শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রুচিশীল, সংস্কৃতিমনস্ক ও মানবিক প্রজন্ম গড়ে তোলা ও কয়েক প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে পারস্পারিক মেলবন্ধন গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজিত হতে যাচ্ছে দেশের শিল্পকলার বিশাল আয়োজন ‘আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ২০২০ নীলফামারী’।
২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনব্যাপী এই আয়োজনটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে দেশের উত্তরের জনপদ প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত জেলা নীলফামারীর নীলসাগর। উৎসবের এবারের স্লোগান ‘প্রকৃতিই জীবন, সুন্দর জীবনের জন্য শিল্প’।
‘আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ২০২০ নীলফামারী’র আয়োজক ‘চারুকলা উৎসব উদযাপন পরিষদ’র সংবাদ সম্মেলন
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উৎসবে দেশের বরেণ্য ও তরুণ শিল্পীবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানি ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৫ জন স্বনামধন্য শিল্পী অংশ নেবেন। তাদের সান্নিধ্যে ও সহযোগিতায় নীলফামারীর বিভিন্ন স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মাণের সুযোগ পাবে।
চারুকলা উৎসবের এই আয়োজনের অংশ আর্ট ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায়। উদ্বোধন করবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এই আয়োজন সম্পর্কে আয়োজক চারুকলা উৎসব উদযাপন পরিষদের কিউরেটর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ জানালেন, ‘সারাদেশ থেকে আমরা শিল্পীদের এখানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের মধ্যে বরেণ্য ও বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীরাও রয়েছেন। তাদের মতো এত বড় মাপের শিল্পীদের একসঙ্গে এক আয়োজনে নিয়ে যাওয়া অনেক বিরল একটা ঘটনা। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বরাও রয়েছেন। এছাড়াও এই আয়োজনে সারাদেশ থেকে প্রায় একশ জন নবীন শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। আমরা মনে করি যে শুধু ছবি আঁকাটাই শিল্পীদের জীবনের একমাত্র অংশ নয়, প্রতিটি মুহূর্তই আসলে শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাঁচা উচিত। এ কারণে এই ক্যাম্পে আমরা সবাই একসঙ্গেই থাকি। শিল্প ও সংস্কৃতির সব কাজই আমরা একসঙ্গে করি।’
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্প। ছবি- সংগৃহীত
তিনি আরও বললেন, ‘এই ক্যাম্পে আমরা দুইশ শিশু শিল্পীকেও আমাদের সঙ্গে রাখব। তারাও আমাদের সঙ্গে ছবি আঁকবে এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে। এজন্য আমরা নীলফামারীর বিভিন্ন স্কুল থেকেই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দুইশ ছেলেমেয়েকে নিয়েছি।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এই পুরো আয়োজনটি তারই সহযোগিতায় আমরা করছি। আমরা আমাদের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নীলফামারীর জনগণ তথা অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মনের গভীরে প্রকৃতি ও শিল্পের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা জন্মানোর মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশের পক্ষে দাঁড়াতে চাই। আয়োজনের উদ্দেশ্য বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমাদের প্রত্যাশা সকলের সহযোগিতা নিয়েই আমরা এই আয়োজন সফল করতে পারব।’
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্প। ছবি- সংগৃহীত
এই আয়োজনে বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পীদের মধ্য থেকে অংশ নিচ্ছেন— রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, সৈয়দ আবুল বারাক আলভি, ফরিদা জামান, রনজিত দাশ, আফজাল হোসাইন, মোহাম্মদ ইউনুস, জামালউদ্দিন আহমেদ, মোস্তাফিজুল হক, রোকেয়া সুলতানা, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মুস্তফা খালিদ পলাশ, নিসার হুসাইন, শেখ আফজাল হোসাইন, মুনিরুজ্জামান, শিশির ভট্টাচার্য, মো. মাকসুদুর রহমান, মোহাম্মদ ইকবাল, শামিম সুবরানা, আনিসুজ্জামান আনিস, প্রেমা নাযিয়া আন্দালিব, তরুন ঘোষ, মো. আব্দুল মোমেন, রেজা আসাদ আল হুদা অনুপম, সুশান্ত কুমার অধিকারী, আশরাফুল হাসান, অনুকূল মজুমদার, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, বিশ্বজিত গোস্বামী, চৌধুরী গোলাম মুজতাবা ও সাদিক সৌরভ।
উৎসবের প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে নীলফামারীর নীলসাগরে ২৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) এবং দ্বিতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ’র জয়নুল গ্যালারিতে আগামী ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল।
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ২০১৯ সালে গাজিপুরে অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্পের ছবি- সংগৃহীত