গায়ে জ্বর নিয়ে হাসপাতালেই ৭২ বছর পূর্ণ করছেন নায়ক ফারুক
১৮ আগস্ট ২০২০ ১৭:৩৯
বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় নায়ক ‘ফারুক’। চলচ্চিত্রের সবার কাছে ‘মিয়া ভাই’ নামে পরিচিত কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র অভিনেতার আজ জন্মদিন। এমনিতেই তিনি তার জন্মদিন পালন করেন না। তার উপর এবারের জন্মদিনটি কাটছে আরও বিষাদে। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। আর সেখানেই গায়ে জ্বর নিয়ে ৭২ বছর পূর্ণ করছেন এই অভিনেতা।
শারীরিক অসুস্থতা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে অভিনেতা ফারুক জানালেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছিলো। অবশেষে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে ১৬ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জ্বর কমছে না। করোনা টেস্ট করিয়েছি দুইবার। আলহামদুলিল্লাহ, নেগেটিভই এসেছে। সেদিক থেকে দুশ্চিন্তা নেই। দোয়া চাই যেন সুস্থ হয়ে উঠি দ্রুত।’
চার দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ফারুকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। কিন্তু এই বিশেষ দিনটি কখনোই পালন করেন নি তিনি। জানা যায়, দুটো কারণে তিনি জন্মদিন পালন করেন না- যার প্রথমটি মাত্র আট বছর বয়সে ফারুক তার মা আফজালুন্নেসাকে হারানো। মা’য়ের মৃত্যুর পর থেকেই জন্মদিন নিয়ে কখনোই তার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল না।
দ্বিতীয় কারণ ‘বঙ্গবন্ধু’র প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসায়। বঙ্গবন্ধু’র বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। তাই ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই কখনোই এই দিনটাকে পালন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে কোনোদিনই আমার কোন বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিলো না। আগস্ট হচ্ছে আমাদের শোকের মাস। এ মাসে আমরা হারিয়েছি আমাদের মহান নেতাকে, আমাদের জাতির পিতাকে। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি জন্মদিন পালন করি না। এছাড়াও ছোটবেলায় মায়ের মৃত্যু আমার মনটাকে একদম বিষিয়ে দিয়েছে। মাকে হারানোর পর থেকেই আমার জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত এগিয়েছে সংগ্রাম, নিষ্ঠুরতা আর নির্মম অভিজ্ঞতায়।’
পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। কিন্তু ‘ফারুক’ নামেই ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। সে ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ নামের দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। তবে তিনি নায়ক হিসেবে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ ছবি দুটির মাধ্যমে। এই দুটি ছবিই ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত হয়েছিলো। এমনকি সেই বছর ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন ফারুক।
এরপর থেকেই আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক জনপ্রিয় ও দর্শকনন্দিত ছবিতে অভিনয় করে গেছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে- ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘সখী তুমি কার’, ‘মিয়া ভাই’, ‘দাঙ্গা ফ্যাসাদ’, ‘পালকি’, ‘ভাই ভাই’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জীবন সংসার’, ‘এখনো অনেক রাত’, ‘কোটি টাকার কাবিন’ ও ‘দাদি মা’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশের চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৬ সালে ফারুককে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১৯৭১ সালে চলচ্চিত্রে যেমন তার অভিষেক ঘটে, ঠিক একই বছর বাংলার দামাল ছেলে হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামনের ডাকে সারা দিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সেই স্কুল জীবন থেকেই। যোগ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনেও। যার ফলে সে সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
চলচ্চিত্র জীবনের বাইরে আরও দুটি পরিচয় রয়েছে নায়ক ফারুকের- একজন ব্যবসায়ী ও একজন রাজনীতিবিদ। গাজীপুরে অবস্থিত নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। এছাড়াও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে ফারুক বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। তাদের দুই সন্তান- ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও রওশন হোসেন।
আজকের এই দিনে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামে জন্ম নেয়া এই মানুষটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘আমি সবার দোয়া চাই। যারা আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন তাদের জন্য আমার ভালোবাসা।’
শুভ জন্মদিন ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী।
আকবর হোসেন পাঠান দুলু চিত্রনায়ক ফারুক ঢাকা ১৭ মিয়া ভাই সংসদ সদস্য সাদাকালো যুগের নায়ক