Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমাকে জড়িয়ে মুখরোচক কথায় খুব মজা পাই’


২৭ মে ২০২০ ১৮:০৪

বিদ্যা সিনহা মিম- একাধারে মডেল ও অভিনেত্রী। ২০০৭ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার চ্যাম্পিয়ন হয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু। এরপর প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্যের সাথেই এগিয়ে চলছেন তিনি। একই বছরে হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত ‘আমার আছে জল’র মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। ‘জোনাকির আলো’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। লেখিকা হিসেবেও রয়েছে পরিচিতি। ২০১২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রথম গল্পের বই ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেজা’ এবং ২০১৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘পূর্ণতা’। এতো গুনের অধিকারী এই অভিনেত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে আড্ডা দিলেন সারাবাংলা’র স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট আশীষ সেনগুপ্ত। তারই বিস্তারিত পাঠকদের জন্য…

• যাত্রা শুরু _

লাক্স ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা দিয়েই মিডিয়াতে আমার যাত্রা শুরু- এটা তো সবারই জানা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে লাক্স ফটোসুন্দরীতে আমার মা-বাবা আমাকে না জানিয়ে ছবি দিয়েছিলেন। উনাদের বিশ্বাস ছিল, মেয়ে সফল হবেই। পরে যখন আমি চূড়ান্ত পর্যায়ে সিলেক্ট হলাম, তখন বাবা আর মা সবার কাছে গিয়ে আমার জন্য ভোট চাইতেন।

• পরিবার _

এটা ঠিক যে বাসা থেকে সাপোর্ট না পেলে আমার এ পর্যায়ে আসা সম্ভব হতো না। আমার কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মা আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন। আর ওই সময়টা বাবা আমার ছোট বোনকে দেখাশোনা করেছেন। আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার কাজের ক্ষেত্রে আমাকে অনেক হেল্প করেছে। আমার বাবা একজন শিক্ষক। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, ঢাকায় ইডেন কলেজ সহ দেশের খ্যাতনামা কলেজ গুলোতে উনি অধ্যাপনা করেছেন। প্রচুর ছাত্রছাত্রী উনার। যারা বাবাকে ভীষণ ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন। এখনো অনেকেই আমাকে বাবার পরিচয়ে চেনেন। তাদের কাছে আমার তারকাখ্যাতি কিছুই না। এমন কি দেশের বাইরেও কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, যখন ওরা জানতে পারে আমি একজন অধ্যাপকের মেয়ে, তখন ওদের কাছ থেকে একটা আলাদা সম্মান পাই। এটা আমার কাছে অনেক গর্বের।

• নাটক _

আমি যখন নাটকে কাজ করেছি, তখন আমি টানা নাটকের কাজই করে গেছি। আবার যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করলাম, তখন আমি টানা দু’তিন বছর অন্য কোন কাজ করিইনি। বছরে হয়তো একটা স্পেশাল কাজ করেছি। কিন্তু আমার মূল ফোকাসটা ছিল ফিল্মে। এখন আমার দর্শকদের কথা ভেবে বছরে হয়তো একটা বা দুইটা স্পেশাল নাটকে কাজ করবো। এর বেশি একদমই না।

• ওয়েব সিরিজ _

নাটকে কাজ সেভাবে না করলেও ওয়েব সিরিজটা নিয়মিত করছি। আমি সবসময় চেষ্টা করি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার। ওয়েব সিরিজ এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় একটা মাধ্যম। আর এর জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। তাই আগামিতে ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজের কাজ আরো বেশি করবো।

 

• বিজ্ঞাপন _

বিজ্ঞাপন আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত নিয়মিতই করছি। এটার প্রতি সবসময়ই মনোযোগী ছিলাম, এখনো আছি। তবে হ্যাঁ, ভালো ব্র্যান্ডের কাজ হতে হবে। বেশ উন্নতমানের কাজ হলে তবেই আমি বিজ্ঞাপনে চুক্তিবদ্ধ হই। আর এটা মেনে চলছি বলেই এখনো হয়তো দীর্ঘ সময় ধরেই ভালো ব্র্যান্ডের কাজ করে যাচ্ছি।

• সিনেমায় _

প্রথম ছবি ‘আমার আছে জল’- এটা মুলত লাক্সের পক্ষ থেকে গিফট ছিল। যেহেতু আমি লাক্স ফটোসুন্দরী চ্যাম্পিয়ন ছিলাম, তাই ওই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তবে কমার্শিয়াল বা আমার নিজের ইচ্ছায় করা প্রথম ছবি- ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’। যদিও সে সময়টায় আমি নতুন কোন সিনেমায় কাজ করতে চাইনি। কিন্তু ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার দুজনেই দিনের পর দিন আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। উনারা আমাকে ছাড়া ছবিটা করতেই চাইলেন না। একপর্যায়ে আমাকে রাজি হতেই হল। আমার সৌভাগ্য যে, প্রথম দুইটা ছবি দুই ঘরানার। এবং দুটোই দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এরপর প্রায় তিন চার বছর সিনেমায় বিরতি দিয়ে শুধু নাটকের কাজ করি। এরপর আবার সিনেমায় বিশেষভাবে মনযোগী হলাম। এখনো পর্যন্ত সিনেমার কাজটাই করে যাচ্ছি।

• ওপার বাংলায় _

সিনেমায় আবার যখন কাজ শুরু করলাম, তখন থেকেই আমার মধ্যে একটা ইচ্ছা বা টার্গেট ছিল যে একদিন আমি ওপার বাংলার সিনেমায় কাজ করবো। সুযোগ আসলো, ডাক পেলাম, দেরী না করেই গেলাম ওখানে। এখনো পর্যন্ত ওদের চারটা ছবি করা হয়েছে- প্রসেঞ্জিতদার সঙ্গে একটা, জিৎ’দার সঙ্গে একটা আর সোহম’র সঙ্গে দুইটা। এখনকার এই সঙ্কট কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরো কয়েকটা ছবির সঙ্গে যুক্ত হবো।

• স্বপ্ন পূরণ _

সিনেমা। একটা সময়, সেটা সিনেমা করার আগে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্মেন্স করতে গিয়ে অন্যদের গানের সঙ্গে নাচ করতাম। তখন আমার মনে হত আজ যদি আমার সিনেমা থাকতো, আমি যদি নায়িকা হতাম, তাহলে আমি আমার নিজের গানের সঙ্গে পারফর্মেন্স করতে পারতাম। আজ সেটা পারি। আর সিনেমার প্রতি টান বেশি অনুভব করি, কারণ একটা সিনেমা দীর্ঘদিন মিডিয়াতে প্রচার হয়। গানগুলোও নিয়মিত দেখানো হয়। কিন্তু নাটক গুলো দুয়েকবারের বেশি দেখানো হয় না।

• নতুন যারা কাজ করছে _

নতুনদের মধ্যে অনেকেই বেশ ট্যালেন্টেড। তবে তাদের অনেকেরই ধৈর্য একেবারে কম। সময় দেয়া বা অপেক্ষা করতে চায় না। পাশাপাশি ওদের গাইড করার মত তেমন কেউ থাকে না। এই বিষয় গুলো যারা মেনে চলছে, তারাই আসলে এখানে টিকে থাকবে।

• গসিপ _

আমি চেষ্টা করি আমার কাজের ক্ষেত্রটাতে সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকতে। সহশিল্পীদের সাথে এমন কোন সম্পর্ক রাখিনা যেটা দৃষ্টিকটু। তারপরও অনেক সময় আমাকে নিয়ে যেসব আজেবাজে কথার সৃষ্টি হয়- সেটা কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত ঈর্ষা পরায়নতা। তারা আমার সম্পর্কে কিছু না পেয়ে, আমার সহশিল্পীকে জড়িয়ে মুখরোচক কিছু একটা ছড়াতে থাকে। এগুলো যেহেতু ভিত্তিহীন, তাই পাবলিকের কাছে তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। তবে তাদের কান্ড কীর্তি দেখে আমি খুব মজা পাই।

• এখনকার ভাবনা _

একটাই- সবার আগে করোনা থেকে মুক্তি। আগামী দিনগুলোতে বেঁচে থাকবো কিনা, এটাই বুঝতে পারছিনা।

• লকডাউন পরিস্থিতিতে _

‘বিদ্যা সিনহা মিম’ নামে আমার নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেটা নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমার নিজের করা কিছু কনটেন্ট, যেমন- আমার ডেইলি লাইফ, আমার মেক-আপ এসবই আপলোড করি। এরমধ্যে তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে একটা অনলাইনে কাজ করা হয়েছে।

• আগামীর ভাবনা _

জানিনা। আসলে করোনা পরিস্থিতি যাওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রির কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছি না। বেশ কয়েকটা ছবির ব্যাপারে কথা হয়ে আছে। কিন্তু পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটার উপরই নির্ভর করবে আগামী দিনের কাজ।

• সবশেষে _

একটাই প্রার্থনা- সব কিছু ঠিক হয়ে যাক। আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠুক আমাদের জীবনযাত্রা। ততদিন সবাই নিরাপদে থাকুক। সবার কাছে আমার নিজের জন্যও দোয়া চাইছি।

ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে

আমার আছে জল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জোনাকির আলো টপ নিউজ পূর্ণতা বইমেলা বিদ্যা সিনহা মিম লাক্স ফটোসুন্দরী শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেজা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর