বর্ণিল অধ্যায়ের অবসান
৯ আগস্ট ২০২০ ১৯:১২
২০২০ সালে একের পর দেশ বরেণ্য মানুষেরা চলে যাচ্ছেন। সে তালিকায় যুক্ত হলেন সুরকার ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী। রবিবার (৯ আগস্ট) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনের বিরাট একটি অধ্যায়ের অবসান হলো।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুরকার ও গীতিকার হিসেবে আলাউদ্দিন আলী অসংখ্য জনপ্রিয় গান রেখে গিয়েছেন। তার সুর করা বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে — ও আমার বাংলা মা তোর, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, এই দুনিয়া এখন তো আর, আছেন আমার মোক্তার, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, হারানো দিনের মত হারিয়ে গেছ তুমি, হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ, চোখের নজর এমনি কইরা, এমনও তো প্রেম হয়, কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিলো না, পারিনা ভুলে যেতে, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, দু:খ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, বাবা বলে গেলো আর কোনোদিন, ভেঙেছে পিঞ্জর, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, আমায় গেঁথে দাও না মাগো, আমি আছি থাকবো, কত কাঁদলাম কত সাধলাম, তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া, আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, এত ভালোবেসেনা আমায়, এ সুখের নেই কোনো সীমানা, বৃষ্টিরে বৃষ্টি আয়না জোরে, কিছু কিছু মানুষের জীবনে, তোমাকে চাই আমি আরো কাছে, শেষ করোনা শুরুতে খেলা, বুকে আমার আগুন জ্বলে, আকাশের সব তারা ঝরে যাবে, এক হৃদয়হীনার কাছে, ইস্টিশনের রেলগাড়িটা।
আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতার নাম জোহরা খাতুন। আলাউদ্দিন তার পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতে শিক্ষা নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭৫ সালে থেকে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৭৯), কসাই (১৯৮০), যোগাযোগ (১৯৮৮) এবং লাকে একটা (১৯৯০) চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ‘প্রেমিক’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।
গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।
দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।
লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দিন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তার সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।