সালটা ১৯৪৮। তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে জন্মগ্র্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র জগতের গুণী নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ৭২ বছরে পা রাখলেও আজ তার ১৮ বছর। ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখের দুর্লভ এই দিনে জন্মগ্রহণ করায় প্রতি চার বছর অন্তর-অন্তর আসে তার জন্মদিন। সে হিসাবে তাকে ঘিরে চলছে ১৮ তম জন্মোৎসব।
মামুনুর রশীদের জন্মদিনকে ঘিরে চলছে ছয় দিনের নানা আয়োজন। গেলো বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বর্ণিল আয়োজনে মাদলের বাজনার সঙ্গে মামুনুর রশীদের জন্মদিনের আয়োজনের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক হায়াত মামুদ। আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসবে রয়েছে মামুনুর রশীদ রচিত পাঁচটি নাটকের মঞ্চায়ন এবং সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী, গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সংবর্ধনা ও থিয়েটার আড্ডা।
আজ শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলার নাট্যশালায় মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় আরণ্যক নাট্যদলের নতুন প্রযোজনা ‘ফেসবুক’-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। ১ মার্চ হবে একই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী। ২ মার্চ মঞ্চায়িত হবে তার রচনা ও ফয়েজ জহিরের নির্দেশনায় বাঙলা থিয়েটারের প্রযোজনা ‘চে’র সাইকেল’। ৩ মার্চ জাতীয় মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় ‘সংক্রান্তি’ নাটকের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে ছয় দিনের উৎসব।
জন্মদিন নিয়ে মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘চার বছর পর-পর জন্মদিন আসে আমার জীবনে। তিন বছর জন্মদিনের আনন্দ না পাওয়ার যে আক্ষেপ সেটি অনন্য হয়ে আসে যখন জন্মদিন পাই। আপনাদের এত ভালোবাসার যোগ্য কি না, আমি জানি না। দোয়া করবেন, সবসময় যেন আপনাদের এই ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে যেতে পারি।’
২০১২ সালে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন, যার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। নাট্যশিল্পের প্রতি তার প্রকৃত ভালোবাসা শুরু হয় টাঙ্গাইলে তার নিজ গ্রামে যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় পরিচয়ের সূত্র ধরে। তার যাত্রার অভিনয় অভিজ্ঞতা নাট্য-ভাবনাকে খুবই প্রভাবিত করেছিলো।
১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি তার প্রথম রচিত নাটক ‘পশ্চিমের সিঁড়ি’ কলকাতার রবীন্দ্র-সদনে মঞ্চায়নের চেষ্টা করেন; কিন্তু তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতা অর্জন করায় নাটকটি আর তখন মঞ্চায়িত হয়নি।
১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে তিনি তৈরি করেন তার আরণ্যক নাট্যদল। দলটি নিয়ে এখনো সরব রয়েছেন তিনি।