Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এখনকার অধিকাংশ রান্নার অনুষ্ঠানই শুধু পাগলামি’


২৪ মে ২০২০ ১৯:০০
বাংলাদেশের জনপ্রিয় উপস্থাপকদের মধ্যে অন্যতম শারমিন লাকি। সিদ্দিকা কবীরস রেসিপি’র মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু করে এ দেশের উপস্থাপনা শিল্পকে যিনি নিয়ে গেছেন অন্য এক মাত্রায়। সবাই ভালোবেসে ডাকেন ‘সুহাসিনী’ বলে। একইসাথে তিনি জনপ্রিয় মডেল ও আবৃত্তিশিল্পী। বিজ্ঞাপনের ভয়েস ওভারেরও কাজ করেন প্রচুর। বহু গুণের অধিকারী এই শিল্পী জানালেন তার পুরো যাত্রাপথের আদ্যপান্ত।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলা’র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আশীষ সেনগুপ্ত
• শুরুর গল্প _
আমার শুরুটা একটা পাড়া কেন্দ্রিক কবিতার সংগঠনকে ঘিরে। মগবাজারে ‘এসময়’ নামে ওই সংগঠনে আমি আবৃত্তি করতাম। এটা ৯০’র দশকে। তখন আমি কলেজে পড়ি। যদিও স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আবৃত্তি করতাম। সংগঠন করার দু’তিন বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক আসলো ভয়েস দেয়ার জন্য। ১৯৯৪ থেকে একেবারে পুরোপুরি ভাবে জড়িয়ে গেলাম ভয়েস দেয়ার কাজে। এরমধ্যে দুয়েকটা বিজ্ঞাপনেও মডেল হিসেবে কাজ করেছি আমি। এরপর ১৯৯৬-তে ‘সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি’তে কাজ করার সুযোগ আসে। টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে এটাই আমার প্রথম কাজ। এরপর বাকীটা ইতিহাস … (হাসি)
• প্রসঙ্গ: সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি _
বিশিষ্ট নাট্যজন সারা যাকের’র ধ্বনিচিত্র থেকে ফোন করে যখন আমাকে এ প্রস্তাব দেয়া হয়, আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই। তার কারণ ‘সিদ্দিকা কবীর’ আপা। উনার মতো এতো বড় মাপের একজন ব্যাক্তিত্বের সাথে কাজ করতে পারবো এটা শুনেই এক মুহূর্তেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। কারণ তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারাটা একটা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এটা ছিল আমার স্বপ্নেরও অতীত। উনি যে নিজেই একটা ইন্সটিটিউট। আর এ অনুষ্ঠান দিয়ে আমি মানুষের রান্নাঘরে ঢুকে গিয়েছিলাম। সিদ্দিকা কবীর রেসিপিতে টানা ৯ বছরে এতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি, সবার কাছে আমি যেন পাশের বাসার সেই লক্ষ্মী মেয়েটাই হয়ে গিয়েছিলাম। আমার যে আইডেন্টিটি তৈরি হয়েছে, সেটা আর দশজন সেলিব্রিটি থেকে আলাদা। এবং এই নয় বছরে আমি গৃহস্থালির বিভিন্ন প্রোডাক্টের প্রচুর বিজ্ঞাপন করি। পাশাপাশি শাড়ির মডেল হিসেবে ফটোশুট। বলা যায় প্রতিদিনই আমাকে ফটোশুট আর ভয়েস ওভারের কাজ করতে হতো।
• এতে কাজ করার অভিজ্ঞতা _
প্রথম দিকে বেশকিছু এপিসোডে আমার সমস্যা হয়েছিল। সত্যি বলতে কি, টিভি ক্যামেরায় আমি আসলে ততটা ফ্রেন্ডলি নই, যতটা স্টিল ক্যামেরায়। প্রথম দিকে আমার মধ্যে বেশ জড়তা ছিল, আমি বেশ কুঁজো হয়েই দাঁড়াতাম। আকেকটা এপিসোড প্রচার হতো, আর আমার আত্মীয় স্বজনরা কুঁজো হয়ে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে ভীষণ বকতো। পরে আস্তে আস্তে সেটা ঠিক হয়ে গেল। এবং আমি একটা সময় বুঝতে পারলাম যে, আমার সব ভালোবাসা এই উপস্থাপনাতেই। আমার জন্মই হয়েছে আবৃত্তি আর উপস্থাপনার জন্যই।
• অন্যান্য মাধ্যমের প্রতি অনীহা _
অনীহা নয়, বলা যায় ভেবে চিন্তেই দূরে থেকেছি। প্রচুর নাটক আর সিনেমার অফার ছিল। ডিরেক্টর বা মেকাররা পাগল বানিয়ে ফেলতো, বিভিন্ন ভাবে আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এসব আমার জন্য নয়। আমি মনেপ্রাণে যেটাকে ভালোবাসি, সেটা নিয়ে থাকতে চাই। আমার কবিতা, উপস্থাপনা আর ভয়েস ওভার- এটাই আমার জগত। আমি মনে করি প্রতিটা কাজেই সময় দিতে হয়। নাটকের ক্ষেত্রে তো একজন শিল্পীকে প্রচুর সময় দিতে হয়। যেটা আমার পক্ষে একেবারেই সম্ভব না। আমার একটা সন্তান আছে, সংসার আছে- এদের বঞ্চিত করে নাটকের জগতে থাকতে আমি চাইনা। যদিও সেসময়টা এ দেশের বিখ্যাত কয়েকজন নির্মাতা, যাদের সাথে কাজ করতে নাট্যশিল্পীরা এখনো উদগ্রীব হয়ে থাকেন, সেইসব নির্মাতাদের কয়েকটা নাটকের স্ক্রিপ্ট ফিরিয়ে দিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। তারপরও আমি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছি। কারণ আমার আইডেন্টিটি ক্রায়সিস হতো। আমি মনে করি একজন শিল্পী সবগুলো ক্ষেত্রেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনা। যার ফলে আমাদের দেশে অনেকেই একটু একটু করে সবগুলো ক্ষেত্রেই কাজ করতে গিয়ে বরঞ্চ নিজের আইডেন্টিটি হারিয়ে ফেলে। দর্শকরা বুঝতে পারেন না উনি আসলে কি করেন।
• প্রসঙ্গ: উপস্থাপনা _
আমি এই ক্ষেত্রটাতেই পুর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে চেয়েছি। উপস্থাপনাটাকে আমি এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই, যেটা দেখে পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও ভাবতে পারে যে, এটা নিয়েও এগিয়ে যাওয়া যায়। শুধু উপস্থাপনা করাটাও একটা পেশা হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা আছে। বলা যায় এটা একটা ভার্সেটাইল শিল্প মাধ্যম। এখানেও সাফল্য পাওয়া যায়। আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যতিক্রম যে, শুধুমাত্র একক ভাবে উপস্থাপনা করেই দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছি। যাকে বলে সেলিব্রিটি … (হাসি)।
• উপস্থাপনায় সেলিব্রিটি হয়ে ওঠা _
এটা একমাত্র আমার সময়ানুবর্তীতার ফল। আমি সবসময় চেষ্টা করি এটা মেনে চলতে। অন্যদের কষ্ট দেয়ার মানসিকতাটা আমার নেই। যেহেতু আবৃত্তি সংগঠন করতাম, পাশাপাশি নাটকের দলগুলোকেও খুব কাছ থেকে দেখেছি, আমি জেনেছি সময়ের মুল্য কাকে বলে। এটা আমার মধ্যে প্রবলভাবে রয়েছে। আমার স্কুলিং, বিশেষ করে যে সব শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষাটা পেয়েছি, তাঁরা সবাই আমাকে সবার আগে সময়কে মূল্যায়ন করতে শিখিয়েছেন। তাই আমি মনে করি আমার উপর সবার এতো নির্ভরতার কারণ এটাই। আমি আমার লোভটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কখনোই ইঁদুর দৌড়ে দৌড়াইনি। আমি ইঁদুরও নই, ঘোড়াও নই, তাই কোন রেস-এও নেই। আমার পরিবার, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছ থেকেই এই শিক্ষাটা পেয়েছি বলেই আজ আমি এখানে।
• বর্তমানে বিভিন্ন রান্নার অনুষ্ঠান _
অধিকাংশই পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না। সিদ্দিকা কবীর রেসিপির পরে দুয়েকটা ভালো রান্নার অনুষ্ঠান হয়েছে। এখনো কয়েকটা বেশ ভালো মানের। সেটা একেবারে হাতেগোনা। বাকিগুলো নিয়ে কি বলবো? আমার মনে হয় দর্শকদের মধ্যেই সন্দেহ এগুলো কি রান্নার অনুষ্ঠান!
• প্রাপ্তি _
আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি-‘শান্তি’ আর ‘সম্মান’। যেটা প্রতি মুহূর্তে আমি উপভোগ করি। মিডিয়াতে এতোদিন ধরে কাজ করছি, কিন্তু কারো সঙ্গে আমার কোন ক্লেশ নাই। কেউ আমার কাজ নিয়ে কোনরকম বিরোধিতা বা কারো ঈর্ষার শিকার হইনি। এমন কাউকে দেখিনি যিনি আমার পথ আটকানোর চেষ্টা করেছেন। এর কারণ একটাই- মর্যাদা। আমি চেষ্টা করেছি মানুষকে সবসময় তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে। আর তাই হয়তো মানুষকে মর্যাদা দিয়েছি বলেই আজও আমাকে সবাই এতো পছন্দ করে।
• এখনকার কর্মব্যস্ততা _
মাঝখানে লম্বা বিরতির পর এখন আবার নতুন করে আবৃত্তিটা শুরু করেছি। গত ২০/২৫ বছর অনেককিছু করেছি। এখন আবৃত্তিচর্চাটা মনেপ্রাণে চালিয়ে যেতে চাই। দুটো সংগঠন করেছি- একটা সেই আগেরটা, যেটা ‘এসময়’ নামে ছিল, সেটাকে নাম পালটে করছি ‘তাইরেনাইরেনা’। এটার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। যেটাতে অনলাইনে শুদ্ধ উচ্চারণের ক্লাস নেন ড. বিপ্লব বালা। যেটা অত্যন্ত একটা ভালোমানের একটা অনুষ্ঠান। বিশেষ করে যারা শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে চায়, উপস্থাপনায় আসতে চায়, তাদের জন্য এটা ভীষণ উপকারী একটা ক্লাস। এখন পর্যন্ত আমরা তেরটা ক্লাস আপলোড করেছি। আমার আরেকটা সংগঠন আছে- ‘পঞ্চকন্যা’। এটা একটা বাচিক রেপার্টরি সংগঠন। বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের শুধুমাত্র দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নারী আবৃত্তিকারদের নিয়ে দর্শনীর বিনিময়ে আবৃত্তি পরিবেশনা। করোনাকালের আগে এই সংগঠন থেকে বেশ কয়েকটা পরিবেশনা আমরা করেছি। ইতিমধ্যেই ‘পঞ্চকন্যা’ অনেক সাড়া ফেলেছে। এটা নিয়ে আমার একটাই উদ্দেশ্য, এতোদিন যেসব প্রতিভাবান নারী আবৃত্তিকাররা বিভিন্ন প্রতিকূলতায় সামনে আসতে পারেনি, তাদের জন্য একটা প্ল্যটফর্ম তৈরি করা।
• প্রত্যাশা _
এখন একটাই চাওয়া- করোনার এই থাবা থেকে মুক্তি। প্রতিমুহূর্তে মনে হয় এটা একটা দুঃস্বপ্ন। কবে যে এর থেকে পরিত্রাণ পাবো!
• সবশেষে _
প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি- আমার দর্শকদের কাছ থেকে। এটা নিয়েই ওইপারে যেতে চাই। সবাই যেন আমাকে দোয়া করেন। আরেকটা অনুরোধ- ইউটিঊবে ‘তাইরেনাইরেনা’ নামে আমাদের যে চ্যানেলটা আছে – সবাই যেন সেটা সাবস্ক্রাইব করেন। আমরা উপকৃত হবো।
করোনাকালীন এই সংকটে সবাই ঘরে থাকুন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ছবি: অন্তর্জাল থেকে

আবৃত্তি টপ নিউজ তাইরেনাইরেনা ধ্বনিচিত্র পঞ্চকন্যা শারমিন লাকি সারা যাকের সিদ্দিকা কবীর সিদ্দিকা কবীরস রেসিপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর