শিল্পীদের আরটিভি’র চিঠি: ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ
২৭ জুন ২০২০ ২১:২২
‘মানবিক কারণ’ উল্লেখ করে অভিনয় শিল্পীদের অভিনয়ে ফেরার আহ্বান জানিয়ে আরটিভি’র পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিঠিতে ক্যামেরাম্যানসহ অন্যান্য কলাকুশলীদের নাম ব্যবহার করে আরটিভি তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ভবিষ্যতে ক্যামেরাম্যান পেশাদারদের নাম না ব্যবহার করতেও অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের ‘মানবিক কারণে শুটিংয়ে ফেরার আহ্বান’ জানিয়ে গত ২২ জুন চিঠি দেয় আরটিভি। বুধবার (২৪ জুন) আহ্বায়ক নাভিদ খান চৌধুরী ও সদস্য সচিব নিয়াজ মাহবুবের সই করা চিঠিতে আরটিভি’র ওই চিঠির প্রতিবাদ জানায় ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কারণে ২০ মার্চ থেকে টেলিভিশন নাটকের শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শর্ত মেনে শুটিং শুরু হয়েছে গত ১৭ মে থেকে। কিন্তু অধিকাংশ শিল্পী শুটিংয়ে ফিরছেন না। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছেন। এ অবস্থায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান।
তার উদ্যোগে চ্যানেলটির অনুষ্ঠান প্রধান দেওয়ান শামসুর রকিবের সই করা এক চিঠি পাঠানো হয় দেশের কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর বাসায়। এ তালিকায় রয়েছেন মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, আফরান নিশো, তাহসান খান, মেহজাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, তানজিন তিশা ও সাফা কবির।
চিঠিতে লেখা হয়, ‘আপনারা না হয় কয়েক মাস কাজ না করে বাসায় থাকতে পারছেন। কিন্তু শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ কর্মী দিন আনে দিন খায়। আপনারা শুটিংয়ে নিয়মিত হলে তারাও কাজ পাবে, বাঁচবে তাদের জীবন ও সংসার। টিভি পর্দাগুলোতেও ফিরবে নতুন নাটক। পুরো টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরবে প্রাণ।’
এ চিঠির এক জায়গায় বলা হয়, ক্যামেরাম্যান, সহকারী পরিচালক, মেকআপ আর্টিস্ট, প্রোডাকশন বয়, ক্যামেরাম্যান সহকারীসহ অন্যান্য কলাকুশলীরা অর্থকষ্টে ভুগছেন।
এ জায়গাতে প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। দেওয়ান শামসুর রকিবকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে তারা বেশ শক্ত ভাষায় বলেছে, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মনে করে, আপনি আপনার চিঠিতে ক্যামেরাম্যান পেশার নাম ব্যবহার করে আপনার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করেছেন।
এ কারণে সংগঠনটির সকল সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে— এমনটাও লেখা হয়েছে চিঠিতে।
সহায়তার বিষয়ের সমালোচনা করে লেখা হয়, আপনার বা আপনার চ্যানেলের যদি ক্যামেরাম্যানদের অর্থকষ্টের কথা এতই উপলব্ধি হয়ে থাকে, তাহলে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা পরিস্থিতিতে আপনি বা আপনার চ্যানেল কোনো চিঠি ক্যামেরম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জন্য পাঠাননি কেন?
শুটিং দলবদ্ধ প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন বিভাগ এর সঙ্গে যুক্ত ও কাউকে ছাড়া শুটিং সম্ভব নয়— এমনটা উল্লেখ করে ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ লিখেছে, ‘কিন্তু আপনি আপনার চিঠির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই ১০ জন অভিনয়শিল্পী যদি শুটিং না করে তাহলে ক্যামেরাম্যানসহ অন্যান্য কলাকুশলীরা অর্থকষ্টে পড়বে এবং জীবনধারণ তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রধান পদে থেকেও আপনার এরকম মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।’
সবশেষে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভবিষ্যতে ক্যামেরাম্যান পেশার নাম ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।