উৎসবের নয়, আজ বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করবার দিন: সন্জীদা খাতুন
১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৩০
এলো আরও একটি নতুন বছর- ১৪২৭। ঐতিহ্য অনুযায়ী আজ পহেলা বৈশাখে ভোরের আলো ফুটতেই বাংলা নতুন বছর ১৪২৭-কে বরণ করে নেবার কথা বাঙালি জাতির। আর সেই নতুন বঙ্গাব্দ বরণের অন্যতম অনুষঙ্গ রমনার বটমূলে ছায়ানটের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। কিন্তু হলনা। ৫৬ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেই অনুষঙ্গ উদযাপনে ছেদ পড়েছে। নতুন বাংলা বছর হাজির হলেও রমনার বটমূলে কেউ গাইলো না বর্ষবরণের গান ‘এসো হে বৈশাখ…’।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ থাকায় রমনার বটমূলে নেই ছায়ানটের কোনো অনুষ্ঠান। স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনেই নিয়মিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও মিলনমেলার আয়োজন থেকে সরে এসেছে তারা। এর বদলে ছোট পরিসরের একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হল টেলিভিশন চ্যানেলে। রমনার বটমূলে গত কয়েক বছর ধরে যে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এসেছে ছায়ানট, তারই ধারণকৃত ভিডিও দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হল আজ পহেলা বৈশাখে সকাল ৭টায়।
আগের বছরের আয়োজনের অংশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুনের সমাপনী কথন। ব্যাথিত বাঙালির উদ্দেশ্যে দেয়া তার এই কথন সারাবাংলার পাঠকদের জন্য—
“বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন নিয়তই মানুষে-মানুষে, মানুষে-প্রকৃতিতে অভিনব এক সংযোগ সৃষ্টি করে। নতুন দিনের আশা নিয়ে নববর্ষ ফিরে ফিরে আসে বাঙালির জীবনে। কিন্তু আজ নতুন বছরের বার্তা যেন নতুন আশাকে ধূলিসাৎ করে দিতে চায়। জাতির জীবনে আজ ঘোর দুর্দিন, সমগ্র বিশ্বসমাজ আজ বিধ্বংসী মহামারীতে আক্রান্ত।
উৎসবের দিন নয় আজ। বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করবার দিন। নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি সকলকে নিরাপদ রাখার সময়। এই সর্বব্যাপী বিপদে আক্রান্ত বিরূপ বিশ্বে মানুষ একা হয়ে পড়েছে, আবার সকল বিশ্ববাসী আজ একই সংগ্রামের সহযাত্রী হয়ে মিলেমিশে একাকার।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সভ্যতার যে-সংকট দেখে রবীন্দ্রনাথ শিহরিত হয়েছিলেন, আজকের সংকট তার চেয়েও বহুবিস্তৃত। পৃথিবীর গভীর-গভীরতর অসুখে আমরা এ-ও জানি বিপুল ধ্বংসলীলা আসন্ন হলেও, সেকথাই একমাত্র সত্য নয়।
মানবকল্যাণের জন্য আমরা ঐকান্তিক চেষ্টা এবং ঐকান্তিক মিলনের শপথে ঐক্যবদ্ধ হবো আজ। মহাবিশ্বের প্রতিটি মানুষ পরস্পর অদৃশ্য ঐক্যসূত্রে বাঁধা। সভ্যতা, মানবতা ও প্রকৃতির নিবিড় মেলবন্ধনে আমরা আস্থা রাখি। কামনা করি বিচ্ছিন্নতা ও বন্দিত্ব পেরিয়ে নতুন উপলব্ধিতে নতুন বিশ্ব গড়বার প্রেরণা সঞ্চারিত হবে সবার মধ্যে, মহা-সংকট বয়ে আনবে মহা-পরিবর্তন, কেননা, মানুষই পারে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আলোর পথের অভিযাত্রী হতে।
পৃথিবীর ঘরে ঘরে যত মানুষ আছে, সবার জন্যে শুভকামনা জানাই আমরা। জয় আমাদের হবেই। সবার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের সেই কথা ফিরে উচ্চারণ করব আজ– ‘জয় হোক মানুষের, ওই চিরজীবিতের’।
শুভ নববর্ষ।”
ছায়ানট পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশ টেলিভিশন রমনার বটমূল সন্জীদা খাতুন