Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ শতবর্ষে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়


২৬ আগস্ট ২০২০ ১৪:২৮

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়- বাংলা চলচ্চিত্রে একটি ইতিহাসের নাম। যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে হাস্যকৌতুকের সংজ্ঞাটাকে বদলে দিয়েছিলেন। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার যে উপাদান, তিনি যেন তা নিয়েই জন্মেছিলেন এই বঙ্গে। তাকে যারা কমেডিয়ান বলতেন, তাদের কাছে হয়ত অন্য শব্দ ছিল না। তিনি কমেডিয়ান নন, একজন পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা। অভিনয়ের সব উপাদান গুলো শাণিত করেই জন্মেছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ (২৬ আগস্ট) এই মহান শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকী।

আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে এই বাংলায় জন্ম হয়েছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়’র- ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। পুরো শিক্ষাকাল কেটেছে ঢাকায়। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি’স হাই স্কুল এবং জগন্নাথ কলেজে শিক্ষা শেষ করে ১৯৪১ সালে কলকাতায় চলে যান ভানু। সেখানে তিনি আয়রন এন্ড স্টীল কম্পানি নামে একটি সরকারি অফিসে যোগ দেন এবং বালীগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে তার বোনের কাছে দু’বছর থাকার পর টালিগঞ্জের চারু অ্যাভিনিউতে বসবাস শুরু করেন।

১৯৪৭ সালে ‘জাগরণ’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হয় ভানু বন্দোপাধ্যায়ের। একই বছর ‘অভিযোগ’ নামে আরেকটি ছবি মুক্তি পায় তার। এরপর ধীরে ধীরে ছবির সংখ্যা বাড়তে থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৪৯ সালে ‘মন্ত্রমুগ্ধ’, ১৯৫১ সালে ‘বরযাত্রী’, এবং ১৯৫২ সালে ‘পাশের বাড়ি’।

১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি। বলা যায় এই ছবির মাধ্যমেই ভানু দর্শকদের নিজের অভিনয়ের গুণে আকৃষ্ট করা শুরু করেন। এর পরের বছর মুক্তি পায় ‘ওরা থাকে ওধারে’। ১৯৫৮ সালটিতে মুক্তি পাওয়া অনেক ছবির মধ্যে দু’টি ছিল ‘ভানু পেল লটারি’ এবং ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় ‘পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’- এই ছবিতে ভানু নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন, বিপরীতে ছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘৮০তে আসিও না’ ছবিটিতেও ভানু নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন, এবং এখানেও উনার বিপরীতে ছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। ১৯৬৭ সালে ভানুর আরো একটি ছবি মুক্তি পায়, ‘মিস প্রিয়ংবদা’, যে ছবিটিতে উনি চরিত্রের প্রয়োজনে মহিলা সেজে অভিনয় করেন। ভানুর ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। ১৯৮৪ সালে ‘শোরগোল’ ছবিটিই তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় চরিত্রাভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই স্মৃতিচারণ করে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘কখনও আফসোস করতে দেখিনি ভানুদাকে। অনেক ঝড় এসেছে জীবনে। তবে সমবেদনা চাননি। কারও কাছে হাতজোড় করে সাহায্য প্রার্থনা করেননি। লড়াকু মানুষ ছিলেন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসলে নকল করা যায় না। তার থেকে উত্তাপ নেওয়া যায়।’

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, ‘উনি কমেডিয়ান নন। একজন পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা। তবে দর্শক ভালোবেসেই কমেডিয়ান বলতেন। আসলে কমেডিয়ান হতে গেলে সব দিক পরিক্রমা করে আসতে হয়। যিনি হাসাতে পারেন, তিনি দর্শকের চোখে জলও আনতে পারেন। যেমন চার্লি চ্যাপলিন। দেখে হাসছেন, কিন্তু কখন যে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে, বুঝতে পারবেন না। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও তেমন।’

১৯৮৩ সালের ০৪ মার্চ কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন আপামর বাঙালির প্রিয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজীবন যিনি বাঙালিকে হাসিয়েছেন, সেই তিনিই নিজের শেষযাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, ততদিন স্বমহিমায় বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন শততম জন্মবার্ষিকী শতবর্ষে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর