Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা নিয়েই আমার ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’


১৫ আগস্ট ২০২০ ১৪:১৫

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলেবেলা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র। ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ নামে সরকারি অনুদানের এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার। যিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। বেশ কয়েক বছর সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গেজেট আকারে প্রকাশিত দুই বছরের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জুরি বোর্ডের কমিটিতেও দেখা গেছে এই পরিচালক নেতার নাম।

বিজ্ঞাপন

২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অন্যতম ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ পেয়েছে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবির প্রযোজনাও করবেন মুশফিকুর রহমান গুলজার।

‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ মুশফিকুর রহমান গুলজার’র দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ছবি। দিনের পর দিন সময় ব্যয় করেছেন তার এই ছবি নিয়ে। সেসব গল্প শোনালেন সারাবাংলা’কে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলা’র স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট আশীষ সেনগুপ্ত —

• ‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে সিনেমা বানানোর আগ্রহটা _

‘বঙ্গবন্ধু’ আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি- তাঁকে নিয়ে সিনেমা বানানোর ইচ্ছেটা আমার বহুদিনের। আমি গোপালগঞ্জের লোক। আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে গোপালগঞ্জেই। ছোটবেলা থেকেই বয়স্কদের মুখে ‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে প্রচুর গল্প শুনতাম। বলা যায় তখন থেকেই ‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে আমার মধ্যে একটা কৌতূহল সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তাঁর কিশোরকাল নিয়ে আমার আগ্রহটা বেশিই ছিল।

পরবর্তিতে আমি ‘বঙ্গবন্ধু’র কিশোরকাল নিয়ে যত লেখা পেয়েছি, তা অধিকাংশই সংগ্রহ করে পড়ে নিয়েছি। পাশাপাশি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটা থেকেও তাঁর কিশোর জীবনের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যেটা আমি নেয়ার চেষ্টা করেছি। উনি এখানে সবকিছুই বর্ননা করে গেছেন। মূলত আমি এগুলো নিয়েই কাজ করছি।

• প্রসঙ্গঃ ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ _

‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ মানে বঙ্গবন্ধু’র কিশোর জীবন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, আমি যখন ছোট, তখন আমার পরিবারের বড়দের সাথে ‘বঙ্গবন্ধু’র সরাসরি তিনটি জনসভায় আমি অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। সেই জনসভা গুলোর স্মৃতি এখনো আমি আমার হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। শুনেছি ‘বঙ্গবন্ধু’ আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়েছেন। আমার বাবার সঙ্গে মত বিনিময় করেছিলেন। যার ফলে ‘বঙ্গবন্ধু’ মানেই আমার কাছে বিশাল এক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ক্ষেত্র। সে কারনেই আমার এই ছবি বানানোর প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে আমি সরকারের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ সরকারি অনুদানটা পেয়েছি বলেই আমার স্বপ্নটা সফল করতে পারছি।

বিজ্ঞাপন

• এই ছবি নিয়ে আপনার প্রস্তুতি _

বিগত দশ বছর যাবত আমি এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। এই দশ বছরে তাঁকে নিয়ে প্রচুর পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁকে যারা চিনতেন, জানতেন- তাদের কাছ থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছি। গত একবছর যাবত আমি স্ক্রিপ্টের কাজে হাত দিয়েছি। আর এই কাজটা করছেন আমাদের দেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা। আমরা একসঙ্গে অনেক গুলো বৈঠকে বসি। তাকে আমি আমার পরিকল্পনাটা শেয়ার করি। এরপর সে স্ক্রিপ্টটা তৈরি করে।

• এই ছবির জন্য বিশাল অংকের সরকারি অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশি স্পন্সরও খুজছেন, কারণ _

আমি যে পরিমান অনুদান পেয়েছি, সেই টাকা দিয়ে আসলে এই মাপের একটা ছবি বানানো সম্ভব নয়। সেটা যারা অনুদান কমিটিতে ছিলেন, তারাও জানেন। কারণ এ রকম একটা ছবি বানাতে গেলে অনেক আয়োজনের দরকার। যার ফলে অনুদান কমিটি তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটাই আমাকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এটার পরিমান সত্তর লক্ষ টাকা। যেহেতু এই পরিমান টাকা দিয়ে এত বড় মাপের একটা ছবি বানানো সম্ভব নয়, তাই আমি চেষ্টা করছি বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও কিছু স্পন্সর নেয়ার। কারণ স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী যে পরিমান জনসমাগম, পাশাপাশি সেই আমলের বাড়ি বানানো, জিনিষ-পত্র গুলো সংগ্রহ করা- এসবেই অনেক বাজেট রাখতে হচ্ছে। যার ফলে স্পন্সর বা সহযোগী নেয়া ছাড়া উপায় নেই।

• এটাকে কি আন্তর্জাতিক মানের একটা ছবি হিসেবেই তৈরি করতে চাচ্ছেন _

আমার লক্ষ্য একটাই- একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে এই ছবি নির্মাণ করা। প্রতিটি চরিত্র থেকে শুরু করে যাবতীয় আয়োজন একেবারে সঠিক এবং পরিপূর্ণ হতে হবে। এর জন্য যত কষ্টই হোক, আমি তা করতে রাজি আছি। ‘বঙ্গবন্ধু’ সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গা থেকে যে পরিমান তথ্য ও উপাত্ত আমি পেয়েছি, সেই অনুযায়ী একেবারে পারফেক্ট এবং সেটা যেন আন্তর্জাতিক মানের একটা সিনেমা হয় আমি সেই চেষ্টা করছি। এই ছবিতে অবশ্যই সাব-টাইটেল থাকবে। হয়ত এমনও হতে পারে ইংরেজিতে ডাবিংও করতে পারি। অবশ্য এটা সময়ই বলে দেবে।

• ভারতের চলচ্চিত্রকার শ্যাম বেনেগালও ‘বঙ্গবন্ধু’কে ছবি বানাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আপনার এই ছবিটা _

শ্যাম বেনেগালের ছবির সঙ্গে এটার সম্পৃক্ততা বা সংযোগ- কোনটাই নেই। উনার চলচ্চিত্রে ‘বঙ্গবন্ধু’র রাজনৈতিক জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিষয় গুলো থাকবে। পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধু’র জন্ম পরিচয় বা শিশু কালের কিছু তথ্য থাকবে। কিন্তু আমারটাতে আমি শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’র কিশোর-কালটাকেই তুলে ধরবো। যেখানে তাঁর রাজনীতির সঙ্গে কোন সম্পর্ক তখনও গড়ে উঠে নাই। কিন্তু সচেতনতা তৈরি হয়েছে। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার আগেই উনার মধ্যে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, অবিচার দেখলে প্রতিরোধ করা, বিশেষ করে যে শোষিত মানুষের প্রতি উনার মধ্যে যে মানবিকতা দেখা যায়- সে বিষয় গুলিই হচ্ছে আমার চলচ্চিত্রের মূল বক্তব্য।

• শুটিং শুরু করছেন কবে? _

আমি এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিতে চাচ্ছি। বিশেষ করে এই বর্ষাকালেই কিছু শুটিং করে ফেলতে চাই। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে করোনার প্রকোপটার উপর। যদি এটা এরমধ্যে কমে আসে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠে, তাহলে এই ভাদ্র মাসেই শুটিং শুরু করবো। আমার টার্গেট ২০২১ সালের ১৭ মার্চের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করা।

• পরিচালনায় আপনার দীর্ঘদিন বিরতি, কারণ _

মাঝখানে একটা দীর্ঘ বিরতিই গেল। আমি শেষ ছবি বানিয়েছিলাম ২০১৬ সালে। আসলে এই কয়েক বছর ছবি বানানোর মত পরিবেশ একেবারেই ছিলনা। যদিও এর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রযোজক আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, কিন্তু আমি সাহস পাইনি। সিনেমা হল, দর্শক, বলা যায় সবকিছু মিলিয়ে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিল। এখনো একই অবস্থা। বরঞ্চ আরও খারাপ হয়েছে। সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ- আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। দেশের চলচ্চিত্রকে ভালোবাসুন। বর্তমান পরিস্থিতির কারনে সবকিছু বন্ধ হয়ে আছে। আশা করছি এই পরিস্থিতি কেটে যাবে। এই দুরবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

• সবশেষে _

শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। আজ জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিন খুব ভোরে একদল ঘাতক, যারা ছিল আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্রের চর, তারা নির্মম ভাবে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। তারা সেদিন হত্যা করেছিল শতাব্দির মহানায়ক, সারা বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর, বাঙ্গালীর মুক্তির দূত এবং বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই শোকাবহ দিনটিকে আমরা গভীর বেদনা ও মর্ম যাতনা নিয়ে স্মরণ করি। সেই সাথে বঙ্গবন্ধুসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যাঁরা শাহাদাৎ বরন করেছেন তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ সবাইকে জান্নাতবাসি করুন। মহান নেতার প্রতি গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি জাতীয় শোক দিবস টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাসুম রেজা মুশফিকুর রহমান গুলজার শ্যাম বেনেগাল

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর