অভিনয়টা আমি উপভোগ করি: সোহেল মন্ডল
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:০৯
ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এ দেখা যাচ্ছে ‘তাকদির’। সৈয়দ আহমেদ শাওকী ও সালেহ সোবহান অনীম পরিচালিত ওয়েব সিরিজটির ‘মন্টু’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মন্ডল। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে সমান তালে তার অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে সব মহলে। ১৩ বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত এ অভিনেতা কথা বলেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুলের সঙ্গে।
‘তাকদির’-এর সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ সিরিজে জাহিন ফারুক আমিন ভাইয়ের ‘শ্যাওলা’-তে অভিনয় করেছিলাম। তখন শাওকীর সঙ্গে আমার পরিচয়। অনেক হয়তো জানে না কিন্তু ‘শ্যাওলা’ আমার অন্যতম কাজ। ওই সময়ে শাওকী আমাকে বলেছিল, আমি কাজ করলে তোমাকে নিয়ে কাজ করবো। আমি ভেবেছিলাম, অনেকে যেরকম কথার কথা বলে, এটাও সেরকম কথা। তবে তার সঙ্গে ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। গল্পটা লেখার সময় আমাকে ইনবক্স করে। বললো, তোমার জন্য একটা চরিত্র রেখেছি। এভাবে শুরুটা হয়। শুটের আগে আমরা প্রায় এক দেড় মাস প্রস্তুতি নিই।
কোথায় ও কবে শুটিং করেছিলেন?
গত সেপ্টেম্বরে শুটিং করেছিলাম। আমার অংশের শুটিং হয়েছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাওয়া ফেরিঘাট ও মানিকগঞ্জে।
চঞ্চল চৌধুরীর মতো অভিনেতার সঙ্গে একই ফ্রেমে একই লেভেলে অভিনয় করেছেন, প্রশংসাও পাচ্ছেন। ভয় করেছিল কি?
আসলে প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। চঞ্চল ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করাটাও আশীর্বাদ। তিনি কখনই বুঝতে দেন না তিনি একজন তারকা বা একজন সিনিয়র শিল্পী। তাছাড়া ওনার সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ না। ওনার সঙ্গে আমি ইতোমধ্যে দুটা কাজ করে ফেলেছি—হাওয়া ও আয়নাবাজি । ‘হাওয়া’তে আমরা একসঙ্গে ৪০ দিন কাজ করেছি।
ওনার সঙ্গে প্রথম কাজ ‘আয়নাবাজি’তে আট দিন শুট করেছিলাম। ওই সিনেমা করতে গিয়ে চঞ্চল ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম সখ্যতা । তারপরে তো ‘হাওয়া’তে আমি পুরো ভালো একটা সময় কাটালাম । সব মিলিয়ে আগে থেকেই একটা ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে। এটা যদি নাও হতো ওই যে বললাম না, চঞ্চল ভাই ভালো সাপোর্টিং পার্সন। যার কারণে ভয় টয় ওভাবে কাজ করেনি।
একটু আগে ‘হাওয়া’র কথা বললেন। যদি বিস্তারিত বলতেন…
ওটা নিয়ে কথা বলা একদমই নিষেধ আছে প্রোডাকশন হাউজ থেকে। আমি কিছুই বলতে পারবো না। আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে এতটুকু বলি আমি আমার কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে কাজ করেছি।
আপনি ‘মুসাফির’-এও কাজ করেছেন। ওটা কি আপনার প্রথম সিনেমা ছিল?
আমার প্রথম সিনেমা ছিল ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’, রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত। ওখানে শিমুর প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এরপর মুসাফির, আয়নাবাজি। এগুলোর পর আরেকটা ছবিতে অভিনয় করি—নামটা সম্ভবত ‘রঙধনু’। তবে ছবিটা সেন্সর পায়নি জানি। তারিক আনাম খান, লুৎফর রহমান জর্জ ও স্বাধীন খসরু ভাই অভিনয় করেছিলেন। তারপরে আমি আসলে ‘শ্যাওলা’ করি।
সামনে কী কী কাজ করছেন?
‘হাওয়া’ ছাড়া আমার আরেকটা ছবি আসছে সামনের বছর ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর ‘মায়ার জঞ্জাল’। যেটা অপি আপা আর আমি বাংলাদেশ থেকে কাজ করেছি। ওটা যৌথ প্রযোজনার ছবি। ওই সিনেমায় আমি প্রোটাগনিস্ট হিসেবে কাজ করেছি।
এছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’র একটা প্রোডাকশনে কাজ করবো। ওয়েব ফিকশন হবে ওটা। এর বেশি বিস্তারিত বলা যাবে না।
অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার শুরুটা কীভাবে?
এটা আসলে আর আট-দশটা গল্পেরই মতো। বিশেষ কিছু নেই। আমি যখন গ্র্যাজুয়েশন করছিলাম, তখন আসলে প্রচুর অবসর সময় ছিল। তখন থিয়েটার দেখার একটা ঝোঁক ছিল। তখন নাগরিক নাট্যাঙ্গনে যুক্ত হই। সেখানে এক বছর আমি কাজও করি। এরপর প্রাচ্যনাট স্কুল অব এক্টিং ডিজাইন-এ কোর্স করি। ২০০৯ থেকে আমি প্রাচ্যনাটের সদস্য।
অভিনয়টা আমি উপভোগ করি। অভিনেতা হবার আসলে পূর্বের কোনো ইচ্ছে ছিল না। পথনাটক করতাম, দলের ইন হাউজ প্রোডাকশনে কাজ করতাম। দেখতে দেখতে মনে হলো একটা খুব ভালো একটা কাজ, মজা লাগতো। হারমোনিয়ামের শব্দ শুনলে ভালো লাগতো। প্রাচ্যনাটে ঢোকার পরে ‘পিদিম’ নামে একটা প্রোডাকশন করেছিলাম। বিট্রিশ পরিচালক ছিলেন। ওই কাজটা করতে গিয়ে আমি ভীষণভাবে উপভোগ করি অভিনয়টা। এরপর আমাদের দলের পাভেল ভাই, যিনি আমার মেন্টর— ওনাদের কাজ দেখতে দেখতে একটা সময় বিশ্বাস তৈরি হয় আমিও পারবো। তখন থেকে আসলে ভালোবাসাটা শুরু হয়। একটা পর্যায়ে এমন হয়ে যায় যে ওটা ছাড়া থাকতে পারবো না। যতদিন পর্যন্ত আমার দমটা থাকবে অভিনয়টা করতে চাই।
মঞ্চে কি এখনো কাজ করছেন?
হ্যাঁ করছি। তাড়ুয়ার প্রযোজনায় ‘লেট মি আউট’-এর নিয়মিত প্রদর্শনী করছি। ওদের ‘মুল্লুক’ নামে আরেকটি প্রযোজনা আমার অন্যতম কাজ। আর আমার নিজের দল প্রাচ্যনাটের নিয়মিত প্রযোজনা ‘বন মানুষ’, ‘রাজা এবং অন্যান্য’, ‘কইন্যা’, ‘গন্ডার’ এ কাজ করছি।
বর্তমানে তো পেশাদার ভিডিও সম্পাদনার কাজ করছেন।
হ্যাঁ, করছি। অমিতাভ রেজা ভাইয়ের ‘ঢাকা মেট্রো’র কালার আমার করা। আবরার আতাহার ভাইয়ের ‘কলি-২’ ও আমার করা। এছাড়া টিভিসির কাজ করছি। অভিনয়ে নিয়মিত হচ্ছিলাম না, কারণটা অর্থনৈতিক। যতক্ষণ পর্যন্ত না অভিনয় থেকে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ কাজটা করে যেতে হবে।
অভিনয়ের সঙ্গে এত বছর ধরে যুক্ত, কিন্তু দর্শক ‘তাকদির’-এর আগে ওইভাবে চিনেনি। আফসোস হয় না?
প্রত্যেকটা অভিনেতার বাসনা থেকে দর্শক যেন তাকে গ্রহণ করে। আমার ১৩ থেকে ১৪ বছরের জার্নি। এটা নিয়ে আমার আফসোস নেই। বিশ্বাস করতাম আমি যদি ভালো কাজ করি, আমার কাছে যদি ভালো কাজের সুযোগ আসে এবং যদি সে সুযোগটাকে ঠিকঠাক মতো কাজে লাগাতে পারি, তাহলে অবশ্যই দর্শক সেটা দেখবে এবং গ্রহণ করবে। আর গ্রহণ করলেই আমি হয়তো সাহসটা পাবো এবং স্বপ্নটা দেখতে পারবো হয়তো।