Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৯১তম জন্মদিনে সুর সম্রাজ্ঞী


২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৪৫

সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর

ভারতীয় সংগীত জগতের সম্রাজ্ঞী বলা হয় তাকে। তার মিষ্টি মধুর কন্ঠ আজও দোলা দেয় শ্রোতাদের মনে। এই উপমহাদেশের মানুষদের তার কণ্ঠ দিয়ে জাদু করে রেখেছেন সেই চল্লিশের দশক থেকে। বলা হয়, যতদিন সংগীত জীবিত থাকবে মানুষের স্মৃতিতে, ততদিন তার কণ্ঠের হাজারেরও বেশি গান নিয়ে যিনি উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন, তিনি ভারতীয় সঙ্গীত জগতে এক নক্ষত্র- সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর।

আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) ৯২ বছরে পা দিলেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতরত্ন সঙ্গীতশিল্পীর সাঙ্গিতীক যাত্রাও অনন্যসাধারণ। সঙ্গীত ও অভিনয় দুই-ই তার রক্তে। কিন্তু অসামান্য প্রতিভার আলয় হয়েও মঙ্গেশকর পরিবারের দিন কাটত অত্যন্ত দারিদ্রে। তাদের বাড়িতে সিনেমার গান খুব একটা শোনা হতোনা। একটি সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর তাদের পরিবারিক পরিবেশ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা খুবই রক্ষণশীল মানুষ ছিলেন। আমাদের সাজপোশাক নিয়েও খুব কড়া মনোভাব ছিল তার। আমরা কখনও পাউডার বা মেকআপ ব্যবহার করতাম না। ইচ্ছামতো বাইরে যাওয়ারও অনুমতি ছিল না। বেশি রাত করে নাটক দেখে ফেরা পছন্দ করতেন না বাবা, এমনকী নিজেদের প্রযোজনা হলেও নয়।’

বিজ্ঞাপন

ভারতরত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর ভারতীয় সঙ্গীত জগতে এক নক্ষত্র। সুর সম্রাজ্ঞী লতাজিকে নানান সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। লতা মানেই কোকিলকণ্ঠী। তিনিই একমাত্র জীবন্ত কিংবদন্তী- যার নামে পুরস্কার দেওয়া হয়।

১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একটি মারাঠি পরিবারে জন্ম লতা মঙ্গেশকরের। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী এবং মারাঠি থিয়েটারের অন্যতম পুরোধা পণ্ডিত। মা শেবান্তি ছিলেন গৃহিণী। লতা তিন ছোট বোন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও মীনা মঙ্গেশকর এবং ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। লতা মঙ্গেশকরের প্রথম নাম হেমা। কিন্তু পরবর্তিতে ‘ভাব বন্ধন’ নাটকে ‘লতিকার’ চরিত্রে প্রভাবিত হয়ে হেমার নাম বদল করে রাখা হয় লতা। বাবার কাছে হাতেখড়ি হওয়ার পর ওস্তাদ আমানত আলী খাঁ সাহেবের কাছে সংগীত শিক্ষা হয় লতার।

বিজ্ঞাপন

১৯৪২ সালে বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ১৩ বছর বয়সী লতাকে পরিবারের জন্য আয়ের হাল ধরতে হয়। এজন্য গান গাওয়া ও অভিনয়ের পথে পা বাড়ান তিনি। এ প্রসঙ্গে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, ‘প্রায়ই রেকর্ডিং করতে করতে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়তাম আমি। ভীষণ খিদে পেত। তখন রেকর্ডিং স্টুডিওতে ক্যান্টিন থাকতো, তাতে নানা রকম খাবার পাওয়া যেত কি না? সে বিষয়ে আমার মনে নেই। তবে চা-বিস্কুট খুঁজে পাওয়া যেত তা বেশ মনে আছে। সারাদিনে এক কাপ চা আর দু চারটে বিস্কুট খেয়েই সারাদিন কেটে যেত। এমনও দিন গেছে যে দিন শুধু পানি খেয়ে সারাদিন রেকর্ডিং করছি , কাজের ফাঁকে মনেই আসেনি যে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খাবার খেয়ে আসতে পারি। সারাক্ষণ মাথায় এটাই ঘুরতো যেভাবে হোক নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাকে।’

১৯৪৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মারাঠি ছবি গজবহুর মাধ্যমে প্লেব্যাক জীবনের শুরু তার। এরপর ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য তার নাম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ স্থান পায়। এ সময় তিনি প্রায় ৩০,০০০ গান রেকর্ড করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বর্তমানে তার গানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার৷

১৯৫৯ সালে সলিল চৌধুরীর পরিচালনায় প্রথম বাংলা গানে কণ্ঠ দেন লতা মঙ্গেশকর। গানটি ছিল ‘না যেওনা, রজনী এখনো বাকি।’ সলিল চৌধুরীর সুরে এরপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তিনি।তার গাওয়া রঙ্গিলা বাঁশিতে, ও মোর ময়না গো, সাত ভাই চম্পা – এই গানগুলি এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

২০ বছর বয়সে মহল ছবিতে যিনি মধুবালার জন্য গেয়েছিলেন অমর সেই গান, ‘আয়েগা আনেওয়ালা’, ৪৪ বছর বয়সে ডিম্পল কাপাডিয়ার জন্য তিনি ববি ছবিতে গাইলেন, ‘হাম তুম এক কামরেমে বন্দ হো’, ৬৯ বছর বয়সে একই শিল্পী যব পেয়ার কিসিসে হোতা হ্যায় ছবিতে ডিম্পলের মেয়ে টুইঙ্কেল খান্নার জন্য গাইলেন, ‘মদহোশ দিল কি ধড়কন’, ৭৫ বছর বয়সে বীরজারা ছবিতে প্রীতি জিনতার জন্য অবলীলায় গেয়ে দিলেন, ‘তেরে লিয়ে হাম জিয়ে!’

ভারতীয় সংগীত জগতের আরেক কিংবদন্তী ছোট বোন আশা ভোঁসলে একসময় ছিলেন লতার ছায়াসঙ্গী। আশার স্বামী রাহুল দেব বর্মনের পরিচালনায় অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তিনি। এগুলোর মধ্যে ‘মেরে ন্যায়না শাওন ভাদো’, ‘বাহো মে চালে আ’ এখনো সবার মুখে মুখে।

পুরোদমে সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার আগে এবং পরেও ছবিতে অভিনয় করেছেন লতা মঙ্গেশকর। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আটটি এবং তারপর মাত্র একটি গানের দৃশ্যের জন্য একটি ছবিতে।

২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন দেয়া হয় তাকে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ৩ বার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার চারবার। এছাড়া পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, রাজীব গান্ধী পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এমন কি ক্রিকেটের প্রতি তার যে দুর্বলতা, তার সম্মানে তারই জন্য একটা বিশেষ আসন বরাদ্দ রয়েছে লর্ডসের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।

লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কে ভারতের প্রথিতযশা পরিচালক যশ চোপড়ার বলেছিলেন, ‘সব শিল্পী সংগীতকে অনুসরণ করে, আর সংগীত অনুসরণ করে লতাকে।’

৯১তম জন্মদিন আশা ভোঁসলে লতা মঙ্গেশকর সুর সম্রাজ্ঞী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর