Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন’র ৭১তম জন্মবার্ষিকী


১৮ আগস্ট ২০২০ ১২:৩৪

বাংলা নাটকের নতুন ধারার প্রবর্তক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন- যিনি তার সৃষ্টিকর্ম দিয়ে অমর হয়ে আছেন বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে। পৃথিবীতে কিছু মানুষ খুব কম সময়ের জন্য জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তারা নিজ কর্মগুনে অমর হয়ে থাকেন পৃথিবীর মানুষের কাছে। নাট্যকার সেলিম আল দীন সেইসব মানুষদের একজন।

আজ (১৮ আগস্ট) বাংলা নাটকের শেকড় সন্ধানী এই নাট্যকারের ৭১তম জন্মবার্ষিকী। ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফিরোজা খাতুন ও মফিজউদ্দিন আহমেদ দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। ফেনীতে জন্ম হলেও বাবার চাকরির সূত্রে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। বাবার চাকরি সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সেলিম আল দীন। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটক।

বিজ্ঞাপন

পেশাদার লেখক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যেই ভাবা সেই কাজ। কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রথম তিনি লেখেন ১৯৬৮ সালে। এরপর তিনি যতোদিন বেঁচে ছিলেন ততোদিন লিখে গেছেন অবিরত। তার লেখনিতে সৃষ্টি হয়েছে কালজয়ী সব নাটক। যা বাংলাদেশের নাট্য জগতে বাইবেল হয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন। যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে কপি রাইটার হিসাবে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সপ্নদ্রষ্টা । ঢাকা থিয়েটার ও গ্রাম থিয়েটারের কাজ করার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাই নয় ‌‌‘আমরা নাট্য শ্রমিক,নাটক আমাদের শ্রম ও ঘামের ফসল’- এই স্লোগানটিও তার লেখা।

সাংস্কৃতিক কর্মীদের তীর্থস্থান ‘সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ’র (পূর্বে যার নাম ছিল শুধু মুক্তমঞ্চ) পরিকল্পনাকারী নাট্যচার্য সেলিম আল দীন। ঢাকা ও গ্রাম থিয়েটারের পাশাপাশি নাটককে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। এই বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি দ্বৈতা-দ্বৈতাবাদের আলোকে লেখেন কালজয়ী সব নাটক। বাংলা নাটকের ইতিহাসে তিনি প্রথম বাংলা নাট্যকোষ রচনা করেছেন।

সেলিম আল দীন রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মুনতাসির’, ‘শকুন্তলা’ ও ‘কীত্তনখোলা’। এছাড়া ‘কেরামত মন্ডল’, ‘যৈবতি কন্যার মন’, ‘চাকা’, ‘হরগজ’, ‘প্রাচ্য’, ‘হাতহদাই’, ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য (গবেষণা)’, ‘একটি মারমা রুপকথা’, ‘বনপাংশুল’, ‘নিমজ্জন’, ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’, ‘পুত্র’।

তার লেখা বেশ কয়েকটি নাটক থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। সেসবের মধ্যে ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয় ‘চাকা’, ‘কীত্তনখোলা’ নাটক থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ২০০০ সালে। এছাড়া তিনি ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা করেন। সবশেষ তার নাটক ‘যৈবতি কন্যার মন’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যেটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

সেলিম আল দীনের লেখনিতে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে সবসময়। তিনি তার নাটকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন। সেই সাথে তার লেখায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেলিম আল দীন অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। তার রচনা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সেলিম আল দীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের প্রয়ান দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর