পিংক ফ্লয়েডের রজার পড়লেন জামিয়া শিক্ষার্থী আজিজের কবিতা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:১৪
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় প্রোগ্রেসিভ রক ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গিটারিস্ট রজার ওয়াটার্স পড়ে শুনিয়েছেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমির আজিজের কবিতা। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তি চেয়ে লন্ডনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি হিন্দি ভাষায় রচিত ‘সাব ইয়াদ রাখা যায়েগা’ কবিতাটির ইংরেজি ভাবানুবাদ উপস্থিত জনতাকে পড়ে শোনান। খবর হিন্দুস্থান টাইমস।
এর আগে, আয়োজনের শুরুতেই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রতি যে অবিচার চলছে, সে বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেন রজার ওয়াটার্স। এরপর তিনি দিল্লির জামিয়া মিলিয় ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কবি আমির আজিজের কবিতার কথা উল্লেখ করেন।
রজার বলেন, অ্যাসাঞ্জ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর অন্ধকারচ্ছন্ন নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রগতির আলো পৌঁছে দিয়েছেন। অ্যাসাঞ্জ প্রশাসনিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার ব্যাপারগুলো জনসম্মুখে এনে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন। তাই আজ তার মুক্তির দাবিতে আমরা লন্ডনে একত্রিত হয়েছি।
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে চলমান ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা আমির আজিজের ‘সাব ইয়াদ রাখা যায়েগা’ কবিতাটি এরপর ধ্বনিত হয় পিংক ফ্লয়েডের এই ব্যাক ভোকালের কণ্ঠে। কবিতাটির বাংলা ভাবানুবাদ প্রচেষ্টা এরকম—
মনে থাকবে, সব মনে থাকবে, মনে তুলে রাখা থাকবে।
শোষকের আঘাত আর বুলেটের মুখে
রাস্তায় আমাদের যারা মরে গেছে,
তাদের কথা ভেবে হৃদয় হয়তো বরবাদ হয়ে যাবে,
তবুও মনে থাকবে, সব মনে থাকবে, মনে তুলে রাখা থাকবে।
আমরা আগেই বলেছিলাম,
শোষক সহিহ না লিখে ভুল লিখবে।
শোষকের সেই ভুল শোধরাতে আমাদের তাজা রক্ত ঝরবে,
তবে সত্য প্রকাশিতই হবে।
সে কথা মনে থাকবে, সব মনে থাকবে, মনে তুলে রাখা থাকবে।
শোষক হয়তো টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট বন্ধ করবে,
আঁধার রাতে শহরের সবাইকে নজরবন্দি করবে,
আমার ঘরে আমাকেই শাসাতে হয়তো কেউ হাতুড়ি হাতে ঢুকে পড়বে।
তবু মনে থাকবে, সবকিছুই মনে থাকবে, মনে তুলে রাখা থাকবে।
দিনে শোষকের মিষ্টি কথা—
সব ঠিক আছে, সবকিছু ঠিক আছে
আর রাত নামলেই হামলে পড়া রাস্তার অধিকার চাওয়া মানুষের ওপর
হামলাকারী সাজানোর চেষ্টাও তাদেরই।
আমরা এর কিছুই ভুলব না।
সব মনে থাকবে, মনে তুলে রাখা থাকবে।
শোষকেরা যখন বিভেদের নীল নকশা ছড়িয়ে দেবে চারিধারে
আমরা ছড়িয়ে দেবো আমাদের সংহতি বার্তা।
লোকে মনে রাখবে শোষকের কাজ-কাম আর আমাদের নাম।
তারা বলবে— ওরা ছিল, যাদের প্রতিজ্ঞা ছিল ইস্পাতসম,
হাতুড়ির আঘাতও তাদের টলাতে পারেনি।
তাদের চেতনা কিনে নিতে পারেনি ইজারাদারদের টাকা।
ওরা টিকে ছিল ঝড়ে-ঝাপটায়, সব লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর—
শেষতক।
ওদের মৃত্যু সংবাদ দিকেদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল
কিন্তু তারপরও ওরা বেঁচে ছিল।
লোকে মনে রাখবে—
আমাদের ভাঙা গলার স্বর আর কাটা পায়ের আওয়াজ।
শোষকেরা রাত লিখলে আমরা চাঁদ লিখব,
শোষকেরা যতই জেলে পুরবে, আমরা মুক্তির ফাঁদ বুনব,
শোষকেরা এফআইএর লেখালে আমরা তৈয়ার লিখে রাখব।
শোষকেরা যতবার কতল করবে আমাদের—
আমরা প্রেত হয়ে ফিরে আসব,
আমাকে হত্যার সব প্রমাণ লিখে রাখব।
শোষকেরা আদালতকে দিয়ে চুটকি লেখাবে,
আর আমরা দেয়ালে দেয়ালে লিখে দেবো— ইনসাফ।
বধিরেরাও শুনতে পাবে আমাদের আওয়াজ
অন্ধরাও স্পষ্ট দেখবে আমাদের লেখা।
শোষকেরা কালো পদ্ম নিয়ে এলে—
আমরা লাল গোলাপ হাতে এগিয়ে যাব।
শোষক জমিনে জুলুম লিখলে
আমরা আসমানজুড়ে লিখে রাখব— ইনকিলাব।
আমির আজিজ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ পিঙ্ক ফ্লয়েড রজার ওয়াটার্স সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)