নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র
৮ মার্চ ২০২০ ২২:৩০
চলচ্চিত্র মানেই যেন প্রধান চরিত্রে নায়ক আর পার্শ্ব চরিত্রে নায়িকা। নায়কদের ঘিরে চলচ্চিত্রের কাহিনী লেখা হলেও নায়িকাদের উপস্থিতিই থাকে যেন ‘গ্ল্যামার’ বাড়ানোর জন্য। নায়িকাদের গ্ল্যামারাস উপস্থিতি বর্তমান সময়ে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, হিন্দি-বাংলা চলচ্চিত্রে নামি-দামি নায়িকাদের দিয়ে ‘আইটেম সং’ করানো ছাড়া সিনেমা যেন পূর্ণতা পায় না।
তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলাচ্ছে। হলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও নির্মিত হচ্ছে নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র। নারী দিবস উপলক্ষে এমন কতগুলো চলচ্চিত্র নিয়ে লিখেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানা
১. কাহানী
বিদ্যা বালান অভিনীত কাহানী সিনেমায় তিনিই কেন্দ্রীয় চরিত্র। ঠিক চিরাচরিত বলিউড সিনেমায় যেমন পর্দাজুড়ে নায়কের উপস্থিতি। এই সিনেমাতেও পর্দাজুড়ে বিদ্যা বালান অভিনীত চরিত্র বিদ্যা বাগচির উপস্থিতি। রক্ত ঠান্ডাকরা এই থ্রিলারে বিদ্যার অভিনয় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে থাকবে যুগের পর যুগ।
২. ইংলিশ ভিংলিশ
সাদামাটা এক ভারতীয় গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করে মাত করে দেন এককালের গ্ল্যামারগার্ল শ্রীদেবী। সিনেমার ঘটনা খুব জটিল না তবে একজন মধ্যবিত্ত মা ও স্ত্রীর চরিত্র ছাপিয়ে শ্রীদেবীর উপস্থিতি ভক্তদের মনে চিরস্থায়ী আসন গেড়েছে। নারী পরিচালক গৌরি শিন্দে যেভাবে একজন সাধারণ ভারতীয় নারীর অসাধারণত্ব তুলে ধরেছেন তা অতুলনীয়।
৩. কুইন
বিয়ের পর হানিমুনে প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল রানির। কিন্তু বিয়েটা ভেঙে যায়। রানীরূপী কঙ্গনা রানাউত কিন্তু থেমে থাকার পাত্রী নয়। সে একাই চলে যায় হানিমুনে। সাধারণ এক মধ্যবিত্ত ভারতীয় মেয়ে প্যারিসের মতো ঝা চকচকে ইউরোপের শহরে গিয়ে কী করবে দেখার জন্য প্রতি মুহূর্ত পর্দায় আটকে থাকে দর্শকের চোখ। কুইনের মতো চলচ্চিত্রে নায়কের প্রয়োজন নেই। নারী চরিত্রই পারে দর্শককে হলমুখী করতে। এই চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরষ্কার পান কঙ্গনা।
৪. নিল বাতে সান্যাটা
অশ্বিনী আইয়ার পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটিতে স্বরা ভাস্কর একজন সিঙ্গেল মাদার। তার একমাত্র কিশোরী মেয়েটা ভাবে লেখাপড়া শিখে আর কী হবে! মায়ের মতো তাকেও তো একজন গৃহকর্মীই হতে হবে। কিন্তু নিম্নবিত্ত এই মা তার মেয়ের সঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে ভর্তি হয়। উদ্দেশ্য মেয়ের যেন লেখাপড়ায় মতি ফেরে। মা আর মেয়ের এই চলচ্চিত্রটির অনেকগুলো দৃশ্যই হৃদয়ে দাগ কেটে যাবে দর্শকের। কে বলেছে নায়ক ছাড়া মুভি হয় না!
৫. নীরজা
নীরজা ভানত ছিলেন একজন ভারতীয় ফ্লাইট অ্যাটেড্যান্ট। সন্ত্রাসীরা তাদের ফ্লাইটটি জিম্মি করলে নীরজা রুখে দাঁড়ান এবং যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন দেন। এই চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরষ্কার পান সোনম কাপুর। টানটান উত্তেজনা ধরে রাখা এই চলচ্চিত্রটি সমালোচক ও দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। পর্দার নীরজা সোনমের সঙ্গে সঙ্গে আপনিও কখনো হাসবেন, কখনো কাঁদবেন।
৬. লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা
সেন্সর বোর্ডে আটকে গিয়েছিল অলংকৃতা শ্রিবাস্তব পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি। চারজন নারীকে ঘিরে এগিয়ে চলে গল্প, যারা গতানুগতিক জীবনধারা থেকে বেরিয়ে নিজেদের মতো করে বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রত্না পাঠক শাহ্সহ বাকি অভিনেত্রীদের উপস্থিতি চলচ্চিত্রটিকে বানিয়েছে দারুণ উপভোগ্য।
৭. হিডেন ফিগারস
নীরজার মতো হলিউডের এই চলচ্চিত্রটিও জীবনীভিত্তিক। মুভির ঘটনা আবর্তিত হয়েছে তিনজন আফ্রিকান আমেরিকান নারীকে নিয়ে যারা নাসায় কাজ করতেন। এই তিন বিজ্ঞানী মিলে নভোচারী জন গ্লেনকে মহাকাশে পাঠাতে সাহায্য করেন। ইতিহাসে তাদের কথা অতটা বড় করে উঠে না এলেও হিডেন ফিগারসে তিন নারীর জীবন উদযাপন করা হয়েছে।
৮. মোয়ানা
শুধুই অল্পবয়েসী মেয়েদের না, প্রাপ্তবয়স্কদেরও পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিজনির মোয়ানা চরিত্রটি। তরুণী মোয়ানাকে পছন্দ করেছে মহাসাগর, ডেমি গড মাউইর সঙ্গে মিলে একটি দ্বীপ বাঁচানোর জন্য।
৯. ওয়ান্ডার ওম্যান
ডিসি কমিকসের ওয়ান্ডার ওম্যান সুপার হিরো চলচ্চিত্রের সংজ্ঞাই বদলে দেয় বলতে গেলে। যেখানে সুপারহিরো মানেই এই ম্যান সেই ম্যান, সেখানে আমাজন রাজকন্যা প্রিন্সেস ডায়ানা ওয়ান্ডার উওম্যান হয়ে মানুষকে রক্ষা করেন বিপর্যয় থেকে। গ্যাল গ্যাডট অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসেও রাজত্ব করেছে দীর্ঘদিন।
১০. দ্য ডেভিল ওয়ারস প্রাডা
আপনি তাকে না দেখলেও নিশ্চিত তার কথা শুনেছেন। তার বরফের মত শীতল উপস্থিতির এমনই খ্যাতি যে তিনি কোনো ঘরে প্রবেশের আগেই সেটি চুপচাপ হয়ে যায়। যেন তিনি স্বয়ং সেখানে আছেন। মিরান্ডা প্রিসলি হলেন সেই চিরন্তন লেডি বস যিনি অবশ্যাম্ভাবীভাবে প্রাডার জুতা পরেন। প্রাডা পরাই তার সবচেয়ে ঘৃ্ণ্য কাজ কি না তা অবশ্য বলা সম্ভব না।
১১. ক্যাপ্টেইন মার্ভেল
ক্যাপ্টেইন মার্ভেলের চরিত্রে একজন নারীকে দেখা অত্যন্ত চমৎকার অভিজ্ঞতা। ওয়ান্ডার উওম্যানের মতো তিনিও নায়কপ্রধান চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্রি লারসন এবং ক্যাপটেন মার্ভেল পৃথিবীকে জানান দেন যে, নায়ক মানেই পুরুষ নয়।