একটা সময় শুধু মঞ্চেই কাজ করবো: চঞ্চল চৌধুরী
২ মার্চ ২০২০ ১৪:২০
চঞ্চল চৌধুরী- একাধারে একজন অভিনেতা, মডেল, শিক্ষক ও গায়ক। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- সব মাধ্যমেই সফল একজন মানুষ। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে দু’বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী চঞ্চল চৌধুরী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, অভিনয়, গান, ছবি আঁকাতেও সমান পারদর্শী।
অভিনয় জীবন শুরু চারুকলার ছাত্র থাকাকালীন দেশের প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ‘আরণ্যক’র সাথে যুক্ত হয়ে। নাট্যজন মামুনুর রশীদ হলেন তার নাট্যগুরু।
২৯ ফেব্রুয়ারি ছিল নাট্যজন মামুনুর রশীদ’র জন্মদিন। এ উপলক্ষে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত আরণ্যক নাট্যদল আয়োজন করে ৬ দিনব্যাপী ‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’।
সোমবার (২ মার্চ) আয়োজনের পঞ্চম দিনে মঞ্চায়িত হচ্ছে বাঙলা থিয়েটারের আলোচিত নাটক ‘‘চে’র সাইকেল’’। নাট্যজন মামুনুর রশীদের রচনা ও ফয়েজ জহিরের নির্দেশনায় এই নাটকের ছয়টি চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। প্রায় ৩ বছর পর আবার মঞ্চে তিনি। এই নিয়ে তার অনুভূতি শেয়ার করলেন সারাবাংলা’র স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট আশীষ সেনগুপ্ত’র সঙ্গে …
• প্রসঙ্গঃ মামুনুর রশীদ —
২৯ ফেব্রুয়ারি ছিল আমার নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের জন্মদিন। আর সেদিন মামুন ভাইয়ের জন্মদিন হওয়ার কারনে আমরা উদযাপনের জন্য চার বছর পরপর এই দিনটি পাই। সেদিন অনেক প্রিয় মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন মামুন ভাই। অভিনেতা হিসেবে আমার জন্ম হয়েছে মামুন ভাইয়ের হাত ধরে। অভিনেতা হিসেবে আমার যা কিছু অর্জন তার সবচেয়ে বড় অংশীদার মামুন ভাই, আর আমার নাট্যদল আরণ্যক। সেই সুত্রে মামুন ভাই আমার দ্বিতীয় পিতা আর আরণ্যক আমার পরিবার।
• প্রসঙ্গঃ চে’র সাইকেল —
চে’র সাইকেল অনেক আগের প্রোডাকশন। দেশ এবং বিদেশ মিলিয়ে প্রচুর প্রদর্শনী হয়েছে। শুরুর দিকে নতুন একটা প্রোডাকশানের একটানা এক-দেড়শ শো হয়ে যাওয়ার পর একটা বিরতি থাকে। এক্ষেত্রে যেটা হলো ওই বিরতির সময় আমি অন্যদিকে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। টিভি এবং ফিল্ম নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে, কোনভাবেই সময় বের করতে পারছিলাম না। যার ফলে গত প্রায় ৫/৬ বছর ধরে চে’র সাইকেলের কোনো শো আমরা করতে পারিনি। এরমধ্যে আবার ৪ বছর পর ২৯ ফেব্রুয়ারি এলো- যে দিনটা মামুন ভাই (নাট্যজন মামুনুর রশীদ)’র জন্মদিন। এই দিনটাকে আমরা বিশেষভাবে পালন করি। তাকে ঘিরে অনেক আয়োজনের মধ্যে চে’র সাইকেলের একটা প্রদর্শনীও রাখা হয়েছে। এটাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি, তার প্রতি ভালোবাসা।
চে’র সাইকেল মামুন ভাইয়ের লেখা নাটক হলেও প্রোডাকশনটা আরণ্যকের নয়, বাঙলা থিয়েটারের- যেটা মূলত একটা রেপার্টরি থিয়েটার গ্রুপ। মামুন ভাইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আরণ্যকের ‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’ শীর্ষক যে আয়োজন, সেখানে এটি মঞ্চায়িত হচ্ছে। এ নাটকে এগারোটি চরিত্র- যা আমরা তিনজন মিলে করি। আমি ছয়টা চরিত্রে, মামুন ভাই দুইটি আর রুবলী তিনটি। এটুকু বলতে পারি যে আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ।
• ৩ বছর পর আবার মঞ্চে —
মঞ্চে আরণ্যকের ‘রাঢ়াঙ’র শো করেছি তিন বছর আগে। আর চে’র সাইকেল করেছি পাঁচ বছর আগে। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখলাম- টিভিতে নিয়মিত ক্যামেরার সামনে যতই অভিনয় করি, আমার হৃদয় জুড়ে শুধুই মঞ্চ। রিহার্সালে এতদিন পরে এসেও দেখলাম, প্রায় শতভাগ সংলাপ আমার স্মরণে আছে। আসলে এটাতো আমাদের অন্তরেই মিশে আছে। হয়ত বাস্তবতার কারনে পেরে উঠিনা, কিন্তু সবসময়ের জন্য ধারণ করে আছি এটাকেই। রাঢ়াঙ’র শো করতে গিয়ে আমি ভুলে গেছি যে তিন বছর পর আমি মঞ্চে উঠছি। যেন নিয়মিতই আমি মঞ্চে অভিনয় করছি।
• মঞ্চ নিয়ে ভাবনা —
আসলে একটা সময় শুধু মঞ্চেই কাজ করবো। এখন টিভিতে বা চলচ্চিত্রে ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠছেনা। কিন্তু এটা বেশিদিন নয়, চেষ্টা করছি যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব মঞ্চে নিয়মিত হওয়ার। মঞ্চের প্রতি যে ভালবাসা, কাজ করার যে আনন্দ, সেটা সবকিছু থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে আমি মঞ্চে কাজ করছি। এটার প্রতি আমার ভালবাসা, প্রেম, দায়বদ্ধতা সবই তো আছে। মঞ্চে কাজ করবো না- এটা কল্পনাতেও আসেনা। এখন হয়তো হচ্ছেনা, কিন্তু আগামিতে আমি নিয়মিত হব।
• বর্তমান প্রেক্ষাপটে মঞ্চকর্মী —
বর্তমানে আমরা একটা খারাপ সময় পার করছি। এটা সবক্ষেত্রেই। যেমন টেলিভিশনের নাটকের মান কমে গেছে, ভালো নাটকের সংখ্যাও কমে গেছে, এমন কি দর্শকও কমে গেছে। এক্ষেত্রে মঞ্চ ছিল আমাদের কেন্দ্রবিন্দু। এটাকে ঘিরেই আমরা স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এই মঞ্চের অবস্থাও খুব বেশি ভালো না। বর্তমানে নতুন ছেলেমেয়ে যারা কাজ করতে আসছে, তারা মঞ্চের সাথে দীর্ঘদিন লেগে থাকতে চায় না। তাদের অধিকাংশই ডিজিটাল আর ইন্টারনেটের যুগের, তাই সবকিছুই যেন গতিশীল। অল্প সময়ে, অল্প পরিশ্রমে, কতো বেশী লাভবান হওয়া যায়, এগিয়ে যাওয়া যায়, এই চিন্তাই শুধু। সেক্ষেত্রে আমরা ছিলাম এনালগ যুগের। এনালগ দিয়েই শুরু। মাঝপথে ডিজিটাল এসে যুক্ত হয়েছে। তো ডিজিটাল যুগেই যাদের শুরু, তাদের মঞ্চে খাপ খাওয়ানো কঠিন। তারপরও যে চলছে, সেটাই স্বস্তির।
• আজকের প্রদর্শনী নিয়ে প্রত্যাশা —
দর্শকদের অনুরোধ করবো মঞ্চে নিয়মিত নাটক দেখার। যদিও এটা খুব কঠিন। কারণ বাস্তবতা হচ্ছে সবার হাতে সময়ের স্বল্পতা। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামের যে অবস্থা বা সবকিছু মিলিয়েই দর্শকদের উপস্থিতি হয়তো কমে যাচ্ছে। তারপরও আমি অনুরোধ করবো যে, টিভি বা চলচ্চিত্রে আমাদের অভিনয় যারা ভালবাসেন, তারা যেন মঞ্চেও আমাদের কাজ দেখতে আসেন। মঞ্চটা যদি ঠিকঠাক মতো বাঁচে, তাহলে আমাদের অন্য ক্ষেত্রগুলো সমৃদ্ধ হবে। কারণ মঞ্চই হচ্ছে নিজেকে সঠিকভাবে তৈরি করার একমাত্র মাধ্যম। তাই এই জায়গাটাই যদি ঝুঁকির মধ্যে পরে যায় বা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সবকিছুই শেষ। জন্মটাই যদি সঠিক না হয়, তাহলে বেড়ে উঠবো কিভাবে? মঞ্চের কোন বিকল্প নাই। তাই আমি মনে করি মঞ্চের জন্য দর্শকদের পৃষ্ঠপোষকতা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। দর্শকদের উচিত আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করা। আমাদের উৎসাহিত করা।