Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইচ্ছে ছিল লবিং ছাড়া পুরস্কার নেব: হাবিব রহমান


১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০১

‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবির জন্য ২০১৯ সালের ‘শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন হাবিব রহমান। ২৩ বছর ধরে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত, ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন নৃত্য পরিচালক হিসেবে। দীর্ঘ এ ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম জাতীয় স্বীকৃতি। ‘মুক্তি’ ছবির মহরত অনুষ্ঠানে সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুলের সঙ্গে কথা বলেছেন হাবিব রহমান। দীর্ঘ আড্ডার চুম্বক অংশ থাকছে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য

বিজ্ঞাপন

পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর কীভাবে জানলেন, কেমন ছিল সে মুহূর্তের অনুভূতি?

যখন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, তখন আমি ঘুমে ছিলাম। অনেক ফোন, মেসেজ আসছিল। আমাদের একজন প্রযোজক শরীফ চৌধুরী ভাই মেসেজ দিলেন— শুভেচ্ছা। বুঝতে পারছিলাম না কিসের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। পরের মেসেজেই লিখলেন, ‘তুমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছো।’ এরপর তো জায়েদ খান ভাইসহ পরিচিত অনেকেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানালেন। তখন আমি আত্মহারা। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের মধ্যে আছি।

‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবির শুটিংয়ের সময় কি একবারও মনে হয়েছিল পুরস্কার পেতে পারেন?

না, তখন মনে হয়নি। শুটিং শেষে পরিচালক জাকির হোসেন রাজু স্যার বলেছিলেন, ‘তোমার কাগজপত্র দাও। আমাদের ছবিটা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য জমা দেবো।’ এরপর কাগজপত্র নিলেন। এরকম তো প্রতিবছরই নেয়, তাই আমিও ভুলে গিয়েছিলাম।

আপনি কি কাউকে এই পুরস্কারটি কাউকে উৎসর্গ করতে চান?

আমাকে কোরিওগ্রাফার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল ভাই, আমার ওস্তাদ মাসুম বাবুল ভাই ও যার ছবিতে আমি প্রথম কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করি, সেই শাকিব খান ভাই— তাদের সবাইকে উৎসর্গ করতে চাই। যেদিন আমি ‘চাচ্চু’ ছবির প্রথম শুটিং করি, সেদিন ডিপজল ভাই শাকিব ভাইকে বললেন, তোমার গানগুলো হাবিব কোরিওগ্রাফি করবে। তখন শাকিব ভাই খুশি হয়ে বললেন, অবশ্যই করবে। ও খুব ভালো করবে। হাবিবকে একটা ব্রেক দেওয়া যায়।

২০১৬ সালে ‘নিয়তি’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েও নেননি…

ওই সময় হয়তো ভুলবশত আমার নাম দিয়েছিলেন। তারা ভুল করতে পারেন, আমি তো করতে পারি না। আমার ক্যারিয়ার, লেভেলের সঙ্গে পুরস্কারটা তখনো কোনোভাবেই যায় না। আমার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলাম— কেন সেই পুরস্কার নেব? আমি তো কাজ করি নাই।

বিজ্ঞাপন

পুরস্কার ঘোষণার প্রথম দিনেই আমি ছবির প্রযোজকদের বললাম, ভাইয়া, আমি তো কাজ করি নাই। তারা বললেন, ভুলে গেছেন। আমি বললাম, ভুল হোক আর যাই হোক, আমি পুরস্কারটা নেব না।

এখানে একটা কথা থেকে যায়— আমি নিউজে দেখেছি মুখ্য, বিকল্প দুই জায়গায় আমার নাম ছিল। বিকল্পে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবিতে আমার নাম ছিল। আমি জানি কেউ পুরস্কার না নিলে বিকল্পতে চলে যায়। যাই হোক, ওই প্রসঙ্গে নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। আমার আজীবনের শখ, নিজের কাজের জন্য পুরস্কার নেব। বাংলাদেশের ‘এ’ লেভেলের শিল্পী ও ছবিতে আমি কাজ করি। সেক্ষেত্রে মিথ্যে পুরস্কার দিয়ে আমি কী করব? পুরস্কার তো একটা স্বীকৃতি। নিজের কাজের জন্য পাওয়া একরকম, অন্যের কাজের জন্য পাওয়া আরেকরকম। আপনিই আমাকে শুভেচ্ছা জানাবেন, আমি হাত বাড়াব। কিন্তু নিজেকে চোর মনে হবে। ইচ্ছা ছিল লবিং ছাড়া পুরস্কার নেবো। এই পুরস্কারটা আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে।

কেউ যদি কোরিওগ্রাফার হতে চায়, তাহলে তার নাচের কোন দিকগুলো জানা উচিত? চলচ্চিত্র প্রসঙ্গেও বোঝাপড়া কেমন থাকা উচিত?

প্রথমত, সব ধরনের নাচ জানতে হবে। কিন্তু নাচের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকগুলো, সেই টেকনিক্যাল দিকগুলোও ভালো জানতে হবে। আমি কোরিওগ্রাফার, আমার চেয়ে ভালো ভালো ডান্সার অনেকেই আছেন। চলচ্চিত্রে কোরিওগ্রাফি করতে হলে আপনাকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। অভিজ্ঞতা নিতে হবে টেকনিক্যাল সাইটে— ক্যামেরা অ্যাংগেল, লেন্স এগুলো অবশ্যই জানতে হবে। গানের গল্পটা বুঝতে হবে। কোন প্রেক্ষাপটে গানটির চিত্রায়ন হবে, সেটি বুঝতে হবে। গানের পেছনে পরিচালকের যে গল্প, সেটি মাথায় রেখে গানের স্ক্রিনপ্লে করতে হবে।

বর্তমানে কী কী ছবির কাজ করছেন?

অনুদানের ছবি ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘গাঙ্গকুমারী’ করেছি। এছাড়া চ্যানেল আইয়ের ‘মন দেব মন নেব’ ও অনন্ত জলিল ভাইয়ের ‘দিন: দ্য ডে’ ছবির শুটিং করেছি।

তুরস্কে ‘দিন: দ্য ডে’ ছবির শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অনন্ত জলিল ভাই আসলেই অনেক বিগ বাজেটের কাজ করেন। আমাকে সব দিক দিয়ে স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমি চার দিন সময় পেয়েছিলাম গান করার জন্য। কিন্তু চার দিনের মধ্যে তিন দিনই বৃষ্টি ছিল। ওখানে গান করেছি আড়াইটা— দু’টো পুরো গান, আরেকটার অর্ধেক। যেটার অর্ধেক করেছি, সেটার বাকি অর্ধেক করেছিলাম ইরানে। তুরস্কে একদিন রাস্তা বন্ধ করে শুটিংয়ের অনুমতি নিতেই খরচ হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। এ ছবিতে অনন্ত ভাইকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে দেখা যাবে। একদমই হলিউড স্টাইলে।

আপনার সামনের পরিকল্পনা কী?

সামনে আরও ভালো ভালো ছবিতে কাজ করতে চাই। নিজেকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

কোরিওগ্রাফার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা কোরিওগ্রাফার স্ফুলিঙ্গ হাবিব রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর