Sunday 14 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবিতা ছিল সৌমিত্রের প্রেয়সী


১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৮:০৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গত ৪১টি দিন ধরে সবার প্রার্থনায় ছিলেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন এই কবি— আপামর বাঙালি শুধু এটুকুই চেয়েছিল ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না ৷ চলে গেলেন রুপালি পর্দার স্বপ্নের নায়কের আড়ালে থাকা চিরায়ত লাজুক কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়— নামটাই ছিল সংস্কৃতিমনা বাঙালির অপার প্রেরণার উৎস। হবেই না বা কেন। তাকে ছাড়া বাঙালির অস্তিত্ব যে অনেকটাই ম্লান। তাকে ছাড়া কে-ই বা রাস্তা আটকে গেয়ে উঠবে ‘কে তুমি নন্দিনী’, তাকে ছাড়া কে অপু হবে; কেইবা প্রখর বুদ্ধি নিয়ে হবে প্রদোষ মিত্র? কিন্তু এই নায়কোচিত সত্ত্বার আড়ালে গোপন গহীনে তার একটা পরিচয় ছিল। তিনি কবি! তিনি আবৃত্তিকার। কবিতা তিনি ‘ফ্যাশন’ হিসেবে নেননি। নিয়েছিলেন ‘প্যাশন’ হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

কবিতা ছিল সৌমিত্রের প্রেয়সী। কবিতাকে প্যাশন হিসেবে নিয়েছিলেন বলেই বই লিখেছেন ১৪টি। আত্মীয়-পরিজনদের জন্মদিনে তিনি উপহার দিয়ে গেছেন, নতুন লেখা একটা করে কবিতা। আবৃত্তিকার হিসেবে বহু পরিচিত, কিন্তু নিজের কবিতা পড়তে লজ্জা পেতেন। অভিনেতা হিসেবে যিনি বিপুলভাবে আত্মপ্রকাশ করেন, কবি হিসেবে তিনিই যেন একা একা, সঙ্গোপন। পশ্চিমবঙ্গের কবিমহলে প্রায় সবাই জানতেন তার এই অসীম কবিসত্ত্বার পরিচয়টি। জানতেন, রবীন্দ্রনাথের গীতবিতানের প্রতিটা লাইন তার কণ্ঠস্থ। তার এই মুখস্থবিদ্যাটি এতোটাই মুগ্ধ করে যে ‘প্রাক্তন’ ছবিতে তার কণ্ঠে রবি ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ শুনে হাত বারবার চলে যায় ইউটিউবের রিওয়াইন্ড বাটনের দিকে।

কবি সুবোধ সরকার সৌমিত্রের কবিসত্ত্বা নিয়ে লিখেছেন, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে যারা পর্দায় দেখেছেন শুধু, তারা জানেন না যে, তিনি সাদা পৃষ্ঠাতেও পরমান্ন পূজারী। ‘অশনিসংকেত’-এর বামুন যতটা নিষ্ঠাভরে মাছ রান্না করছিল, ততটা মমত্ব দিয়ে তিনি কবিতা লিখে এসেছেন সারা জীবন। ৮০০ পৃষ্ঠার উপর তার কবিতা (কবিতাসমগ্র, আনন্দ পাবলিশার্স)। সে খুব সহজ কথা নয়। শ্যুটের সময় দু’টো টেকের মাঝখানে যে সময় কুড়িয়ে পাওয়া যায়, তিনি সেই কুড়িয়ে পাওয়া সময়ের কবি নন। হলে তিনি ৮০০ পাতা লিখতে পারতেন না। নিজেকে সিরিয়াসলি না নিলে কেউ ৮০০ পাতা লিখতে পারে না। কবিতা তার কাছে টাইমপাস নয়। অস্তিত্বের পাসওয়ার্ড।”

কবিতার জগতে তিনি প্রবেশ করেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ঝুলোঝুলিতে। সুনীল-শক্তির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েও তিনি একটি ‘অকৃত্তিবাসীয়’ পটভূমি তৈরি করে নিয়েছিলেন প্রথম থেকে। নিজের জন্য একটা রোমান্টিক জামা ছিল তার। জামাটি তিনি অন্য কারও থেকে ধার করেননি। পাঁচের দশক বাংলা কবিতার জন্য একটা আগুন ঝরানো দশক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সেই আগুনকে ঠাণ্ডা করে জলঝর্নার পাশে রাখতে পেরেছিলেন। এতো ব্যস্ততায় ভরা জীবন, উত্তেজনায় পরিপূর্ণ, মঞ্চ-থিয়েটার-ফিল্ম সবকিছুতেই প্রবাদপ্রতিম সাফল্য ছাপিয়ে কবি সৌমিত্র অনেকটাই নীরব, নিভৃতচারী, লাজুক।

১৯৫৯ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘অপুর সংসার’ মুক্তি পায়। সে ছবিতেও কবি অপুকে দেখা গিয়েছে। আর কবি সৌমিত্রর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে; ‘জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াব বলে’। ৫৪টি কবিতার সেই সংকলন প্রথম প্রকাশ করেছিল অন্নপূর্ণা পাবলিশিং হাউজ। প্রচ্ছদশিল্পী ছিলেন, সত্যজিৎ রায়। তার পরে একে একে ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা, শব্দেরা আমার বাগানে, পড়ে আছে চন্দনের চিতা, হায় চিরজল, পদ্মবীজের মালা, হে সায়ংকাল, জন্ম যায় জন্ম যাবে, হলুদ রোদ্দুর…।

কবি সৌমিত্রের প্রকাশ ছিল অনিয়মিত কিন্তু কবিসত্ত্বা ছিল বহমান। সেই বহমান ধারাতে যতি পড়ল আজ। চলে গেলেন কবিতাকে নিয়ত ধারণ করে চলা লাজুক এক কবি। নায়ক সৌমিত্র হয়তো কিংবদন্তি, যেমনটা কবি সৌমিত্র নন। তবুও নায়ক সৌমিত্রকে ছাপিয়ে কবি সৌমিত্র অনেকের অন্তরে থাকবেন চিরজাগরুক।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের ডিসি সারওয়ার আলমকে শোকজ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৩০

আরো

সম্পর্কিত খবর