ঢাকাঃ বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সঙ্গে আমাদের কয়েক প্রজন্মের আবেগ, অনুভুতি জড়িত। দেশের অধিকাংশ চ্যানেল এইচডি সম্প্রচারে গেলেও বিটিভি পরে রয়েছে পুরানো সম্প্রচার পদ্ধতিতে। তবে চ্যানেলটি খুব শিগগিরই ফুল এইচডি সম্প্রচারে আসছে। একই সঙ্গে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠান ধারণ শুরু করেছে।
২৫ ডিসেম্বর বিটিভি পথ চলার ৫৬ বছর পূর্ণ করবে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফুল এইচডি সম্প্রচারের বিষয়টি জানান চ্যানেলটির মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আমরা ফুল এইচডি সম্প্রচারে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। ইতোমধ্যে আমাদের সকল অনুষ্ঠান এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মিত হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছরেই দর্শকরা বিটিভির অনুষ্ঠান ফুল এইচডিতে দেখতে পাবেন।

হারুন অর রশিদ, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)
আর এ উপলক্ষ্যে বিটিভির স্লোগান হচ্ছে ‘বদলে যাবে বদলে দিবে’। হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের বেশ কিছু দায়বদ্ধতার জায়গা আছে। যার কারণে আমরা অন্যদের মতো হুটহাট যেকোনো কিছুই করতে পারি নাই। করোনাকালে আমরাই সবার আগে ‘এই সময়’ নামক অনুষ্ঠান করি। যাতে দর্শকরা করোনাভাইরাস নিয়ে সবশেষ তথ্য জানার পাশাপাশি সরাসরি ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে পেরেছেন।
তিনি জানান, অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের সময় একজন দর্শক অভিযোগ করেন তিনি সরকারি ত্রাণ পাননি। তখন তারা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে জানান। পরদিনই ওই ব্যক্তি ত্রাণ পেয়ে যান।
দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য তারা বেশ কিছু অনুষ্ঠান নিয়ে আসছেন— প্রতিদিনের খবর নিয়ে ‘খবর প্রতিদিন’, টক শো ‘বিটিভি সংলাপ’, সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘নিশি গুনগুন’, ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’।
এছাড়া তিনটি নতুন ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হচ্ছে দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য। এগুলো নির্মাণ করছেন আফসানা মিমি, জাহিদ হাসান ও মামুনুর রশিদ। নাটকগুলো আপাতত সপ্তাহে তিন-চার দিন করে প্রচার করা হবে। এগুলোর বাইরে আজাদ আবুল কালাম নির্মাণ করছেন একটি শিশুতোষ ধারাবাহিক।
হারুন অর রশিদ জানান, বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী মানেই তাদেরকে নিয়ে পরিচালকরা কাজ করতে বাধ্য, এমন নয় ব্যাপারটি। শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচালক সম্পূর্ণ স্বাধীন। বরং তারা এ তালিকাভুক্তি করেন শিল্পীদের সম্মানী নির্ধারণ করতে সুবিধার জন্য।
বিদেশি বিনোদন চ্যানেলগুলোর মত স্থায়ীভাবে কিংবা চুক্তিভিত্তিক নাট্যকার কিংবা পরিচালক নিয়োগ বিটিভিতে সম্ভব নয় বলে জানান হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা তো স্বাধীন। আর ওইরকম হলে তো সবার কাজ করার জায়গাটা তৈরি হবে না।’
বর্তমানে বিটিভির তিনটি চ্যানেল সম্প্রচারে আছে—বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ টিভি। চ্যানেলটি দেশের একমাত্র চ্যানেল হিসেবে টেরেস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইট উভয় মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেরিস্ট্রিয়ালে বিটিভি সকাল ৭ টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করে। অন্যদিকে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করে। এছাড়া চ্যানেলটির চট্টগ্রাম কেন্দ্র বর্তমানে ১২ ঘণ্টা অনুষ্ঠান দেখায়। খুব দ্রুতই ১৮ ঘণ্টা সম্প্রচার শুরু করবে কেন্দ্রটি এবং ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ডিআইটি ভবনের নিচতলায় এনইসি কর্পোরেশন জাপানের সহয়তায় বিটিভির যাত্রা শুরু। ১৯৬৭ সালে টেলিভিশন কর্পোরেশন এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বিটিভি সরকারি গণমাধ্যমে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশে রামপুরায় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত বিটিভি।