি’। যেকোনো নাটক, বিশেষ করে মঞ্চায়নের জন্য লেখা নাটক ভাষান্তর করতে গেলে Culture Sensitive অনুষঙ্গ এবং পরিপ্রেক্ষিতগুলো রূপান্তর করবার প্রয়োজন হয়; সেটাও মূল রচনার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই। এই নাটকের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। সে কারণেই এই প্রযোজনা লী ব্লেসিংয়ের অনুবাদ নয়, বরং বাংলা ভাবানুবাদ। চরিত্রগুলোর জীবনধারা ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত আমাদের বাস্তবতার আদলে সাজানো হয়েছে। মূল নাটকে যেহেতু ঘটনার স্থানিক পরিমণ্ডল Independence নামক শহর, তাই প্রাথমিকভাবে বাংলা নামকরণ সাব্যস্ত হয়েছিলো মুক্তিনগর। তবে নগর শব্দটি যুক্ত করলে মূল নাটকের দ্ব্যর্থতা হারিয়ে যায়। তাই স্থির হলো রূপান্তরিত নাটকের নাম হবে ‘মুক্তি’— মনের গভীরের সেই আরাধ্য গন্তব্য।

এই নাটকের মজাটা হলো এর গাঁথুনিতে এবং এর গল্প উপস্থাপন রীতিতে। ব্লেসিং দর্শককে ক্রমাগত টেনে নিয়ে আসেন সহজ কৌশলে। পুরো নাটকে রয়েছে এক প্রবল প্রবহমানতা, যা একদম শেষ অঙ্কের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এই প্রবহমানতায় অন্তর্নিহিত রয়েছে হাসি-কান্না, ভয়-ভীতি, বিস্ময়, প্রত্যয় এবং আরও অনেক বিচিত্র মানব অনুভূতির মিশ্রণ।

নাটকটিতে ‘মা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার। নাটকের মূল চরিত্র এটি। বাকি তিন নারীর মধ্যে রজনী চরিত্রটি করেছেন তামান্না ইসলাম, দামিনী চরিত্র তানজুম আরা পল্লী ও সোহিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানভীন সুইটি।

পরিশেষে বলা প্রয়োজন, কেন এই নাটকটি আমাদের মঞ্চে মঞ্চায়িত করা হচ্ছে, অর্থাৎ এর প্রাসঙ্গিকতা কী। পশ্চিমা দুনিয়ায় মানুষের একাকীত্বের সমস্যা যেন আমাদেরও খুব কাছে চলে এসেছে। এখনই সজাগ না হলে আমাদের যে পারিবারিক ঐতিহ্য তা অচিরেই ভেঙে পড়বে, যা কোনোভাবেই আমাদের কারুরই কাম্য নয়। তাই ভাববার সময় এসেছে— যে মুক্তি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে, একাকী করে, নিঃসঙ্গ করে তোলে, সেটা কি আসলেই মুক্তি?

জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০ তানজুম আরা পল্লী তানভীন সুইটি তামান্না ইসলাম ত্রপা মজুমদার থিয়েটার থিয়েটার’র ‘মুক্তি’ ফেরদৌসী মজুমদার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর