Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভালোবাসা’ দিয়েই জয় করা যায় সব: আইরিন পারভীন লোপা


১৪ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫৩

চৈত্র সংক্রান্তি’র শেষ দিবসে সকালের স্নিগ্ধ সূর্যের আভায় ছেয়ে গেছে গোটা ঢাকা শহর। গাছে গাছে পাখির কুহু তানের মধুর ধ্বনি প্রাণকে ব্যাকুল করে। মনের সাথে সাথে শরীরটা ছুটে যেতে চায় বাইরে, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হতে চায়। কিন্তু সকল ইচ্ছে আর ভাবনাগুলোকে দমিয়ে রাখতে হচ্ছে কারন আজ পৃথিবীটা ভালো নেই। আমরা মানুষেরা যুগে যুগে পৃথিবীর কাছ থেকে শুধু নিয়েছি, আর অন্যদিকে পৃথিবী তার সর্বস্ব দিয়ে নিঃস্ব হয়ে আমাদেরকে অকাতরে দান করে গেছে তাঁর ভালোবাসা, তাঁর সমস্ত সম্পদ। তাই নিঃশেষে’র তলানিতে পৌঁছে পৃথিবী তাঁর একমাত্র স্বজন প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে গোটা মানবজাতিকে আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিপন্ন আজ মানবজাতি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শহরের ইট-কাঠের পাষাণ এই দীর্ঘ দালানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, সামনে নীল দিগন্ত আকাশ, সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে অবলীলায়।ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আমার শৈশবে। আমার জন্ম পুরনো ঢাকার একটি অঞ্চলে, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় চৈত্র সংক্রান্তি এক বিশেষ রূপ নিয়ে আসতো আমাদের কাছে। চৈত্র মাসের শেষ কটা দিন শিবের নাচন দেখতাম। আমাদের পাড়ার প্রায় প্রতিটা বাড়িতে ‘শিব ঠাকুর’ সাথে আরো কয়েকজন নিয়ে শিবের নাচন দেখাতেন, হাতে তার ত্রিশূল আর ত্রিশূলের মাথায় গাঁথা থাকতো একটা কাঁচা আম। নাচ শেষ হলে ‘শিব ঠাকুর’ ও তার সহযোগীরা চটের থলে বা বাঁশের ঝুড়ি এগিয়ে দিতেন। পাড়ার মা, মাসি, জেঠিমা, কাকিমা’রা চাল, ডাল, আলু ইত্যাদি দিয়ে তা পূর্ণ করে দিতেন। আমার পুরো শৈশবকালটায় আমি বিশ্বাস করে এসেছি যে, সত্যিকারের ‘শিব ঠাকুর’ ধরায় নেমে এসে তান্ডব নৃত্য করে সকল জরা’কে দূরীভূত করে বৈশাখের প্রথম দিনে ভোরের নির্মল আভা ছড়িয়ে পৃথিবীকে স্নিগ্ধতার পরশে রাঙিয়ে দিতেন।

বিজ্ঞাপন

শৈশবের সেই রঙিন স্মৃতিগুলো আমায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আজ। প্রতি চৈত্রসংক্রান্তি সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে সকলে মিলে মেতে উঠেছি বছরটাকে বিদায় জানাতে। আজ শিল্পকলা’র অঙ্গন নিস্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের কোলাহল আর পদচারণায় মুখর হচ্ছে না তার প্রাঙ্গণ, আঙিনা। চৈত্রের খরতাপে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে স্তুপ হয়ে আছে, রঙে রঙিন আলপনা আঁকা নেই শিল্পকলার আঙিনা। চারিদিক শুনশান, গভীর শূন্যতা, কোথাও কেউ নেই। এই শূন্যতার কবে হবে অবসান? কবে আমরা ফিরে পাব আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কারো জানা নেই।

প্রতিদিনের মতো নিয়ম করে আজ বৈশাখের প্রথম দিনেও নরম সূর্যের আভা আমার বারান্দাটা রাঙিয়ে দিয়ে গেল। অর্কিড গাছগুলোতে পানি দিতে দিতে ওদের সঙ্গে কথা কই ..ওরে, তোরা ভালো আছিস? মিষ্টি বাতাসের দোলায় পাতাগুলো দুলিয়ে দুলিয়ে যেন আমায় বলছে…. আমরা ভালো আছি, তোমরা ভালো তো? বুকের গহীন থেকে এক দীর্ঘশ্বাস এসে আমাকে বিষন্ন করে দেয়, ফিসফিস করে বলি…নারে ভালো নেই। ভোরের প্রথম আভায় রমনার বটমূলে ‘এসো হে বৈশাখ’র আহ্বান নেই, চারুকলার প্রাঙ্গণ থেকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নেই, বাড়ি বাড়িতে লুচি মিষ্টান্ন খাবার নেই, পান্তা ইলিশ নেই, দল বেঁধে বৈশাখী মেলায় ঘুরতে যাওয়ার নেই, কেমন করে ভাল থাকি বল? পৃথিবী যে গোটা মানব জাতির প্রতি রুষ্ট হয়েছে, তাই সে ধারণ করেছে রুদ্র মূর্তি। পাতা দুলিয়ে দুলিয়ে ওরা সমস্বরে বলে উঠে …. ভালোবাসো পৃথিবীকে, প্রকৃতিকে। ভালোবাসাই পারে সমস্ত অসংগতি আর জরা’কে দূর করতে। ভালোবাসায় রাঙিয়ে দাও তোমাদের আগামীর ভবিষ্যৎকে। সকলের কানে কানে পৌঁছে দাও এই মঙ্গল বারতা…..

তাই তো…. একমাত্র ‘ভালোবাসা’ দিয়েই তো জয় করা যায় সব।

১৪২৭ বঙ্গাব্দের নববর্ষে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার… ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলবো আমাদের ভালোবাসার এই সুন্দর পৃথিবী কে।

যে যেখানে আছেন প্রার্থনা করি ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।

শুভ নববর্ষ।

ড. আইরিন পারভীন লোপা – নাট্যশিক্ষক, নাট্য নির্দেশক ও প্রতিষ্ঠাতা ‘নাট্যম রেপার্টরি’

আইরিন পারভীন লোপা নববর্ষ নাট্যম রেপার্টরি পহেলা বৈশাখ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর