Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সৌন্দর্যের দেবী’র জন্মদিন আজ


২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৪৮

‘সৌন্দর্যের দেবী’- সোফিয়া লরেন। জীবনটাই যেন তাঁর একটা পুরোদস্তুর সিনেমা! ইতালির এক হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডের বারান্দায় আজ থেকে ৮৬ বছর আগের এক শরতে জন্মেছিলেন ‘জন্মের স্বীকৃতিহীন’ কন্যা হিসেবে।

মা নাম রেখেছিলেন সোফিয়া ভিলানি সিকোলেন। নামের শেষ অংশটুকু নানার বংশপদবী। কারণ জন্মের পর বাবা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁকে স্বীকৃতি দিতে। এরপর শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যে, নেপলসের বস্তিতে।

খুব ছোটবেলায় খুবই হালকা-পাতলা থাকায় সোফিয়া ভিলানিকে ডাকা হতো ‘টুথপিক’ নামে। আর এই ‘টুথপিকই’ একসময়ে নিজের অভিনয় প্রতিভা এবং সৌন্দর্য দিয়ে মাতিয়েছেন বিশ্ব। সারাবিশ্ব তাঁকে কল্পনা করতো সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে। একেবারে শূন্য থেকে জীবন শুরু করে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান তারকার একজন হিসেবে। মনোবল, মেধা ও সৌন্দর্যের গুণে অর্জন করেছেন দুনিয়াজুড়ে মানুষের ভালোবাসা।

১৯৪৮ সাল, সোফিয়ার তখন ১৪ বছর বয়স। সে সময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের তালিকায়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই প্রতিযোগিতায়ই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ইতালির চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন।

১৯৫০ সালে মুক্তি পায় সোফিয়া লরেন অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম ক্যাপাটাজ’। পরের এক দশকে ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘হাউসবোট’, ‘ইয়েস্টারডে, টুডে অ্যান্ড টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’, ‘দ্য ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’, ‘ম্যান অব লা মাঞ্চা’, ‘দ্য কাসান্ড্রা ক্রসিং’-এ স্পেশাল ডে’সহ অসংখ্য ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এ অভিনেত্রী। ‘ওম্যান অব দ্য রিভার’ ছবির মাধ্যমেই সোফিয়া লরেন ১৯৫৫ সালে ইতালির সেরা অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন।

সোফিয়া লরেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান ১৯৫৫ সালে ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘বয় অন এ ডলফিন’ ও ‘দ্য প্রাইড অ্যান্ড দ্য প্যাশন’ ছবিতে অভিনয় করে। প্রথম ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অ্যালান ল্যাড। দ্বিতীয়টির নায়ক ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা ও ক্যারি গ্রান্ট। ছবি দুটির পরিচালক ছিলেন ‘জাজমেন্ট অব ন্যুরেমবার্গ’, ‘গেস হু’স কামিং টু ডিনার’ খ্যাত স্ট্যানলি ক্র্যামার।

ষাট ও সত্তর দশকে সোফিয়া লরেন ছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয়তম অভিনেত্রী। ইউরোপ ও আমেরিকায় তিনি সমানতালে অভিনয় করেন পল নিউম্যান, মার্লন ব্র্যান্ডো, গ্রেগরি পেক, চার্লটন হিউস্টনদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে। অস্কার তো বটেই, জিতে নেন পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড।

সোফিয়া লরেন বিয়ে করেছিলেন ১৯৫৭ সালে। বর সেই চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টি। যিনি সোফিয়াকে সুযোগ দিয়েছিলেন চলচ্চিত্রে। আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি সোফিয়াকে বিয়ে করেন।

বিয়ের পরে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন সোফিয়া। ১৯৬০ সালে ক্লার্ক গেবলের বিপরীতে ছবির পর একই বছর পিটার সেলার্সের সঙ্গে ‘দ্য মিলিওনিয়ার্স’, চার্লটন হেস্টনের বিপরীতে ১৯৬১ সালে ‘এল সিড’ ছবিতে অভিনয় করে নাম কুড়ান। ১৯৬২ সালে তিনি ‘টু উইমেন’ ছবির জন্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। চার্লি চ্যাপলিন পরিচালিত শেষ ছবি ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’-এ ছিলেন সোফিয়া লরেন।

সাড়ে ছয় দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোফিয়া লরেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরো ছবির মধ্যে আছে ‘ওম্যান অব দ্য রিভার’, ‘দ্য কি’, ‘দ্যাট কাইন্ড অব ওম্যান’, ‘হেলার ইন পিংক টাইটস’, ‘বোক্কাচ্চিয়ো ৭০’, ‘ইয়েস্টারডে’, ‘টুডে’, ‘টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’, ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘আ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’, ‘আঞ্জেলা’, ‘রানিং অ্যাওয়ে’, ‘রেডি টু ওয়ার’, ‘বিটুইন স্ট্রেঞ্জারস’, ‘নাইন’ প্রভৃতি। ১৯৮০ সালে এই অভিনেত্রীর জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’।

আশির দশকের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দেন সোফিয়া। দুই ছেলে কার্লো পন্টি জুনিয়র ও অ্যাডৌরা পন্টির জন্মের পর সোফিয়া ধীরে ধীরে পর্দার আড়ালে চলে যেতে শুরু করেন। সময় কাটান স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে।

২০০২ সালে ছেলে এদোয়ার্দো পন্টির পরিচালনায় ‘ইন বিটউইন স্ট্রেনজারস’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০০৭ সালে স্বামী কার্লো পন্টিকে হারান এই অভিনেত্রী। সোফিয়া লরেন সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ২০০৯ সালে, ‘নাইন’ ছবিতে।

ক্যারিয়ারের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মাইলফলক গড়েছেন সোফিয়া লরেন। একাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে বিশেষ সম্মাননা পাওয়া এ অভিনেত্রীর বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারি হতে থাকে খ্যাতি আর পুরস্কার। শুধু অস্কারই জিতেননি তিনি একাধারে পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডও এই গুণী অভিনয়শিল্পীর দখলে।

জন্মদিনে কিংবদন্তি এই গুণী অভিনয়শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাই।

সোফিয়া লরেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর