‘সুশান্তের টাকা মানেই আমার টাকা’, গণমাধ্যমে মুখ খুললেন রিয়া!
২৭ আগস্ট ২০২০ ২২:০৭
‘সুশান্তের টাকা মানেই আমার টাকা। কারণ আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকতাম, তাই ওর টাকা আমারই!’ ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের আলোচিত প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এই প্রথম কোন গণমাধ্যমে মুখ খুললেন রিয়া। ভারতীয় সংবাদ চ্যানেল ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাকে ঘিরে জমতে থাকা বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন তিনি।
সুশান্তের মৃত্যুর পর যে বিষয়টি সব থেকে বেশীই আলোচনা হচ্ছে, তা হল পরিচালক মহেশ ভাটের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক। এই প্রসঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে রিয়া জানালেন, ‘সুশান্তের কাছে আঘাত পেয়েই ভাট সাহেবকে ফোন করি।’ মহেশ ভাটের সঙ্গে সুশান্ত আর তার সম্পর্ক নিয়ে কোনও মেসেজ বিনিময় করেননি তিনি। সুশান্তকে ছাড়ার বিষয়ে মহেশ ভাট তাকে কোনরকম মদত দেয়নি বলে জানিয়েছেন রিয়া। বললেন, ‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। আমি সুশান্তকে ছেড়ে চলে আসার পরেও ও আমায় ফিরে ডাকল না। ফোন অবধি করল না। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম আমি অসুস্থ বলে সুশান্ত আর আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। এত খারাপ লেগেছিল যে ভাট সাহেবকে ফোন করি।’
সুশান্তের যাবতীয় ব্যবসার অংশীদার ছিলেন রিয়ার ভাই সৌভিক চক্রবর্তী। সুশান্তের কোম্পানি নিয়ে তার আর সৌভিকের ভূমিকা ঘিরে নানা গুজব ছড়ানো হয়েছে দাবি করে রিয়া বললেন, ‘সুশান্ত এত ভালবাসত সৌভিককে যে আমরা বলতাম আমার ভাই আমার সতিন। সুশান্তের জেদেই আমাদের ইতালি ট্রিপে সৌভিক এসে যোগ দেয়। আর এই ভালবাসার জন্যই সুশান্ত আমাদের দু’জনকে ওর ড্রিম প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত করে।” রিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই কোম্পানির জন্য তিনি আর তার ভাই সমান টাকা সুশান্তকে দেন। রিয়া জানালেন যে তিনি, সৌভিক এবং সুশান্ত মিলে রিলেটিক্স নামের সংস্থাটি শুরু করেন। সকলের এতে ৩৩.৩৩ শতাংশ টাকা দিতে হয়েছিল৷ বললেন, ‘ভাইয়ের (সৌভিকের) চাকরি ছিল না বলেই ওর টাকা আমি সুশান্তের ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করি। সুশান্তের কোম্পানি সংক্রান্ত শুধু এই লেনদেন হয়েছে আমাদের। বাকি সব মিথ্যে।’
সুশান্ত আর তার ইউরোপ ট্রিপ নিয়ে যা নয় তাই বলা হচ্ছে বলে সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিয়া। এমনটাই নাকি বলা হচ্ছে যে, সুশান্তের সব টাকা যেন রিয়াই নষ্ট করেছেন। রিয়া বলেন, ‘সুশান্ত হাই লিভিং-এ বিশ্বাস করত। আমার প্যারিসে যাওয়ার কথা, ফ্যাশন শুটের জন্য। ওরা আমায় যাতায়াত আর থাকার খরচা সব দিয়েছিল। সুশান্ত সে সব বাতিল করে বিজনেস ক্লাসে টিকিট কাটল। ইউরোপ ট্রিপ প্ল্যান করল। বড় হোটেলের খরচ ও-ই দিল। আমিও নিয়েছি। কেউ কেন বলবে আমি ওর টাকায় চলেছি? বরং বলব, এটা ওর সিদ্ধান্ত! আমরা তো স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকতাম। সেই ভাবেই সুশান্ত আমার প্রতি ভালবাসা থেকেই খরচ করত।’
এ প্রসঙ্গে রিয়া আরও জানালেন যে, সুশান্ত শুধু তার সঙ্গেই নয়, বেশ অনেক দিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে থাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়ে ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। প্রাইভেট জেট নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই রিয়া এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘কার কী বলার আছে বলুন তো? সুশান্ত নিজের পয়সায় কী ভাবে জীবন চালাবে? ওর থাইল্যান্ড ট্রিপ নিয়েও কি বলা হবে যে, ওর বন্ধুরা জোর করে ওর টাকা নিয়েছিল? তা হলে আমার ক্ষেত্রে কেন বলা হচ্ছে?’
সন্দীপ সিং আর রিয়াকে জড়িয়ে যে তথ্য চারিদিকে ছড়িয়েছে সেই প্রসঙ্গে রিয়া বলেন, ‘আমি এই নামে কাউকে চিনি না। সুশান্তের এত বন্ধু অথচ তাকে বাড়িতে দেখলাম না, ফোন করতেও না। অদ্ভুত!’
মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাট থেকে সুশান্তের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ময়নাতদন্তের জন্য। অভিযোগ উঠেছে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও সেখানে গিয়েছিলেন রিয়া। পরবর্তীতে জানা গেছে সুশান্তের মৃতদেহ ছুঁয়ে ‘স্যরি’ বলতে গিয়েছিলেন রিয়া। এ প্রসঙ্গে রিয়া জানালেন যে, সুশান্তের মৃত্যুর খবর এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন তিনি! বলেন, ‘প্রথমে চুপ করেছিলাম। কান্না পাচ্ছিল। কিছুই করে উঠতে পারিনি। পরে যখন ওর শেষকৃত্যে যেতে চাইলাম তখন শুনলাম, ওর পরিবার আমার নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু একবারও সুশান্তকে দেখতে পাবেন না তিনি?- এই প্রশ্নই নাকি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল তাকে! বললেন, ‘তাই মর্গে যাই। ওকে শেষ বার প্রণাম করতে চেয়েছিলাম। একজন ভারতীয় জানে এই প্রণামের কী মানে!’
কিন্তু সুশান্তের মৃতদেহ ছুঁয়ে ‘সরি বাবু’ বলেছিলেন কেন রিয়া? সে ব্যাপারে রিয়া বললেন, “কী বা বলতে পারতাম? এত গুণী মানুষের এই পরিণতি? তার জন্য ‘সরি’। তার মৃত্যু তো প্রহসন হয়ে গিয়েছে, সেই জন্য ‘সরি’। ওর মৃত্যু নিয়ে গল্প লেখা হচ্ছে, সেই জন্যও ‘সরি”… বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিয়া!
মহেশ ভাট রিয়া চক্রবর্তী সন্দীপ সিং সুশান্ত সিং রাজপুত সৌভিক চক্রবর্তী