জন্মদিনে গুরু বললেন, ‘ধৈর্য ধরো’ (ফটো স্টোরি)
২ অক্টোবর ২০২০ ১৫:১৮
ভক্তরা তাকে ভালোবেসে তাকে ডাকে ‘গুরু’ বলে। আর তিনি তাদের ‘দুষ্ট ছেলের দল’। তিনি মাহফুজ আনাম জেমস। বাংলাদেশের কিংবদন্তি ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী। শুক্রবার (২ অক্টোবর) তার জন্মদিন।
সবসময় নিজের ভূবনে বাস করা এ শিল্পী এবারের জন্মদিনে তেমন কোন আয়োজন রাখেননি। তবে তার মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন, রাত ১২টায় কেক কাটা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার দুপুরে তিনি বের হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের উদ্দেশ্যে। সেখানে জুমার নামাজের পর ‘গুরু’র ভক্তরা ব্যবস্থা করেছেন এতিমদের খাওয়ানোর।
জন্মদিন নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় জেমস বলেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। সবাই আমরা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। কিন্তু এত অস্থির হলে চলবে না, ধৈর্য ধরতে হবে। তাই দুষ্ট বন্ধুদের প্রতি আমার একটাই আবেদন, অস্থির হয়ো না, ধৈর্য ধরো। সুদিন আসবেই।’
১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস, তবে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। কিশোর বয়সেই প্রেমে পড়েছিলেন জেমস, সেটা গিটার আর গানের। তবে সরকারি কর্মচারী বাবার সেই প্রেমে মোটেও সাড়া ছিল না। খুব চেষ্টা করেও যখন বাবার কাছে এই প্রেমের সম্মতি পাওয়া গেল না, তখন ঘর ছাড়তে হয়েছিল জেমসকে।
জেমসের নতুন ঠিকানা হলো চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং। সেখানে শুয়ে জেমস স্বপ্ন দেখতেন রকস্টার হওয়ার। তবে ঘর ছেড়ে আর স্বপ্ন দেখেই বসে ছিলেন না জেমস, আজিজ বোর্ডিংয়ে থেকে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’। ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে তখনই কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই কিশোর।
এরপর ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন জেমস। পরের বছর প্রকাশ করেন নিজেদের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এই অ্যালবাম তখন সাড়া না ফেললেও জেমসের কণ্ঠ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবামের ‘জেল থেকে বলছি’ গান দিয়ে জনপ্রিয়তা পান জেমস।
পরে জেমস ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগর বাউল’। এরপর সেই নগর বাউলের বাউল হয়ে জেমস বাংলা ব্যান্ড-সংগীতে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। বাংলা ভাষায় প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরুর পাশাপাশি জন্ম দিয়েছেন কালজয়ী বহু গানের। দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে খ্যাতি পেয়েছেন ভারতেও।
বাংলাদেশের পাশাপাশি বলিউড চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়, যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র হিসেবে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’ চলচ্চিত্রের ‘বেবাসি’ গানের ভিডিওচিত্রেও কাজ করেন জেমস, সেখানে তিনি নিজের গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও খুব জনপ্রিয় জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রীতমের সঙ্গে মিলিত হন। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন।
জেমস ২০১৪ সালে ‘দেশা—দ্য লিডার’ চলচ্চিত্রের ‘দেশা আসছে’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ সিনেমায় ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানের জন্য ফের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জেমস।
শুধু গান নয়, গিটার বাজানোতেও দারুণ পটু জেমস। করেছেন মডেলিংও। গানের মতো খ্যাতি রয়েছে ফটোগ্রাফার জেমসের। এর বাইরে জেমস রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন।