ধর্মের বিভেদ ভুলে সবাই এক হয়ে যুদ্ধ করছি: সুজিত মুস্তাফা
১৪ এপ্রিল ২০২০ ১০:০৮
বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে পাশাপাশি বহুকাল ধরে বসবাস করে আসছে। প্রতিটি ধর্মের মানুষের নিজস্ব অনুষ্ঠান আছে, উৎসব আছে যেগুলোতে সেই সেই ধর্মের মানুষেরা সাধারণত অংশগ্রহণ করে। সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করার সবচেয়ে বড় যে উৎসব সেটি হচ্ছে আমাদের বাংলা নববর্ষ।
পহেলা বৈশাখের ঠিক আগে বা পহেলা বৈশাখের দিনটিতে কিভাবে কিভাবে যেন প্রচন্ড বৈশাখী ঝড় আমরা প্রায় নিয়মিতই হতে দেখে আসছি বহুকাল ধরে। এই প্রচন্ড ঝড় আমাদের যেন একটা সংকেত দেয় যে সব পুরনো আবর্জনা ময়লা পরিষ্কার করে, সমস্ত গ্লানি-কালিমা ঝেড়ে ফেলে আমরা যেন নতুন করে সামনের দিকে যাত্রা শুরু করতে পারি। কেন যেন অনেকদিন ধরে মনে হচ্ছিল, বৈশাখী ঝড়ে সব ময়লা যেন পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না, আরো অনেক ময়লা দূর করবার জন্য আরো বড় কোন ঝড়ের দরকার আছে।
প্রত্যেকটি ঘটনার একটি ইতিবাচক এবং একটি নেতিবাচক দিক থাকে। পরম নেতিবাচক এক ভূমিকা নিয়ে করোনাভাইরাস এসেছে এবং সারা পৃথিবীর মানুষকে এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে আমরা লড়ে যাচ্ছি, আশা করছি, নিশ্চয়ই আমরা এই দুঃসহ সময় অতিক্রম করে একটা সোনালী সকাল ফিরে পাবো।
পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র করোনার থেকে আত্মরক্ষা করবার জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে সেল্ফ আইসোলেশন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। এই যে নতুন একটা ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি, পরিচিত হচ্ছি, এটা কিন্তু আমাদের মানবিক জগতে অনেক পরিবর্তন আনছে। কিছু কিছু পরিবর্তন এর মধ্যে খুবই ইতিবাচক। নেতিবাচক দিকতো আছেই কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে ইতিবাচকতাই বেশি।
পৃথিবীতে আরো অনেক ভাইরাস এসেছে, আরও অনেক দুর্যোগ, মহামারী এসেছে, সুনামি এসেছে, ভূমিকম্প এসেছে, খরা ও দুর্ভিক্ষ এসেছে কিন্তু মানুষ শেষ পর্যন্ত সবকিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এই ভাইরাসটিকেও মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে, গবেষণা, কৌশল ও প্রযুক্তি দিয়ে ঠিকই একসময় জয় করে ফেলবে। কিন্তু এই ক্রান্তিকালটিতে আমরা যে একটা নতুন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে এসে পড়েছি সেটি হচ্ছে যে, পরিবারকে আমরা আবার নতুন করে দেখছি, জানছি, চিনছি। পরিবার সদস্যদের বেশি সময় দেওয়া, আরো পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে শেখা, পরিমিত খাবারে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করা, স্বজনদের জন্য উৎকণ্ঠিত হওয়া, আমাদের বোধ এবং অনুভূতির জগত যেন আরো সজাগ হয়ে উঠছে।
প্রতিটি মানুষের সাথে প্রতিটি মানুষের কোনো-না-কোনোভাবে একটি সম্পর্ক আছে সেটি যেন আবার নতুন করে আমরা অনুধাবন করতে শিখছি। আমরা যে ধর্মীয় বিভেদ নিয়ে সবসময় লড়াই করি এই সময়ে এসে আমরা কিন্তু ধর্মের বিভেদ ভুলে সবাই এক হয়ে যুদ্ধ করছি এই করোনার বিরুদ্ধে। বৈশাখের এই নতুন সকালে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার যেন করোনা চলে যাওয়ার পরেও আমাদের এই একাত্মতা চিরস্থায়ী হয়ে থাকে, আমরা যেন মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, আমাদের মধ্যে অন্য কোনো বিভাজন, ভেদাভেদ যেন না থাকে।
সবাইকে শুভকামনা এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সুজিত মুস্তাফা – সংগীত শিল্পী, প্রশিক্ষক এবং সংগঠক